ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু

স্বপ্না চক্রবর্তী

প্রকাশিত: ০০:১৬, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু

জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে জন্ম নিচ্ছে মশা

গত দুই বছর দেশজুড়ে দাপট দেখিয়েছে ডেঙ্গুবাহিত এডিস মশা। এর কামড়ে মৃত্যু হয়েছে হাজারো মানুষের। ২০২৩-এর শুরু থেকেই ছিল আক্রান্ত রোগীর উর্ধ্বমুখী সংখ্যা, যা বছরের শেষ দিন পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। কিন্তু  চলতি বছর আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যানে এ পর্যন্ত ছাড়িয়ে গেছে পূর্বের সব রেকর্ড। মৌসুম শুরুর আগেই আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ১১শ’র ঘরে। আর মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের। আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যাই বেশি। গ্রীষ্মের ভ্যাপসা গরমের মাঝে হঠাৎ করে কোথাও কোথাও হচ্ছে বৃষ্টি, যা এডিস মশার প্রজননের জন্য তৈরি করছে উপযুক্ত আবহাওয়া।

এ ছাড়া বাসা-বাড়ির পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়নকাজের নির্মাণাধীন অবকাঠামোতেও জমে থাকছে পানি। ফলে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাড়ছে এডিস মশা। এই অবস্থা চলতে থাকলে ভরা মৌসুমে পরিস্থিতি কি হতে পারে তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। মশা মারতে গত বছরের মতো ক্রাশ প্রোগ্রাম পরিচালনারও তাগিদ দিয়েছেন তারা।
গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ রোগী ॥
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত দেশজুড়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৯১৬ জন। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ১ হাজার ২০১ জন। আর আক্রান্ত নারীর সংখ্যা ৭১৫ জন। একই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের। কিন্তু এর আগের বছর একই সময়ে অর্থাৎ ১ জানুয়ারি থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ছিলো ৯২০ জন। আক্রান্তের মধ্যে ঢাকায় ছিলেন ৪৭২ জন আর ঢাকার বাইরে ৪৪৮ জন। মৃত্যু হয়েছিল ১০ জনের। এই হিসেবে চলতি বছর আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। আক্রান্তের ব্যবধান পৌঁছেছে ১ হাজারের কাছাকাছি।

এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে পরিস্থিতি খুবই ভয়ানক হতে পারে আশঙ্কা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, গত কয়েক বছর ডেঙ্গুর যে ধরন আমরা দেখেছি তাতে চলতি বছর আক্রান্তরা আরও বেশি শকে যাবে। ডেঙ্গু রোগী ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইনে কোনো সমস্যা নেই। এ বছর অবস্থা আরও খারাপ হবে কারণ আমাদের প্রাইমারি, সেকেন্ডারি, টারশিয়ারি লেভেলে সংক্রমণ হচ্ছে। প্রত্যেকটি সিজনের সংক্রমণ পরবর্তী সিজনের সংক্রমণকে আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ করছে। প্লাটিলেট এখানে ইস্যু না ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট এখানে ইস্যু। সেটি আমরা সারাদেশেই চেষ্টা করছি গাইডলাইন দিয়ে ম্যানেজ করতে। 
মৌসুমের শুরুতেই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা ॥ ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হয় মূলত বর্ষাকালে। আগস্ট থেকে বাড়তে থাকে এর ভয়াবহতা। কিন্তু চলতি বছর মার্চের মাঝামাঝিতেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টি শুরু হয়। এতে করে এডিস মশারা তাদের প্রজননে উপযুক্ত আবহাওয়া পেয়ে যাচ্ছে। এই ধারাবাহিকতা চলতে থাকলে এপ্রিলের শেষ এবং মে’র শুরুতে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আর এর অন্যতম কারণ হিসেবে ডেঙ্গুর প্রজননস্থল ধ্বংসে ব্যর্থতাকে দায়ী করছেন তারা। একইসঙ্গে আবহাওয়ার তারতম্যও সমানভাবে দায়ী উল্লেখ করে তারা বলছেন, এখনি এডিসের জীবাণুবাহী মশার প্রজননস্থল ধ্বংস না করতে পারলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। 
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বছরের প্রথম ৪ মাসের আক্রান্ত ও মৃত্যুর এ পরিসংখ্যান বলে দিচ্ছে বৃষ্টি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বৃদ্ধি পাবে। এ বছর ডেঙ্গুর মৌসুমে বিশেষ করে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ভয়াবহ হতে পারে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগাম পদক্ষেপ হিসেবে এডিস মশার প্রজননস্থল অপসারণ বা নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। বিশেষ করে রাজধানী বা রাজধানীর বাইরে যেসব হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীরা চিকিৎসাধীন রয়েছেন তাদের বাড়ির ঠিকানা সংগ্রহ করে ওইসব বাড়িতে ক্রাশ প্রোগ্রাম চালাতে হবে। 
দায়ী উষ্ণ-আর্দ্র আবহাওয়া ॥ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার জনকণ্ঠকে বলেন, উষ্ণ-আর্দ্র আবহাওয়া থাকার কারণে বাংলাদেশ মশা ও মশাবাহিত রোগ বিস্তারের জন্য উত্তম জায়গা। উপযুক্ত তাপমাত্রা, আর্দ্রতার সঙ্গে যোগ হয়েছে অপরিকল্পিত নগরায়ণ। বছরের শুরু থেকে ডেঙ্গুর চোখ রাঙানি আরও আতঙ্কিত করে তুলেছে নগরবাসীকে।

এখন আর নির্দিষ্ট কোনো সময় নয় বরং সারা বছর এডিস মশা নিধনে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন সেবামূলক সংস্থা এবং স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা এডিস মশা ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সম্পৃক্ত হলে অবশ্যই ভালো ফল আসবে। তবে তাদের এই কার্যক্রম নিয়মিতভাবে মনিটরিং করতে হবে। তিনি বলেন, এক সময় ডেঙ্গু ঢাকার রোগ ছিল, কিন্তু এখন এটি বিস্তৃত হয়ে সারা দেশের প্রতিটি জেলায় ছড়িয়েছে।

আমরা এমনও গ্রামে দেখেছি ডেঙ্গুর জীবাণুকে ডেঙ্গুর জীবাণু হিসেবে মানতেই নারাজ অনেকে। তাদের মতে এটি পানির পোকা। ফলে ওইসব মশা বিস্তার লাভ করে মানুষজনকে কামড়াচ্ছে। এতে করে রাজধানীর বাইরে ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু রোগী। এ বছরও তার ব্যতিক্রম নেই। দেশজুড়ে নানান উন্নয়ন কর্মকা-ের কারণে নির্মাণসামগ্রীতে জমছে পানি। যাতে ডেঙ্গু মশা প্রজননের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ পাচ্ছে। একইসঙ্গে মানুষজনের মধ্যেও রয়েছে এক ধরনের উদাসীনতা।

বছর বছর এত মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, বরণ করছে করুণ মৃত্যু কিন্তু তার পরও তাদের মধ্যে সচেতনতা নেই। অনেক বিশাল বিশাল আবাসিক ভবনগুলোর গ্যারেজে পানি জমে থাকছে। একইভাবে অনেকে শখ করে বাড়ির বারান্দা বা ছাদে টবে বাগান করছেন। সেখানেও পানি জমছে। এভাবেই ডেঙ্গু তার প্রজননের উপযুক্ত পরিবেশ পেয়ে দৌরাত্ম্য বাড়াতে পারছে। তাই শুধু নীতি-নির্ধারক নয় বরং সব শ্রেণি-পেশার মানুষকেও ডেঙ্গু প্রতিরোধে একযোগে কাজ করতে হবে।
সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান স্বাস্থ্যমন্ত্রীরও ॥ প্রতিবছর যেভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে তা কোনোভাবেই কাম্য নয় বলে উল্লেখ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। তাই ডেঙ্গু রোধে বাসাবাড়ির সবকিছু পরিষ্কার রাখার নির্দেশ দিয়ে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, আমরা হাসপাতালগুলোয় বলে  রেখেছি। এখন চিকিৎসকরা ডেঙ্গু চিকিৎসা সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন।

স্যালাইনের যে সংকটের কথা ভাবা হয়েছে, সেটা নিয়েও আমি বৈঠক করেছি। স্যালাইনের কোনো সংকট হবে না। তবে ডেঙ্গু না হোক সেটা আমাদের সবার প্রার্থনা। বিপর্যয় না হওয়ার জন্য কী করতে হয় সেটা আপনারা ভালো করে জানেন। ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্বাস্থ্য বিভাগ প্রস্তুত রয়েছে। মন্ত্রী বলেন, আমাদের হাসপাতাল প্রস্তুত আছে, আইভি ফ্লুইড-মেডিসিন পর্যাপ্ত আছে। আমরা সবার জন্য কাজ করি। আমরা যে কেউ আক্রান্ত হতে পারি। সুতরাং আমরা যেভাবে সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করে করোনাকে একটি পর্যায়ে নিয়ে আসতে পেরেছি, আমি আশা করি ডেঙ্গুকেও নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারবো।

ডেঙ্গু মোকাবেলায় ঠিক কি কি পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা যে কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তার মধ্যে প্রতিরোধের ওপর জোর দিয়েছি। প্রতিটি ওয়ার্ডে আমরা কীভাবে প্রতিরোধ করতে পারি, মানুষকে সচেতন করা, মানুষকে বোঝানো। প্রত্যেক হাসপাতালের পরিচালককে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে হাসপাতাল যেন প্রস্তুত রাখে। যারা ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী কিংবা জ্বর হয়, তারা যেন সঠিক সময়ে দ্রুত হাসপাতালে আসেন। অনেক সময় দেখা যায় অনেকে দেরিতে আসেন, তখন কিন্তু কিছু করার থাকে না। এই সচেতনতা আমরা তৈরি করবো।

স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলমও বলেন, মশা নির্মূলে সিটি করপোরেশন তাদের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে। আজকের মিটিং মন্ত্রী ডেকেছেন শুধু সমন্বয় করার জন্য। অনেকের অভিযোগ ওষুধ কাজ করছে না। মেয়র এখানে বলেছেন, বিটিআই নিজে আমদানি করে নিয়ে এসে প্রয়োগ করবেন। স্বাস্থ্য বিভাগের কাজ অনুযায়ী আমাদের হাসপাতাল প্রস্তুত রাখাসহ যা যা নির্দেশনা দেওয়া দরকার আমরা দেব। সমন্বয় যাতে যথাযথভাবে হয় সেজন্য আজকের এই বৈঠকের আয়োজন। 
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমতি পেলেই তবে টিকা ॥ ডেঙ্গু রোগের টিকা বলতে এতদিন শুধু জাপানের ‘কিউডেঙ্গা’ বা ফ্রান্সের ‘ডেঙ্গভ্যাক্সিয়া’র নামই শোনা গেছে। তবে গত বছর নতুন করে যুক্ত হয়েছে যৌথভাবে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষকের উদ্ভাবিত টিভি০০৫ টিকাটি। ইতোমধ্যে যার দ্বিতীয় ধাপের সফল ‘হিউম্যান ট্রায়াল’ শেষ হয়েছে দাবি করেছিল বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআর,বি)।

তখন বলা হয়েছিল প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে এর তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালেরও, যা ওই বছরের অক্টোবর মাস থেকেই শুরু হওয়ার কথা ছিল। এর পর চতুর্থ ধাপের ট্রায়াল সফলভাবে শেষ করারও পরিকল্পনা ছিল সংস্থাটির। টিকার নিরাপত্তা এবং এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে পারে কি না সে বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে উল্লেখ করে বলা হয়েছিল, এই টিকার অন্যতম সুবিধা এটি কয়েক ডোজ নয় বরং এক ডোজ দিলেই কাজ করবে।

এর মাত্র একটি ডোজই সব ধরনের ডেঙ্গুর (ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩, ডেন-৪) বিরুদ্ধে কার্যকর হবে। আলাদা আলাদা ডোজ নেওয়ার দরকার হবে না। শিশুসহ সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এমনকি ডেঙ্গু আক্রান্ত না হলেও এই টিকা নেয়া যাবে। আর অন্য টিকার তুলনায় এটি সস্তা হবে বলেও জানানো হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কোনো টিকার অনুমোদন দেয়নি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

আর তাই টিকা নিয়ে আপাতত কোনো পরিকল্পনা নেই জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জনকণ্ঠকে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য যদি অনুমোদন দেয় তখন আমরা চিন্তা করে দেখব কি করা যায়। কিন্তু এর আগে তো আমাদের নিজেদের সচেতন হতে হবে। এবছর যেহেতু এখনি গত বছরের তুলনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা দ্বিগুণ তাই প্রতিকারের চাই কিভাবে এটি প্রতিরোধ করা যায় তাই ভাবতে হবে। 
আক্রান্ত বাড়ার কারণ খুঁজে বের করার তাগিদ ॥ সবাই মিলে কাজ করলেও রোগী বাড়ছে, মৃত্যুও বাড়ছে। এর কারণ খুঁজে বের করা জরুরি উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, সবাই অনেক কাজ করছি তাও রোগ বাড়ছে, রোগী মারা যাচ্ছে। কোথাও তো ঝামেলা আছে।

সেই বিষয়টি নিয়ে গবেষণার উপর গুরুত্ব দেওয়া খুব জরুরি। এডিস মশা নিয়ে গবেষণার জায়গায় একটা দুর্বলতা হচ্ছে, আমাদের দেশে মেডিকেল এন্টোমলজিস্ট আসলেই নেই। যারা কাজ করেন তারা হয় প্রাণিবিদ্যা অথবা কৃষি ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছেন। আমরা নিপসমের পক্ষ থেকে মেডিক্যাল এন্টোমলজির ওপর একটি প্রোগ্রাম চালুর উদ্যোগ নিয়েছি। এরা এখনো কাজ করছে।

২০১৯ সালেও ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু রোগ তেমন ছিল না। তারপর আমরা দেখেছি কুষ্টিয়া, যশোর, মেহেরপুর, বরিশালের মতো কয়েকটা জেলায় ছিল। গত বছর কোনো জেলাই বাদ ছিল না। আমরা শহরাঞ্চলে এডিস এজিপ্টি নিয়ে কথা বলি, কিন্তু গ্রামাঞ্চলে এডিস এলবোপিকটাস বেশি থাকে সেটা নিয়ে আলোচনা হয় না। ঢাকার বাইরে যেসব জায়গায় সার্ভে হয়েছে সবখানেই এলবোপিকটাস বেশি পরিমাণে পাওয়া গেছে। এর চরিত্র এজিপ্টি থেকে একদমই আলাদা।

আমরা প্রচার প্রচারণা করি এজিপ্টি মাথায় নিয়ে। এলবোপিকটাস কিন্তু কচু গাছের পাতায় জমা পানিতেও হতে পারে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা মূলক কার্যক্রম সারা বছরজুড়ে চালাতে হবে। দেশজুড়ে যদি আক্রান্তের সংখ্যাটা বাড়ে তা হলে আমাদের চিকিৎসা সক্ষমতার ওপর অনেক চাপ পড়বে।  
২০২৩ সালের পরিসংখ্যান ॥ এর আগে ২০২৩ সালের প্রথম তিন মাসে ৮৪৩ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং মারা গিয়েছিলেন ৯ জন। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ৫৬৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হন এবং ছয়জন মারা যান। ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত ১৬৬ এবং মৃত্যু তিনজন, মার্চে আক্রান্ত ১১১ জন এবং কেউ মারা যাননি। ওই বছর দেশে রেকর্ড পরিমাণ মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হন এবং মারা যান। বছরটিতে ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন। আর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১ হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
সাম্প্রতিক বছরগুলোর চিত্র ॥ সাম্প্রতিক বছরগুলোর পরিসংখ্যান বিবেচনায়, ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বেশি হয় ২০০০ সালে। ওই বছর সরকারি হিসাব মতে পাঁচ হাজার ৫০০ মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় এবং ৯৩ জন মারা যায়। সরকারি হিসাব মতে, ২০২২ সালে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৬২ হাজার ৩২১ ও মৃত্যু হয়েছে ২৮১ জনের। ২০২৩ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু রোগ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যারা চিকিৎসা নিয়েছে তাদের প্রায় অর্ধেক ঢাকার বাইরের জেলার।

×