ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নতুন ভবন নির্মাণ শেষ পর্যায়ে

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ৩ মে ২০১৫

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নতুন ভবন নির্মাণ শেষ পর্যায়ে

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ রাজধানীর সেগুনবাগিচার একটি ভবন ভাড়া নিয়ে ১৯৯৬ সালের ২২ মার্চ যাত্রা শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। আটজন ট্রাস্টির উদ্যোগে ইতিহাসের স্মারক সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও উপস্থাপনের এই প্রয়াস গোড়া থেকেই ব্যাপক মানুষের সমর্থন ও সহায়তায় ধন্য হয়েছে। একাত্তরের স্মৃতির স্মারক এই জাদুঘরে সীমিত পরিসরে প্রায় ১৪০০ স্মারক প্রদর্শিত হলেও সংগ্রহ ভা-ারে জমা হয়েছে ১৭ হাজারের বেশি স্মারক। সেই সঙ্গে রয়েছে গ্রন্থাগার ও তথ্য ভা-ার এবং অডিও-ভিজ্যুয়াল সেন্টার। তাই স্বল্প পরিসরে শুরু করা এই জাদুঘরটি সময়ের প্রয়োজনে এখন বৃহৎ পরিসরে যাওয়ার অপেক্ষা রয়েছে। এ বছরের ডিসেম্বর মাসে বিজয় উৎসব উদযাপনের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর জনগণ ও সরকারের আনুকূল্যে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের আগারগাঁওয়ে নিজস্ব ভবনে স্থানান্তরিত হবে। কাঠামোগত নির্মাণসহ ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন চলছে বৈদ্যুতিক সংযোগসহ অন্যান্য কাজ। শুরুতে এর নির্মাণ ব্যয় ১০০ কোটি টাকা ধরা হয়। অন্যান্য খরচ বেড়ে যাওয়ায় আরও দুই কোটি টাকা প্রয়োজন পড়বে এই নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে। সম্পূর্ণ অনুদান দিয়ে নির্মিত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের এই ভবনটি। এ যাবত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সরকারী-বেসরকারী অনুদান মিলিয়ে ৭৯ কোটি টাকার সংস্থান হয়েছে। এখনও ২৩ কোটি টাকা প্রয়োজন। শনিবার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণ তহবিলে এক কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে বহুজাতিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এমজিএইচ গ্রুপ। জাদুঘরের মিলনায়তনে জনার্কীণ আয়োজনের মধ্য দিয়ে জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের হাতে কোটি টাকার চেক তুলে দেন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস আহমেদ। এ সময় জাদুঘরের ট্রাস্টি আলী যাকের, রবিউল হুসাইন, জিয়াউদ্দিন তারিক আলী ও মফিদুল হক উপস্থিত ছিলেন। অনুদান গ্রহণ করে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের পক্ষে তারাই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের পক্ষে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নগুলো আহরণ, সংরক্ষণ ও উপস্থাপন করবে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। এটি নির্মাণের জন্য ১০২ কোটি টাকা প্রয়োজন। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩৫ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন। তাঁর হাত দিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আরও ২১ কোটি টাকা অনুদান পাওয়া গেছে। তিনি আরও বলেন, এর ভবন নির্মাণের কাজ ৮০ শতাংশ সম্পন্ন। আশা করা হচ্ছে চলতি বছরে ডিসেম্বরে বিজয় উৎসব উদযাপনের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নিজস্ব ভবনে তাদের পথচলা শুরু হবে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের মহাব্যবস্থাপক মাহবুব উল আলম বলেন ‘ভবন নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে। অক্টোবরে জাদুঘরের স্থানান্তরের কাজ শুরু হবে। ডিসেম্বরে বিজয় দিবসের প্রাক্কালে ভবনটি উদ্বোধন করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আরও বলেন, এখন ৯ তলাবিশিষ্ট এই ভবনটি সাজানো কাজ চলছে পুরোদমে। জাদুঘরের আর্কাইভ সাজানো জন্য বার্মিহাম থেকে একজন বিশেষজ্ঞ এরই মধ্যে ঢাকায় এসেছেন। হেলেন পোর্ট নামে এই বিশেষজ্ঞ ব্রিটিশ আর্কাইভের ডিরেক্টর। তিনি জাদুঘরের আর্কাইভটি সজ্জিতকরণ করবে। এ জন্য তিনি কাজ করে চলেছেন। জাদুঘরে নতুন স্মারক সংযোজন ॥ নতুন ভবনে শুরু থেকেই বেশ কিছু স্মারক স্থায়ীভাবে প্রদর্শন করবে জাদুঘর। এর মধ্যে রয়েছে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত ভারতীয় এয়ারফোর্সের একটি হান্টার প্লেন। এটি এখন ক্যান্টনমেন্টে সংরক্ষিত আছে। আরও প্রদর্শন করা হবে ‘আইএনএস বিক্রম’ ভারতীয় নৌবাহিনীর ব্যবহৃত নৌ-জাহাজের রেপ্লিকা। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত ট্যাঙ্ক, কামান, মর্টার সংগ্রহ করার চেষ্টা চলছে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালীন জাতিসংঘ, আমেরিকান স্টেট ডিপার্টমেন্টে ‘১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধ’ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল-দস্তাবেজ প্রথমবারের মতো প্রদর্শন করা হবে। জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বা শরণার্থী সংক্রান্ত বেশ কিছু দুর্লভ দলিল দস্তাবেশ সংগ্রহ করা হয়েছে এই জাদুঘরের জন্য। থাকছে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বিশ্ব মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদের সচিত্র সংগ্রহ। এই সংগ্রহশালায় স্মৃতি-বিজড়িত নিদর্শন দিয়ে সহায়তা করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সাবেক রাষ্ট্রদূত এমএ জলিল, লেখক আবদুল মতিন। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নির্মিত হচ্ছে স্থপতি দম্পত্তি তানজিম হাসান সেলিম ও নাহিদ ফারজানার নেতৃত্বে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস উপস্থাপনের জন্য নতুন জাদুঘর ভবনে দুই ধরনের প্রদর্শনীর ব্যবস্থা থাকবে। স্থায়ী প্রদর্শনীর জন্য গ্যালারির আয়তন হবে সুপরিসর এবং নিয়মিতভাবে অস্থায়ী প্রদর্শনী আয়োজনের জন্য পৃথক গ্যালারি থাকবে। প্রধান প্রবেশদ্বার থেকে স্বাগত জানাবে শিখা অনির্বাণ। তারপর মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গীতের নেপথ্য পরিবেশে নিচতলা উপরতলা ঘুরে পেছনের ঘূর্ণায়মান গোলাকার সিঁড়ি দিয়ে অবতরণ করে কফিশট, উন্মুক্ত মঞ্চ, পাঠাগার, বই ও উপহার বিতান, কার্যালয় সভাকক্ষ ও প্রদর্শনশালা- সবকিছু নিয়েই সুচারু ও ছিমছাম গৃহ পরিবেশ থাকবে।
×