
ছবি: জনকণ্ঠ
সত্তরের দশকের শেষ দিকে চট্টগ্রামে ‘অশিক্ষিত’ সিনেমার শুটিংয়ের ফাঁকে ‘বাংলার বাণী’ পত্রিকা পড়তে গিয়ে একটি খবরে চোখ আটকে যায় আজিজুরের।
‘একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা’ শিরোনামে দুই কলামের খবরে নারায়ণগঞ্জের এক স্কুলছাত্র এক মাস ধরে শৌচাগারে আটকে থাকার পর মারা গেছে। সংবাদটি পড়ে দুঃখে ভারাক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি; কিছুতেই ঘটনাটি ভুলতে পারছিলেন না।
সেই ঘটনা বড় পর্দায় তুলে আনার পরিকল্পনা করেন তিনি। তিনি আঁটঘাট বেঁধে নামলেও প্রযোজকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কাউকে রাজি করাতে পারেননি তিনি। ছবিটি চলবে না বলে মুখের ওপর না করে দিয়েছেন অনেকে।
পরে তার ‘অশিক্ষিত’ সিনেমার প্রযোজক সংগীত পরিচালক সত্য সাহাকে অনেক অনুরোধ করে রাজি করালেন আজিজুর রহমান। প্রযোজক মেলার পর চিত্রনাট্যে হাত দিলেন আজিজুর; আর সংলাপ লিখেছেন মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান। দুই কলামের খবরে বিস্তারিত কিছু না থাকায় চিত্রনাট্যে অনেক ঘটনা ও চরিত্র জুড়ে দিতে হয়েছে তাদের।
স্কুলের দপ্তরি চরিত্রে রাজ্জাককে নেওয়া হল; তখনও চিত্রনাট্যে কোনো নায়িকার চরিত্র ছিল না। প্রযোজকের পরামর্শে স্কুলের ঝাড়ুদারের চরিত্র যোগ করা হয়; সেই চরিত্রে নেওয়া হয় শাবানাকে।
ঝাড়ুদারের চরিত্র ধারণ করতে ঢাকার বিভিন্ন সুইপার পল্লীতে ঘুরে ঘুরে তাদের চাল-চলন, কথা বলার ধরণ রপ্ত করতে হয়েছিল শাবানাকে।
যে স্কুলছাত্রকে নিয়ে সিনেমার কাহিনি আবর্তিত হয়েছে সেই স্কুলছাত্র খোকার ভুমিকায় নেওয়া হয় শিশুশিল্পী সুমন সাহাকে; যিনি প্রযোজক সত্য সাহার ছেলে। সংগীত পরিচালন ইমন সাহার ভাই।
‘ছুটির ঘণ্টা’র আগে আজিজুরের ‘অশিক্ষিত’ সিনেমায় কাজ করেছেন সুমন । ১০টির মতো সিনেমার অভিনয়শিল্পী সুমন তিন দশক আগে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন। বর্তমানে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সেখানেই থিতু হয়েছেন। কাস্টিংয়ের পর শুটিংয়ের স্থান নির্বাচন করতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে কাপ্তাই বাঁধ এলাকার একটি রেস্ট হাউসকে বেছে নেন আজিজুর।
আইয়ুব খানের আমলে নির্মিত সেই রেস্ট হাউসকে খোকার বাড়ি হিসেবে দেখানো হয়। পাশেই ছিল স্কুল। কাপ্তাইয়ে কিছু দৃশ্যের শুটিং শেষে এফডিসিতে সেট ফেলে শৌচাগারের দৃশ্যগুলো ধারণ করা হয়। দৃশ্যধারণ শেষে সেন্সর বোর্ডে জমা দেওয়ার পর ঘটে আরেক বিপত্তি। তৎকালীন সেন্সর বোর্ড আশঙ্কা করল, ছাত্র-ছাত্রীরা সিনেমাটি দেখলে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিতে পারে।পরে বাধ্য হয়ে কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের নিয়ে সেন্সর বোর্ডে দেখানো হলো; ছাত্র-ছাত্রীরা ভয় পায়নি জানালে সিনেমাটিকে মুক্তির অনুমতি দেওয়া হয়।
শুরুতে হল মালিকরা সিনেমাটি পাত্তা দেয়নি। অনেকে নিতেই চাননি; মাত্র ২০টি সিনেমা হলে মুক্তি পায়। পরে দর্শকদের মাঝে সাড়া ফেলায় হু হু করে হলের সংখ্যা বাড়তে থাকে; কোথাও কোথায়ও টানা পাঁচ মাসও চলেছিল সিনেমাটি। সেই সময় প্রায় চার কোটি টাকা ব্যবসা করেছিল ‘ছুটির ঘণ্টা’।
সিনেমার ‘একদিন ছুটি হবে, অনেক দূরে যাব’, ‘আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরী’সহ বেশ কয়েকটি গান এখনও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। প্রযোজনা পাশাপাশি সংগীত পরিচালনাও করেছেন সত্য সাহা। রাজ্জাক-শাবানা ছাড়াও বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুজাতা, শওকত আকবর, এটিএম শামসুজ্জামান।
আবির