ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজশাহীতে তিন শিবিরকে গণধোলাই বোমা ফাটিয়ে ত্রাস সৃষ্টির চেষ্টা

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২৮ জানুয়ারি ২০১৫

রাজশাহীতে তিন শিবিরকে গণধোলাই বোমা ফাটিয়ে  ত্রাস সৃষ্টির  চেষ্টা

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ ২০ দলীয় জোটের চলমান অবরোধ-হরতালের নামে সন্ত্রাস, নাশকতা, জ্বালাও-পোড়াও এবং ধ্বংসযজ্ঞ রুখে দিতে এবার মাঠে নামতে শুরু করেছে সাধারণ মানুষ। অবরোধকারীদের কোণঠাসা করতে রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় গঠন করা হয়েছে প্রতিরোধ কমিটি। দেশের সম্পদ ও সাধারণের জানমাল রক্ষায় এই প্রতিরোধ কমিটি কাজ করবে। মঙ্গলবার জেলার গোদাগাড়ীতে তিন শিবির কর্মীকে আটকে গণধোলাইয়ের পর পুলিশে দিয়েছে জনতা। একই দিন নগরীর শাহ মখদুম কলেজের সামনের রাস্তায় শিবির কর্মীদের ত্রাস সৃষ্টি ও সড়ক অবরোধের চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে তারা। খবর স্টাফ রিপোর্টার। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা টানা অবরোধ ও হরতালের নামে সন্ত্রাস, নাশকতা, জ্বালাও-পোড়াও রুখতে এবার মাঠে নামছে প্রতিরোধ কমিটি। ইতোমধ্যে নগরীর ওয়ার্ড ও উপজেলা পর্যায়ে শুরু হয়েছে প্রতিরোধ কমিটি গঠন প্রক্রিয়া। জেলার চারঘাটে এরই মধ্যে মাঠে নেমেছে প্রতিরোধ কমিটি। ফলে গত দু’দিন থেকে কার্যত কোণঠাসা হয়ে পড়েছে অবরোধকারীরা। দেশের সম্পদ ও সাধারণ নাগরিকের জানমাল রক্ষায় মাঠে কাজ করবে এ প্রতিরোধ কমিটি। আগামী দু’-একদিনের মধ্যে মাঠে নামতে প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন প্রতিরোধ কমিটি। রাজশাহী নগর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা জানান, নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হচ্ছে। ২০ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধ ও হরতালের বিরুদ্ধে এবং সন্ত্রাস, নাশকতা, জ্বালাও-পোড়াও রুখতে এ কমিটির সদস্যরা মাঠে থাকবে। শুধু তাই নয়, স্থানীয়ভাবে যারা নাশকতার সঙ্গে জড়িত তাদের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করবে কমিটির সদস্যরা। রাজশাহী নগরীর পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন উপজেলাও প্রতিরোধ কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামন আসাদ জানান, প্রতিরোধ কমিটি গঠনের জন্য উপজেলা নেতৃবৃন্দদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারা প্রতিরোধ কমিটি গঠনে কাজ শুরু করে দিয়েছে। ইতোমধ্যেই কয়েকটি উপজেলা তাদের প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এদিকে জেলায় প্রথম প্রতিরোধ কমিটি গঠন করে কাজ শুরু করেছে। কমিটির সদস্যরা মাঠে নেমেছে। পৌর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত এ কমিটিতে ব্যবসায়ী, শিক্ষক, ইমাম, সমাজ সেবকদের সংযুক্ত করা হয়েছে। রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার আলমগীর কবির বলেন, নাশকতাকারীরা দেশ ও জাতির শত্রু। তাদের মোকাবেলা করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। দেরিতে হলেও বিভিন্ন স্থানে মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। মঙ্গলবার জেলার গোদাগাড়ীতে শিবিরের তিন কর্মীকে ধরে গণধোলাইয়ের পর পুলিশে সোপর্দ করেছে জনতা। আটককৃতরা হলো উপজেলার সুলতানগঞ্জের আশরাফ আলীর ছেলে ছাত্রশিবির রাজশাহী জেলা শাখার দফতর সম্পাদক মাসুম মারুফ (২৫), কামারপাড়া এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে উপজেলা (পশ্চিম) শাখার সভাপতি আব্দুস সামাদ (২৪) এবং বালিয়াঘাটা এলাকার মৃত শাহাবুল ইসলামের ছেলে শিবিরকর্মী মনোয়ার হোসেন (২৭)। এলাকাবাসী জানায়, বিকেলে তিনটি মোটরসাইকেলে পাঁচ যুবক ঘোরাফেরা করলে তাদের সন্দেহ হয়। এ সময় সন্দেহভাজনদের সঙ্গে কথা বললে একটি মোটরসাইকেলে দুই যুবক দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এরপর অন্য দুটি মোটরসাইলে আরও তিন যুবক পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের ধাওয়া দিয়ে ধরা হয়। তারা আরও জানান, এ সময় তাদের কাছে থাকা দুটি কাপড়ের ব্যাগ পাওয়া যায়। ব্যাগে দেড় ইঞ্চির কিছু লোহার কাঁটা এবং ইস্পাতের তৈরি প্রায় এক ফুট উচ্চতার ছয়টি ধারাল ত্রিফলা উদ্ধার করা হয়। পরে গণধোলাইয়ের পর তাদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়। গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি এসএম ফরহাদ জানান, আটককৃত শিবিরের তিন নেতাকর্মী অত্যন্ত দুর্ধর্ষ। তাদের বিরুদ্ধে নাশকতামূল কর্মকা-ে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে মামলা রয়েছে। এদিকে ‘পুড়ছে মানুষ, পুড়ছে দেশ, রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে মুক্তিযোদ্ধের চেতনায় শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ দেশ গড়ার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাজশাহীতে গণসঙ্গীত, মিছিল ও সমাবেশ করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে রাজশাহী মুক্তিযুদ্ধ পাঠাগার এ কর্মসূচীর আয়োজন করে। এর আগে নগরের আলুপট্টির মোড়ে গণসঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। এরপর সেখান থেকে একটি মিছিল বের করে সোনাদীঘি মোড় হয়ে সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে সমাবেশ করে। একই দিন নগরীর শাহ মখদুম কলেজের সামনের রাস্তায় আগুন দিয়ে শিবির কর্মীদের ত্রাস সৃষ্টি ও সড়ক অবরোধের চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে পুলিশ। এ সময় তারা দুটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক মাহমুদুর রহমান জানান, সকালে অবরোধের সমর্থনে শিবির কর্মীরা শাহ মখদুম কলেজের সামনে রাস্তার ওপর আগুন দিয়ে অবরোধের চেষ্টা করে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে শিবির কর্মীরা দুটি বোমা ফাটিয়ে ত্রাস সৃষ্টি চেষ্টা করে পালিয়ে যায়। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার বেলা ৩টা পর্যন্ত পুলিশী অভিযানে রাজশাহী সিটির প্যানেল মেয়র (১) আনারুল আলম আযবসহ ১৩ জনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতরা সবাই বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরকর্মী। আটককৃতদের মধ্যে জেলায় ১০ জন এবং মহানগর এলাকায় ৪ জন রয়েছে। রাজশাহী নগর পুলিশের মুখপাত্র ও গোয়েন্দা শাখার সহকারী কমিশনার ইফতেখায়ের আলম জানান, নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের ৪ জনকে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজশাহী জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার ওসি শরীফুল আলম জানান, জেলার নয় উপজেলায় পুলিশের বিশেষ অভিযানে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের ১০ জনকে আটক হয়েছে। এদিকে মঙ্গলবার বাদ জোহর নগরীর সোনাদীঘি জামে মসজিদে আরাফাত রহমান কোকোর গায়েবানা জানাজা শেষে ফেরার পথে নগরীর বাটার মোড় থেকে প্যানেল মেয়র আনারুল আলম আযবকে আটক করা হয়।
×