ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাত দিনের শোক ঘোষণা ;###;কাল রামেশ্বরমে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন ;###;অন্তিম শ্রদ্ধা জানাতে জনতার ঢল

কালামের মৃত্যুতে ভারতজুড়ে শোক

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২৯ জুলাই ২০১৫

কালামের মৃত্যুতে ভারতজুড়ে শোক

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও খ্যাতিমান পরমাণুবিজ্ঞানী এপিজে আবদুল কালামের মৃত্যুতে দেশজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। সাতদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মঙ্গলবার নয়াদিল্লীর পালাম বিমানঘাঁটিতে তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া এনডিটিভি ও ওয়েবসাইটের। ‘জনতার রাষ্ট্রপতি’ খ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী আবুল পাকির জয়নুল আবেদিন আবদুল কালামের মৃত্যুতে ভারতজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী বলেন প্রতিরক্ষা গবেষণায় তার অবদান দেশকে সমৃদ্ধ করছে। তিনি পথ প্রদর্শক ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী টুইট বার্তায় উল্লেখ করেন, ‘ভারত আজ এমন এক ব্যক্তির জন্য শোক প্রকাশ করছে যিনি ছিলেন, একাধারে একজন মহান বিজ্ঞানী, একজন চমৎকার রাষ্ট্রপতি এবং সর্বোপরি একজন অনুপ্রেরণা দানকারী ব্যক্তি। শান্তিতে থাকুন ড. এপিজে আবদুল কালাম। এর আগে বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ হেলিকপ্টারে মঙ্গলবার সকালে কালামের মরদেহ প্রথমে শিলং থেকে গুয়াহাটি বিমানবন্দরে নেয়া হয়। সেখান থেকে সি-১৩০ বিমানে করে সাবেক এই রাষ্ট্রপতির মরদেহ দিল্লীর উদ্দেশে নেয়া হয়। বিমানবন্দরে তার মরদেহ গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে দিল্লী বিমানবন্দরে কফিনবন্দী কালামকে শেষ শ্রদ্ধা জানান মোদি। পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে শেষ সম্মান জানান তিন বাহিনীর প্রধানগণ। সেখান থেকে প্রয়াত বিজ্ঞানীর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ১০, রাজাজি মার্গের বাসভবনে। রাষ্ট্রপতিকে সেখানে শ্রদ্ধা জানায় সর্বস্তরের মানুষ। এরপর সাবেক এই রাষ্ট্রপতির মরদেহ তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমে তার জন্মস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। বৃহস্পতিবার জানাজা শেষে তার লাশ সেখানেই রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে। ভারতের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ বিশিষ্টজনরা তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। কালামের সম্মানে মঙ্গলবার ভারতীয় পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের অধিবেশন বাতিল করা হয়। সোমবার রাতে কালামের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন, ‘স্মৃতিতে ভারাক্রান্ত হয়ে আছে আমার মন, তার সঙ্গে কত অন্তরঙ্গতা ছিল। তার গভীর জ্ঞানে সব সময়ই চমৎকৃত হতাম, তার কাছ থেকে কত কিছু শিখেছি।’ স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং এক টুইটারে বলেন, ‘ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ড. আব্দুল কালামের হঠাৎ মৃত্যুতে গভীর দুঃখবোধ করছি। পুরো প্রজন্মকে তিনি অনুপ্রাণিত করেছেন।’ কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, ‘ড. কালাম ছিলেন জনতার রাষ্ট্রপতি। তিনি এমন একজন রাষ্ট্রপতি ছিলেন যিনি ভারতীয় তরুণদের সঙ্গে একাত্ম হতে পারতেন।’ সোমবার ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ের একটি বেসরকারী হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন আবদুল কালাম। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন অবিবাহিত। খুব সহজ-সরল অনাড়ম্বর জীবনযাপন করতেন তিনি। সন্ধ্যায় শিলংয়ে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টে বি-স্কুলের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ‘লিভেবেল প্ল্যানেট আর্থ’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেয়ার সময় হঠাৎ পড়ে যান আবদুল কালাম। সঙ্গে সঙ্গে তাকে নেয়া হয় হাসপাতালে। তবে যে ভূমিকার জন্য তাকে সবচেয়ে বেশি স্মরণ করা হবে বলে মনে করছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো, তা হলো রাষ্ট্রপতি হিসেবে রাষ্ট্রপতি ভবনকে (ভারতীয় রাষ্ট্রপতির বাসভবন) সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়া, যা তাকে জনতার রাষ্ট্রপতি অভিধা এনে দেয়। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরও তিনি সবসময় জনতার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন, বিশেষভাবে শিশুদের সঙ্গে। এ কারণেই তিনি জনমানুষের মনে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন বলে মনে করেন সবাই। ‘তুমি যদি সূর্যের মতো আলো ছড়াতে চাও, তাহলে আগে সূর্যের মতো জ্বলো,’ এক অনুপ্রেরণাদায়ী বক্তৃতায় এ কথা বলেছিলেন কালাম। ভারতীয় ফাস্টপোস্ট পত্রিকা মঙ্গলবার লিখেছে, কালাম নিশ্চিতভাবেই ‘সূর্য হয়ে জ্বলেছিলেন। কিন্তু সোমবার সন্ধ্যায় সেই সূর্য অস্ত গেছে। এই সূর্য আর কখনও উদিত হবে না। আবদুল কালামের জন্ম ১৯৩১ সালের ১৫ অক্টোবর তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমে। ছোট্ট শহরে এক মৎস্যজীবী পরিবারে খুব দারিদ্র্যের মধ্যে জন্ম নিলেও তার স্বপ্ন ছিল অনেক বড়। আর এই স্বপ্নের অনেকটাই পূরণ করে দেখিয়েও গেছেন তিনি। ২০০২-০৭ সাল পর্যন্ত ভারতের ১১তম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন আবদুল কালাম। তিনি হয়ে ওঠেন ‘জনতার রাষ্ট্রপতি’। তিনি ছিলেন ভারতের তৃতীয় মুসলিম রাষ্ট্রপতি। দেশটির সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘ভারতরতœ’ ছাড়াও ‘পদ্মভূষণ’ ও ‘পদ্মবিভূষণে’ তিনি ভূষিত হয়েছেন । ভারতীয় হাইকমিশনে শোকবই ॥ ভারতের একাদশ সাবেক রাষ্ট্রপতি ড. এপিজে আবদুল কালামের মৃত্যুতে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনে শোকবই খোলা হবে। আগামী ২৯ ও ৩০ জুলাই এ বইতে স্বাক্ষর করা যাবে বলে মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে ভারতীয় হাইকমিশন এ তথ্য জানিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভারতীয় হাইকমিশন গভীর দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছে যে, ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ড. এপিজে আবদুল কালাম ২৭ জুলাই ভারতের শিলংয়ে মৃত্যুবরণ করেন। আগামী ২৯ জুলাই তার গ্রামের বাড়ি রামেশ্বরমে শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ভারতে সাতদিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে। ২৭ জুলাই থেকে আগামী ২ আগস্ট পর্যন্ত এ শোক পালন করা হবে। বিদেশে ভারতীয় দূতাবাসেও একইভাবে শোক পালনসহ শোকবই খোলা হবে। আগামী ২৯ ও ৩০ জুলাই ঢাকার বাড়ি নং-০২, সড়ক নং- ১৪২, গুলশান-১ এর ভারতীয় হাইকমিশনেও শোকবই খোলা থাকবে। এ দু’দিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শোক বইতে স্বাক্ষরের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে। (আরও খবর পৃষ্ঠা-৫)
×