
ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ
গারো পাহাড়ের পাদদেশে ভাটি বাংলার ঐতিহ্য দেশবিখ্যাত নেত্রকোনার গয়ানাথের সুস্বাদু ‘বালিশ’ মিষ্টি। নেত্রকোনার বালিশ মিষ্টির ঐতিহ্য যুগ যুগ ধরে চলছে আমজনতার মুখে। বালিশ মিষ্টির নাম শুনলে পরিচিতজনদের জিভে পানি এসে যায়। স্বাদ নিতে ইচ্ছা করে।শত বছরেরও আগে বালিশ মিষ্টির জনক গয়ানাথ ঘোষ বারহাট্টা রোডে গয়ানাথ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে এই বালিশ মিষ্টি প্রস্তুত করেন। সে সময়ে শুধু তার দোকানেই এই মিষ্টি বিক্রি হতো।অন্য মিষ্টির চেয়ে আকারে বড় এবং দেখতে অনেকটা কোল বালিশের মতো হওয়ায় ক্রেতাদের পরামর্শে গয়ানাথ মিষ্টির নাম রাখেন ‘বালিশ’। অল্পদিনেই অতুলনীয় স্বাদের এ মিষ্টির খ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
বালিশ মিষ্টির প্রথম রূপকার` হিসেবে দেশজুড়ে পরিচিতি পান গয়ানাথ ঘোষ। ধীরে ধীরে তার নামটিও জড়িয়ে পড়ে মিষ্টির সঙ্গে, হয়ে উঠে গয়ানাথের বালিশ।
বালিশ তৈরি হয় কীভাবে কারিগররা জানালেন, দুধ-ছানা, চিনি এবং ময়দার দরকার হয় এ মিষ্টি তৈরি করতে। প্রথমে ছানার সঙ্গে সামান্য ময়দা মিশিয়ে মণ্ড তৈরি করা হয়। মণ্ড দিয়ে তৈরি হয় বিভিন্ন সাইজের মিষ্টি বালিশ।এরপর চিনির গরম রসে তা ঢেলে জ্বাল দেওয়ার কিছুক্ষণ পরে ঠান্ডা করে আবার চিনির রসে ডুবিয়ে রাখা হয় অনেকক্ষণ। একসময় রসে টইটম্বুর হয়ে যায় বালিশ। বিক্রির আগে বালিশের উপর দেওয়া হয় ঘন সুস্বাদু দুধের মালাই।তবে মিষ্টি মুখরোচক করতে তা তৈরির সময় আরো কিছু কলা-কৌশলও প্রয়োগ করেন কারিগররা। তবে ব্যবসার স্বার্থে প্রকাশ করতে চান না কেউ। এমনটাই জানালেন গয়নাথ মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী খোকন মোদক।১৯৬৫ সালে এ ভারত চলে যান বালিশের প্রস্তুতকারক ও গয়ানাথ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী গয়ানাথ ঘোষ। তখন তিনি দোকানটি নিখিল মোদকের কাছে বিক্রি করে যান। এরপর নিখিল মোদকের মৃত্যুর পর এটি পরিচালনা করছেন তার তিন ছেলে বাবুল মোদক, দিলীপ মোদক এবং খোকন মোদক।বর্তমানে গয়ানাথ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী বাবুল মোদক বলেন, বালিশের সুখ্যাতিতে তারা পরে একই নামে নেত্রকোনায় আরো দুইটি দোকান প্রতিষ্ঠা করেন। আর এখানকার বালিশ এখন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার অভিজাত দোকানগুলোতেও সরবরাহ করা হয়।
নেত্রকোণা জেলা প্রেস ক্লাবের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক ইনকিলাবের জেলা প্রতিনিধি এ কে এম আব্দুল্লাহ বলেন, ঐতিহ্যবাহী বালিশ এখন নেত্রকোনার অনেক দোকানেই পাওয়া যায়। তবে গয়ানাথ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের বালিশের কদরই আলাদা।গয়ানাথ মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী বাবুল মোদক জানান, গাভীর খাঁটি দুধ ছাড়া বালিশ তৈরি হলে এর প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যায় না। তাদের ৩টি দোকানে ২০ জন কর্মচারী রয়েছেন। তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন তার ভাই দিলীপ মোদক।তিনি বলেন, এসব দোকানে সাধারণত ৩০ থেকে শুরু ১০০০ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন সাইজের বালিশ মিষ্টি তৈরি হয়। ১০০০ টাকা মূল্যের বালিশ আকারে ১১ থেকে ১২ ইঞ্চি হয়। ওই মিষ্টির ওজন ২০০০ থেকে ২১০০ গ্রাম হয়ে থাকে। এর চেয়ে বেশি ওজনের বালিশও বানানো হয়। তবে তা অর্ডার দিলে তৈরি করা হয়। আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়ানো, বিয়ে বা জন্মদিনের মতো অনুষ্ঠানে ও খাবার তালিকায় এ মিষ্টিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।
ফারুক