মোঃ মামুন রশীদ ॥ গত বছর থেকেই ব্যাট হাতে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন। যদিও সর্বশেষ তিন টেস্টে তার ব্যাট থেকে তেমন কোন রান আসেনি। ওয়ানডে ক্রিকেটেও তার কাছ থেকে বর্তমানে দল তেমন কিছু পাচ্ছে না। বিশ্বকাপে ব্যর্থতার কারণে এবার বাংলাদেশ সফরে ওয়ানডে দলেই ঠাঁই পাননি ৩৭ বছর বয়সী ডানহাতি ব্যাটসম্যান ইউনুস খান। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে তার ব্যাটে রান আছেই। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে গত বছর আরব আমিরাতে খেলা দুই টেস্টে খুব বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। আবার খুলনায় স্বাগতিক বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টেও ৩৩ রান করে বিদায় নিয়েছিলেন। কিন্তু মিরপুর টেস্টে দলের প্রয়োজনীয় মুহূর্তে ঠিকই জ্বলে উঠলেন ইউনুস। চলতি সফরে পরাজয়ের বৃত্তে থাকা পাকরা টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে তিন নম্বর দল হলেও পরাস্ত করতে পারেনি বাংলাদেশকে। তাই দারুণ চাপে রয়েছে পাকরা। আর সেই মুহূর্র্তেই ব্যাট হাতে আরেকটি শতক হাঁকালেন অন্যতম নির্ভরতার প্রতীক ইউনুস। ক্যারিয়ারের ২৯তম সেঞ্চুরি আদায় করে তিনি ফিরে গেছেন ১৪৮ রান করে। সর্বকালের সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে স্বীকৃত স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানকে ইতোমধ্যেই ছুঁয়ে ফেলেছেন শতক হাঁকানোর ক্ষেত্রে। এবার ডাবল সেঞ্চুরি পেয়ে গেলে ছুঁয়ে ফেলতেন সাবেক পাক ব্যাটসম্যান জাভেদ মিঁয়াদাদ, ভারতের শচীন টেন্ডুলকর ও বিরেন্দর শেবাগ, অস্ট্রেলিয়ার রিকি পন্টিং ও শ্রীলঙ্কার মারভান আতাপাত্তুকে। সবারই ৬টি করে ডাবল সেঞ্চুরি রয়েছে। আর ইউনুসের আছে পাঁচ। কিন্তু মোহাম্মদ শহীদের পেস বলে শুভাগত হোমের কাছে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলেন ৫২ রান দূরে থেকে।
টেস্ট ক্রিকেটে ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে আছেন ইউনুস গত এক বছরে। যদিও গত নবেম্বরে আরব আমিরাতের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুই টেস্টে ৭২, ৪৪, ৫ ও ০ রান করতে পেরেছিলেন। আর খুলনায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে এক ইনিংস ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে করতে পেরেছিলেন ৩৩ রান। যদিও দলের বাকি ব্যাটসম্যানদের দুর্দান্ত নৈপুণ্যে ঢাকা পড়েছে ইউনুসের ব্যর্থতা। তবে দলগতভাবে পাকরা নিজেদের পুরোপুরি ফিরে পায়নি। কারণ টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ ৯ আর পাকিস্তান ৩। ২৯৬ রানে এগিয়ে থাকার পরেও জয় তুলে নিতে না পারার আক্ষেপ সঙ্গী হয়েছে সফরকারীদের। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সফরে নিজেদের প্রথম জয়ের সন্ধানে রয়েছে তারা। সে জন্য ইউনুসের জ্বলে ওঠা ছিল অতীব জরুরী। টপঅর্ডারের মূল ভরসা ব্যাট হাতে ঝলসে উঠলে পুরো দলের জন্যই তা হয়ে ওঠে বড় ধরনের প্রেরণা। তবে খুলনায় ইউনুস যেভাবে ব্যাটিং করে ৩৩ রান করেছিলেন তাতে বোঝা যাচ্ছিল খুব একটা সমস্যা হবে না তার বড় ইনিংস খেলতে। সেটাই তিনি করে দেখালেন মিরপুরে প্রথম ইনিংসেই। দলীয় ৫৮ রানের মধ্যেই মোহাম্মদ হাফিজ ও সামি আসলাম ফিরে যাওয়ার পর আজহার আলীর সঙ্গে জুটি বাঁধেন ইউনুস। শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলছিলেন ইউনুস খান। তবে একবারই ভুল করেছিলেন। ইনিংসের ৬১তম ওভারে সৌম্য সরকারের বলে ক্যাচ দিয়েছিলেন ব্যক্তিগত ৭৮ রানের সময়। শর্ট কাভারে দাঁড়ানো সাকিব আল হাসান সেটা তালুবন্দী করতে ব্যর্থ হন। এরপর আর বাংলাদেশী বোলারদের কোন সুযোগ দেননি তিনি। আদায় করে নেন ক্যারিয়ারের ২৯তম শতক। আর এর মাধ্যমে ছুঁয়ে ফেলেন কিংবদন্তি স্যার ব্র্যাডম্যানকে। ২৯ সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন তিনি ক্যারিয়ারে। অনেক আগেই পাকিস্তানের পক্ষে সর্বাধিক সেঞ্চুরির মালিক হয়েছেন ইউনুস। তার নিচে আছেন ২৫ শতক হাঁকানো ইনজামাম-উল-হক। একবার জীবন ফিরে পেয়ে নিজের রানটাকে প্রায় দ্বিগুণ করেছেন ইউনুস। ১৪৮ রানের মাথায় মনোসংযোগে চিড় ধরে তার বেশ ভালভাবেই। দিনেরও শেষ সময় উপস্থিত। শহীদের আগের বলটিতে খোঁচা দিলেও উইকেরক্ষক মুশফিক সেটা তালুবন্দী না করতে পারলে দ্বিতীয়বারের মতো জীবন পেয়েছিলেন। তবে তৃতীয় জীবনটা নিভে গেছে পরের বলেই। এবার সিøপে দাঁড়ানো শুভাগত আর ভুল করেননি। ক্যাচটা লুফে ফেরত দিয়েছেন ইউনুসকে। ফিরে যাওয়ার আগে তিনি ১৯৫ বলে ১১ চার ও ৩ ছক্কায় ১৪৮ রান করেন। তৃতীয় উইকেটে আজহারের সঙ্গে ২৫০ রানের জুটি গড়েছেন যা ঢাকার উইকেটে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে কোন দলের পক্ষে তৃতীয় উইকেটে সেরা জুটির রেকর্ড। এর আগে ভারতের পক্ষে রাহুল দ্রাবিড় ও টেন্ডুলকর ২০১০ সালে জানুয়ারিতে অবিচ্ছিন্ন ২২২ রানের জুটি গড়েছিলেন তৃতীয় উইকেটে। আর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এটি ছিল পাকিস্তানের তৃতীয় উইকেটে সেরা জুটি। এর আগে ৯৫ রানের জুটিই ছিল তাদের সেরা। ২০১১ সালের নবেম্বরে তৌফিক ওমর ও ইউনুস করেছিলেন সেটি।