ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১০ জুন ২০২৫, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আজমেরি হক বাঁধন

আমার এক্সপেক্টেশন অনেক হাই ছিল এই সরকারের কাছ থেকে। যা স্বপ্ন দেখেছি সেটা কাছাকাছি তো যায়ই নাই বরং হতাশই হয়েছি

প্রকাশিত: ০৯:৫৯, ১০ জুন ২০২৫; আপডেট: ১০:০০, ১০ জুন ২০২৫

আমার এক্সপেক্টেশন অনেক হাই ছিল এই সরকারের কাছ থেকে। যা স্বপ্ন দেখেছি সেটা কাছাকাছি তো যায়ই নাই বরং হতাশই হয়েছি

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতায় নিজেদের প্রত্যাশা, কাজের ক্ষতি এবং শিল্পীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া সংকট নিয়ে মুখ খুললেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী আজমেরি হক বাঁধন। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট ভাষায় তিনি জানান, নতুন সরকারের কাছে তার প্রত্যাশা অনেক বেশি থাকলেও বাস্তবতা তাকে হতাশ করেছে।

আজমেরি হক বাঁধন বলেন, “আমার এক্সপেক্টেশনও অনেক হাই ছিল এই সরকারের কাছ থেকে। কিন্তু সিস্টেমটা তো আসলে আগেরটাই রয়ে গেছে। আমি কোন কিছুর পরিবর্তন দেখছি না।”

তিনি জানান, গণঅভ্যুত্থানের পর তার পেশাগত জীবনে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। তার ভাষায়, “আমার কাজের জায়গায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমার তিনটি চলচ্চিত্রে সাইন করার কথা ছিল। একটি ফিল্মের সাইনিং হওয়ার কথা ছিল ২৫ জুলাই, আরেকটির শুটিং শুরুর কথা ছিল ৩০ আগস্ট। কিন্তু দুইজন প্রযোজক এখন নানা সমস্যায় থাকায় কাজগুলো বাতিল হয়ে গেছে। এতে আমি স্পষ্টভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।”

বাঁধনের দাবি, যারা তার সঙ্গে কাজ করার কথা ছিল তারা আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং আগে শিল্পজগতে তারাই প্রভাবশালী ছিলেন। তিনি বলেন, “আমি তো আসলে আওয়ামী লীগ ছাড়া কিছু দেখি নাই। ইন্ডাস্ট্রিতেও ওরাই কাজ করেছে। আমি ওদের সান্নিধ্যেই ছিলাম, ওদের সাথেই কাজ করার কথা ছিল। কিন্তু কাজটা আর হয়নি।”

তার মতে, ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ পুরোপুরি থেমে যায়নি, তবে একটি সিন্ডিকেট বদল হয়েছে। একদল শিল্পী বা প্রযোজক আগে কাজ করতেন, এখন অন্যদল কাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। তবে কাজ চললেও শিল্পীদের ওপর নানা ধরনের চাপ ও হয়রানি বেড়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, “আমাদের শিল্পীদের উপর বিভিন্নভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে। তাদের হেয় করা হচ্ছে, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। আমি তীব্র প্রতিবাদ জানাই।”

এক সহ-অভিনেতাকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার ও কারাবন্দি করার ঘটনার কথাও তুলে ধরেন বাঁধন। তিনি জানান, “একজন কো-আর্টিস্টকে এয়ারপোর্ট থেকে গ্রেফতার করে জেলে নেওয়া হয়েছে। এই পুরো প্রসেসটাই অন্যায়। এধরনের অন্যায় আমি আগের সরকারের আমলেও দেখেছি। আমার সাথেও হয়েছে, আশেপাশেও হয়েছে। তখন তো এটা আমাদের কাছে নরমালাইজ হয়ে গেছিল। কিন্তু আমি যে নতুন বাংলাদেশে এসেছি, সেখানে এসব আশা করিনি।”

নারী শিল্পীদের ওপর বেড়ে যাওয়া হামলা ও নির্যাতন নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাঁধন। তার ভাষায়, “আগে মেয়েদের ওপর খারাপ কিছু হয়নি তা নয়। কিন্তু এখন সেটা বেড়েছে। কিছু কিছু উগ্রবাদী গোষ্ঠীর মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা এবং তাতে সরকারের নীরবতা আমাকে ভাবাচ্ছে।”

সবশেষে, অভিনেত্রী বলেন, “তাদের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার ইচ্ছা থাকতেই পারে। আমি বলছি না তাদের নাগরিক অধিকার কেড়ে নিতে হবে। কিন্তু সরকার পক্ষ থেকে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখার কোনো উদ্যোগ আমি দেখতে পাইনি। এটা আমাকে স্যাটিসফাই করেনি। আমি যে স্বপ্ন দেখেছি, সেটা তো কাছে-পিঠেও যায়নি। বরং আমি হতাশই হয়েছি।”

এই খোলামেলা বক্তব্যে আজমেরি হক বাঁধন শুধু নিজের ব্যক্তিগত ক্ষোভ প্রকাশ করেননি, বরং দেশের শিল্প সংস্কৃতি এবং সাম্প্রতিক রাজনৈতিক-সামাজিক বাস্তবতায় শিল্পীদের অবস্থান নিয়েও এক কঠিন সত্য তুলে ধরেছেন। তার এমন স্পষ্ট বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সাংস্কৃতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/vhjk54bd

আফরোজা

×