
গঙ্গামতি চর
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের মাত্র ১০ কিলোমিটার পূর্বে বিস্তৃত গঙ্গামতি চর। একপাশে গা ছমছমে সমুদ্র, মাঝখানে লেক আর চারপাশে ঘন সবুজ বন—সব মিলে যেন এক স্বপ্নিল চিত্রকল্প। নিসর্গের এই নিপুণ সাঁজনে প্রতিদিনই টানছে পর্যটকদের শত শত পদধ্বনি।
সূর্যোদয়ে জেগে ওঠে গঙ্গামতি
ভোরের প্রথম আলোয় গঙ্গামতির লালচে বেলাভূমিতে সূর্য যখন আভা ছড়িয়ে দেয়, তখন চরজুড়ে দেখা যায় লাল কাঁকড়ার ছুটে চলা। মনে হয়, সৈকতজুড়ে চলছে রঙের খেলা। কাঁকড়ার নিপুণ আঁকা আলপনা যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে জোয়ার-ভাটার ছন্দে। সেই দৃশ্য দেখলে পল্লী কবি জসিম উদ্দিনের নকশিকাঁথার মাঠ যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
সবুজ বন আর জীববৈচিত্র্যের ছড়াছড়ি
চরজুড়ে রয়েছে কেওড়া, গেওয়া, ছইলা, বাইনসহ শতাধিক প্রজাতির গাছপালা। পাখির কিচিরমিচির, বানরের লাফালাফি, শেয়ালের গহন বনে বিচরণ আর বুনো শুকরের মৃত্তিকা খুঁড়ে কচু খাওয়ার দৃশ্য—সব মিলিয়ে এটি এক জীবন্ত বন্যজীবন অভয়ারণ্য।
জল আর ঢেউয়ের জোয়ার-ভাটায় প্রাণময় লেক
চরের বুকে থাকা বিশাল লেক গঙ্গামতির প্রাণ। জোয়ার-ভাটার প্রভাবে এর রূপ প্রতিনিয়ত বদলায়। লেকজুড়ে মাছ ধরার ট্রলার চলে, পর্যটকরা তাতে চড়ে উপভোগ করেন প্রকৃতির হৃদস্পর্শী সৌন্দর্য। ট্রলার ছাড়াও , ডিঙি নৌকা কিংবা পায়ে হেঁটেও লেকের তীরঘেঁষা বন দেখতে পারেন।
ভাটার সময় গাছ থেকে ঝরে পড়া পাতা, ফুল, লতা মিলেমিশে তৈরি করে এক দুর্লভ দৃশ্য। যেন গঙ্গামতির লেক নিজেই শিল্পের ক্যানভাস।
সহজ যাতায়াত আর মুগ্ধতার অভিজ্ঞতা
কুয়াকাটা জিরোপয়েন্ট থেকে মোটরসাইকেল,অটোরিকশা,মটর চালিত ভ্যানে খুব সহজেই যাওয়া যায় গঙ্গামতিতে। ভাটার সময় মাইক্রোবাসেও যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক দম্পতি সাদমান ও সিলভি বলেন, “গঙ্গামতি এতটা সুন্দর, তা না দেখলে বিশ্বাসই হতো না। শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয়, এখানকার নিস্তব্ধতা, বন, লেক, কাঁকড়া—সব মিলিয়ে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।”
উন্নয়নে অনীহা, অপার সম্ভাবনায় থমকে থাকা গন্তব্য
সৌন্দর্যের এমন অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সরকারি পর্যটন উদ্যোগের অভাব এখানে প্রকট। স্থানীয়দের অভিযোগ, ধোলাই মার্কেট হয়ে চরটিতে প্রবেশ পথে নেই কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন। নেই পরিচ্ছন্নতা, পর্যটক ব্যবস্থাপনা কিংবা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা।
এলাকার কয়েকজন বিনিয়োগকারী জানিয়েছেন, পরিকল্পনার অভাবে গঙ্গামতির সম্ভাবনাগুলো এখনও ঘুমিয়ে আছে।
হাউজিং প্রকল্প ও সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাওয়া
তবে স্বপ্ন থেমে থাকেনি। কিছু হাউজিং কোম্পানি ইতোমধ্যে গঙ্গামতি থেকে কাউয়ারচর পর্যন্ত শত শত একর জমি কিনে সম্ভাবনার বীজ বুনেছে। তারা মনে করে, এই এলাকা হতে পারে একটি আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র। এখানে সাগর ভাঙনের ঝুঁকি কম, ভূমির প্রাকৃতিক ভারসাম্যও অনুকূল।
স্থানীয়রাও স্বপ্ন দেখছেন—একটি টেকসই, পরিকল্পিত, আধুনিক গঙ্গামতি।
শেষ কথা
প্রকৃতির আপন ছায়ায় গড়া গঙ্গামতি চর শুধু একটি পর্যটন স্থান নয়, এটি হতে পারে বাংলাদেশের অন্যতম পরিবেশবান্ধব আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র। প্রয়োজন শুধু দূরদর্শী পরিকল্পনা, আন্তরিকতা এবং সরকারি উদ্যোগ। গঙ্গামতির সম্ভাবনা আর থেমে থাকার নয়—এখনই সময় তা কাজে লাগানোর।
Mily