ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় রোয়াইলবাড়ি দুর্গ, পর্যটনের অপার সম্ভাবনা

শহীদুল ইসলাম রুবেল, কনট্রিবিউটিং রিপোর্টার, নেত্রকোনা

প্রকাশিত: ১১:৪৮, ৫ জুন ২০২৫

নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় রোয়াইলবাড়ি দুর্গ, পর্যটনের অপার সম্ভাবনা

নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় রোয়াইলবাড়ি দুর্গ, পর্যটনের অপার সম্ভাবনাঐতিহাসিক রোয়াইলবাড়ি দুর্গ- নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় আমতলা ইউনিয়নে রোয়াইলবাড়ি এলাকায় এর অবস্থান। এই মোগল আমলের স্থাপত্যটি বেতাই নদীর তীরে অবস্থিত। তৎকালীন মোগল আমলের প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল এই রোয়াইলবাড়ি দুর্গ। রোয়াইলবাড়ি দুর্গের নির্মাণকাল সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া না গেলেও প্রত্নতত্ত্ববিদগণের মধ্যে কেউ কেউ এটিকে সুলতানী আমলের স্থাপনা বলে মনে করেন। আবার অনেকেই মনে করেন, সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহের পুত্র নছরত শাহ্ এ অঞ্চলে বসবাসের সময় দুর্গটি তৈরি করেন।

পরবর্তীকালে ঈশা খাঁ ও তার পরবর্তী শাসকের আমলেও দুর্গে ব্যাপক সম্প্রসারণের কাজ করা হয়। ৮০ দশকে আবিষ্কৃত এ স্থাপনাটি ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে নথিভুক্ত করে। ৪৬ একর জমির ওপর অবস্থিত পুরো দুর্গটি পূর্ব-পশ্চিম দিকে লম্বা ও প্রাচীর দ্বারা বিভক্ত। দুর্গের প্রাচীর নির্মাণে ইট ব্যবহার করা হয়েছে। দুর্গটি সংরক্ষিত ঘোষণার পর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এখানে খননকাজ পরিচালনা করে ও দুর্গের ধ্বংসাবশেষ ছাড়াও দুটি ঢিবি আবিষ্কার করে। সে সময় মাটির টিবি খনন করে মোগল আমলের কারুকার্য সংবলিত ইট দিয়ে গড়া একটি বারোদুয়ারি মসজিদের আশপাশে প্রাসাদের চিহ্ন ও একটি সুড়ঙ্গ পথের সন্ধান পায়। সুড়ঙ্গের পাশেই একটি বটগাছের নিচে কথিত নিয়ামত বিবির মাজার এবং ১২ হাত লম্বা ডেংগু মাল এর কবরস্থান।

এ ছাড়া দুর্গে রয়েছে একটি বিশালাকৃতির পুকুর, দুটি ঢিবি, একটি কবরস্থানসহ বেশকিছু প্রাচীন স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ। খননকাজ পরিচালনা কালে এখানে প্রাচীন ইটের ভংগ্নাংশ, মৃৎপাত্র, মূর্তি ও মূল্যবান কিছু পুরাকীর্তি আবিষ্কৃত হয়েছে। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই খননকাজ বন্ধ করে দেয় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।এরপর ১৯৮৭ সালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সরকারিভাবে ঐতিহাসিক নিদর্শন রক্ষায় এই ৪৬ একর ভূমি পুরাকীর্তি এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে। সে সময় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর শুধু একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে এলাকাটিকে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে। তবে নির্মাণ করা হয়নি কোনো প্রাচীর কিংবা নেই কোনো কাঁটাতারের বেড়া।

খননের পর থেকেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পাথরের ও কাচের পিলার। সম্প্রতি নেত্রকোনা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর নতুন করে খনন কাজ শুরু করে আরও বেশ কিছু ঐতিহাসিক নিদর্শন বারোদুয়ারি মসজিদের দক্ষিণ দিকে খুঁজে পায়। খুঁজে পায় দুর্গের ফটকের সন্ধান। খনন করে সংরক্ষিত বিভিন্ন কারুকার্য সংবলিত ইট-পাথরের অস্থায়ী প্রদর্শনী উপস্থাপন করা হয় সেখানে। ঐতিহাসিক রোয়াইলবাড়ি দুর্গ এলাকা দেখতে প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকরা এখানে আসছেন। কিন্তু সম্ভাবনাময় এই পর্যটন এলাকাটিতে জেলা পরিষদের উদ্যোগে পাকা করে দুটি ছাতাকৃতির বিশ্রামাগার নির্মাণ করলেও এর আধুনিকায়নে আর কিছুই করা হয়নি। ফলে পর্যটকদের পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। রোয়াইলবাড়ি দুর্গ অবস্থিত এলাকাটি একটি পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সঠিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তা হচ্ছে না। এতে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

আঁখি

×