
ছবি: জনকণ্ঠ
ঈদ-উল-আযহার টানা আট দিনের ছুটির সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি যোগ হওয়ায় কাঙ্খিত পর্যটকের আগমন ঘটবে এমন আশায় কুয়াকাটার হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন। হোটেলের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি কেউ কেউ আবার আলোকসজ্জার কাজও করেছেন। পর্যটককে স্বস্তিদায়ক পরিবেশে কুয়াকাটায় ভ্রমণের সুযোগ করে দেওয়ার এমন ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করছেন। মে মাসের শুরু থেকে টানা ভ্যাপসা গরমের পরে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় পর্যটকের উপস্থিতি দশ শতাংশে নেমে যায়। কোন আবাসিক হোটেল শূন্যের কোঠায় পৌঁছে গেছে। ব্যবসায় একটা চরম মন্দাভাব দেখা দেয়। এই মন্দাভাব কাটাতে ঈদের ছুটিতে পর্যটকের ব্যাপক সমাগম হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানালেন হোটেল মোটেল কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে অধিকাংশ হোটেলে শতকরা ৪০ থেকে ৫০ ভাগ কক্ষের আগাম বুকিং হয়ে গেছে। তবে ১০-১১ জুন পর্যটকে পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়ার কথা জানালেন হোটেল কর্তৃপক্ষ। এই দুই দিনের জন্য আগাম বুকিং পাওয়া যাচ্ছে।
হোটেল মিয়াদ ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃপক্ষ জানান, তাদের ১০-১১ জুনে অলরেডি ৪০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। হোটেল তাজওয়ার কর্তৃপক্ষ জানালেন তাদেরও ওই তারিখে আগাম বুকিং রয়েছে। আজ ৫ জুন, বৃহস্পতিবার থেকে মূলত সরকারি ছুটি কার্যকর হয়েছে। আগামি ১৫ জুন অফিস আদালত সচল হবে। ৭ জুন থেকে কোরবানি শুরু হবে। যা চলবে ৯ জুন পর্যন্ত। এজন্য ১০-১১ জুন এই দুইদিন মূলত বিনোদন, ভ্রমনের মুখ্য সময়। এই পিক টাইমে কুয়াকাটায় লাখো পর্যটকের সমাগম হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানালেন, কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি ইব্রাহিম ওয়াহিদ। ১২ জুন পর্যন্ত পর্যটকের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি থাকার কথা বললেন অধিকাংশরা।
তবে আধুনিক সেবা সংবলিত ও তারকা মানের হোটেলগুলোতে এখনও গেস্ট রয়েছে। তাদের ৯-১০-১১ জুনে এখনই শতভাগ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। খান প্যালেস হোটেল কর্তৃপক্ষ এমন তথ্য নিশ্চিত করেন। মূলত ৯ জুন থেকে কুয়াকাটায় ১১ জুন পর্যন্ত পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়ের সম্ভাবনা থাকছে। এমনিতেই বর্ষায় উত্তাল সমুদ্র দেখার মজাই আলাদা। এমনটাই উপলদ্ধি সাগর দর্শনে আসা দর্শনার্থীরা। পর্যটকের আগমনে কুয়াকাটার ছোট-বড়-মাঝারি আধুনিক ও তারকা মানের অন্তত ২৩০টি হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট এখন পুরোপুরি পর্যটক বরণে প্রস্তুত রয়েছে। তেমনি খাবার হোটেল, ছাতাবেঞ্চি ব্যবসায়ী, ক্ষুদে, ভাসমান দোকানিসহ সহশ্রাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রায় আট হাজার কর্মীবাহিনী প্রস্তুত রয়েছেন পর্যটকের সেবা নিশ্চিতে। কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশন সভাপতি মোতালেব শরীফ জানান, তারা সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লোকজন এখানে আসা পর্যটকের সর্বোচ্চ সেবা প্রদানে সচেষ্ট রয়েছেন।
ঈদ পরবর্তী আগত পর্যটক-দর্শনার্থীর নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ সকল ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নিয়মিত টহলের পাশাপাশি তিনটি স্পটে বিশেষ প্রহরার ব্যবস্থা থাকবে। এ তথ্য নিশ্চিত করেন ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোনের পরিদর্শক তাপস চন্দ্র রায়। একইভাবে মহিপুর থানা পুলিশেরও পর্যটকের নিরাপত্তা বিধানে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম জানিয়েছেন। কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রবিউল ইসলাম জানান, পর্যটকের সেবা নিশ্চিতে সকল ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তবে অতি সম্প্রতি জলোচ্ছ্বাস তাণ্ডবে গোটা সৈকতে শূন্যপয়েন্টসহ দুই দিকে সড়ক ও জিওব্যাগ জিও টিউবের বিধ্বস্ত দশা পর্যটকের ভোগান্তির কারণ হবে বলে জানালেন কুয়াকাটার সকল শ্রেণির মানুষ। এসব অপসারণ করা জরুরি প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা। ছড়ানো ছিটানো কংক্রিটে পর্যটকরা দুর্ঘটনার শঙ্কায় রয়েছেন। এছাড়া পর্যটকের ভিড়ে বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ যানবাহনের অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ন্ত্রণে কিংবা অশোভন আচরণ বন্ধে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন কেউ কেউ। বাসে আসা পর্যটককে নির্দিষ্ট হোটেলে নেওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থার কথাও জানালেন একাধিক হোটেল কর্তৃপক্ষ।
আবির