ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

হরতাল-অবরোধে পরিবহন সঙ্কট

বরই চাষীরা বিপাকে

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ১১ মার্চ ২০১৫

বরই চাষীরা বিপাকে

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও, ১০ মার্চ ॥ কুল চাষ করে সচ্ছলতার মুখ দেখতে শুরু করেছিল ঠাকুরগাঁওয়ের বেকার যুবক মেহেদী আহসানসহ অনেকেই। গত মৌসুমগুলোতে এখানকার উৎপাদিত কুল স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে যাওয়ায় ভাল লাভ পাওয়ায় অনেকেই কুল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছিল। কিন্তু অব্যাহত হরতাল-অবরোধে তাদের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি স্বীকার করে তারা বিপাকে পড়েছেন। ফলে কুল চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে অনেক কৃষক। লাভজনক হওয়ায় ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকের মাঝে আগ্রহ বাড়তে শুরু করেছিল কুল চাষের জন্য। ইতোমধ্যে জেলায় ২ শতাধিক কুলের বাগানে আপেলকুল, বাউকুল, থাইকুল ও দেশীয় জাতের কুল জনপ্রিয় হয়ে উঠছিল। মৌসুমের প্রতিদিনই এসব বাগান থেকে সংগ্রহ হয় ১০ হাজার মণ কুল। গত মৌসুমগুলোতে বিঘা প্রতি খরচ বাদে চাষীরা লাভ করছেন ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। জেলার প্রায় ১শ’ হেক্টর জমিতে চাষকৃত কুল বাগানে ৪ শতাধিক শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। বাগানে কাজ পেয়ে অনেকের সংসারে সচ্ছলতা পায় বলে জানায় বাগানে কর্মরত শ্রমিকরা। গত মৌসুমগুলোতে কুলের ব্যবসা করে লাভের মুখ দেখলেও লাগাতার হরতাল অবরোধে পরিবহনের অভাবে এবার তারা ব্যাপক ক্ষতি শিকার করতে হচ্ছে বলে জানান ফলের ব্যবসায়ীরা। সদর উপজেলার চামেশ্বরী গ্রামের কুলবাগানের মালিক মেহেদী আহসান এক একর জমিতে ৪ জাতের কুল চাষ করে সফলতার মুখ দেখেছেন। তার বাগানে উৎপাদিত কুলের গুণগত মান ভাল হওয়ায় চাহিদাও ছিল দেশজুড়ে। বছরে তিনি বাগান থেকে মোটা অঙ্কের লাভ পেয়ে সংসারের কাজে ব্যবহার করতেন। গত মৌসুমে তিনি যে মূল্যে কুলের বাগান বিক্রি করেছিলেন এবার লাগাতার হরতাল অবরোধের কারণে অর্ধেক দামে বিক্রি করতে হয়েছে বলে তিনি জানান। মেহেদী হাসানের কুল চাষে ব্যাপক লাভ দেখে ইতোপূর্বে অনেকে নতুন বাগান করার আগ্রহ প্রকাশ করলেও চলতি মৌসুমে কুল চাষের ক্ষতি দেখে আগহ হারিয়ে ফেলেছেন তারা।নারগুর গ্রামের কুলচাষী আব্দুল্লাহ হক জানান, তিনি এবার ২০ বিঘা জমিতে কুল চাষ করেছেন। এতে তাঁর মোট খরচ হয়েছে ১০ লাখ টাকা। অবরোধ ও হরতালের কারণে গাড়ি জেলার বাইরে যেতে চায় না। গেলেও দ্বিগুণ ভাড়া দিতে হচ্ছে তাদের। তাছাড়া কুলের দামও কমে গেছে। অপরদিকে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরের ফুটপাতে হকাররাই এসব কুল বিক্রি করে থাকেন। কিন্তু বোমা হামলার আশঙ্কায় হকাররা ফুটপাতে বসতে পারছেন না। তাই সেখানে কুলও বিক্রি হচ্ছে না। এ কারণে অনেক কৃষক গাছ থেকে কুল পাড়ছেন না। এ অবস্থায় গাছেই কুল পেকে নষ্ট হয়ে ঝরে পড়ছে। তিনি জানান, মৌসুমের শুরুতে ৬০ টাকা কেজি দরে কুল বিক্রি হয়েছে। অথচ এখন সেই কুল বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৬/৭ টাকা কেজি দরে। প্রতি মৌসুমে অসংখ্য পাইকারি ব্যবসায়ী কুল কেনার জন্য ঠাকুরগাঁওয়ে আসতেন। কিন্তু এবার অবরোধ ও হরতালের কবলে পড়ায় অন্যান্য জেলা থেকে ব্যবসাযীরা আসতে পারছেন না। ফলে কুল উৎপাদন মৌসুমের শুরু থেকেই অবরোধ-হরতাল শুরু হওয়ায় কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন। কৃষকরা বাধ্য হয়ে স্থানীয় বাজারে পানির দামে বিক্রি করছেন কুল। চাষীরা জানান, তাঁরা কুল চাষের জন্য বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) এবং বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রচুর টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। কিন্তু কুল বিক্রি না হওয়ায় সেই ঋণের টাকা ও সুদ পরিশোধ করতে পারছেন না। অনেক ক্ষেত্রে কুল বিক্রি করে শ্রমিকের হাজিরার টাকাও জোগাড় করা যাচ্ছে না। তরমুজ চাষীদের মনে নেই স্বস্তি নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া থেকে জানান, কলাপাড়ায় এ বছর তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু বিএনপি জামায়াতের হরতাল অবরোধে কৃষকরা বিক্রি নিয়ে পড়েছেন চরম বিপাকে। ট্রলারযোগে বিভিন্ন মোকামে তরমুজ পাঠানো শুরু করেছেন। এছাড়া উত্তরাঞ্চলের পাইকারও এ বছর কম আসতে শুরু করেছেন। তাই বাম্পার ফলনেও কৃষকের মনে স্বস্তি নেই। অধিকাংশ চাষী ছোট ছোট লটে স্থানীয় বাজারে তরমুজ বিক্রি শুরু করেছেন। পাইকার নিয়ে কৃষক রয়েছেন শঙ্কার মধ্যে। কৃষকরা জানান, বর্তমানে তাদের প্রধান সমস্যা পরিবহন। কেননা হরতাল ও অবরোধের কারণে এবার ঢাকাসহ উত্তরাঞ্চলের পাইকাররা আসেনি। যথাসময়ে পাইকার না আসলে ক্ষেতের তরমুজ ক্ষেতেই পচে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তরমুজের পাইকার (ক্রেতা) সোহল মিয়া, এমদাদ হোসেন, জাফর গাজী জানান, তারা গত বছর প্রায় এক কোটি টাকার তরমুজ কিনেছেন। কিন্তু এ বছর মোকামে তরমুজ পাঠাতে তাদের চরম ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়া এ বছর পরিবহন ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। গেল বছর যেখানে ১৬ থেকে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা ছিল ট্রাক ভাড়া, এ বছর তা পৌঁছেছে ৩৫-৪০ হাজারে। কলাপাড়া কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, কলাপাড়ার ধানখালী, চম্পাপুর, লতাচাপলী ও লালুয়া ইউনিয়নে প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে এবার তরমুজ চাষাবাদ হয়েছে।
×