ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

দখল-দূষণ বন্ধে আইনি নোটিস

সাতক্ষীরা শহরের প্রাণসায়ের খাল অস্তিত্ব সংকটে

মিজানুর রহমান, সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ২৩:৪৫, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

সাতক্ষীরা শহরের প্রাণসায়ের খাল অস্তিত্ব সংকটে

সাতক্ষীরায় ময়লা আবর্জনায় ভরাট হয়ে গেছে শহরের প্রাণসায়ের খাল

কোনোভাবেই শহরের মধ্যের এককালের ঐতিহ্যবাহী প্রাণ সায়ের খালের দূষণ রোধ করা যাচ্ছে না। ভরাট খালের পচা পানি আর শহরবাসীর ফেলা ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে শহরবাসীকে চলতে হয় নাকে রুমাল চাপা দিয়ে। কয়েকবছর পরপর কোটি কোটি ব্যয়ে নাম মাত্র কাগজে কলমে খাল খনন হলেও খালটি এখন বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। এই অসহনীয় পরিবেশ থেকে বাঁচার জন্য বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)র পক্ষ থেকে বুধবার এক আইনি নোটিস দেওয়া হয়েছে।

নোটিস অব ডিমান্ড ফর জাস্টিস শিরোনামের এই নোটিস দেওয়া হয়েছে সচিব ভূমি মন্ত্রণালয়, সচিব পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, চেয়ারম্যান, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন, মহাপরিচালক বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, মহাপরিচালক পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার সাতক্ষীরা, পৌর মেয়র, নির্বাহী প্রকৌশলী, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সাতক্ষীরা, পরিবেশ অধিদপ্তর, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ১২ জনকে এই নোটিস দেওয়া হয়েছে। বেলার পক্ষে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস. হাসানুল বান্না এই নোটিস দিয়েছেন। 
নোটিসে বলা হয়েছে, সাতক্ষীরা জেলাধীন সাতক্ষীরা সদর উপজেলাস্থ সাতক্ষীরা শহর এলাকার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত প্রাণসায়ের খালটি কাটিয়া মৌজার আরএস ২৩৪০ দাগে অবস্থিত। সাতক্ষীরার বেতনা ও মরিচ্চাপ নদীর সংযোগকারী এ খালের দৈর্ঘ্য ১৩ কিলোমিটার। শহরের পানি নিষ্কাশনে অন্যতম প্রধান মাধ্যম হচ্ছে এ খাল। দেশের অন্যান্য নদী-খালের মতো দখল ও দূষণে এ খালের অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। খালটি দখল করে গড়ে উঠেছে দোকান, ঘর-বাড়িসহ নানা অবৈধ স্থাপনা।

১১নং নোটিস গ্রহীতা ২০১৯ সালে ৮২০ জন অবৈধ দখলদার এবং ১৬৮টি অবৈধ স্থাপনার তালিকা প্রস্তুত করলেও অদ্যাবধি দখলমুক্ত হয়নি প্রাণসায়ের খাল। দখলের পাশাপাশি খালটির দু’পাশে এবং খালের মধ্যে পলিথিন-প্লাস্টিকসহ নানান অপচনশীল ও ক্ষতিকর বর্জ্য ফেলে খালটির পানি দূষিত করছে। সাতক্ষীরা বাজারের অনুমোদনহীন কসাইখানার মাধ্যমে গবাদি পশুর রক্ত ও অন্যান্য বর্জ্য সরাসরি খালটিতে ফেলা হচ্ছে। ১২নং নোটিস গ্রহীতার তথ্য অনুসারে বাজার ও পার্শ্ববর্তী আবাসিক এলাকার ড্রেনের সংযোগ রয়েছে এ খালে। গৃহস্থালী বর্জ্য নিয়মিত এ খালে ফেলা হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে খালটি তার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য হারিয়ে একটি পচা ডোবায় পরিণত হয়েছে। 
উল্লেখিত খাল দখল ও দূষণমুক্ত করে যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্য এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরে বারবার আবেদন জানানোর পরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে খালের অস্তিত্ব প্রায় বিলীন হতে চলেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো প্রতিকার না পেয়ে এলাকাবাসী খাল রক্ষায় আইনি সহযোগিতা পেতে বেলার নিকট আবেদন জানায়। এলাকাবাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে বেলা প্রতিনিধি খালটি সরেজমিন পরিদর্শন করে এবং ঘটনার সত্যতা খুঁজে পায়।

নোটিসে বলা হয় দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী খাল দূষণ ও দখলমুক্ত রেখে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা আপনার দায়িত্ব যা পালনে আপনি চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। নোটিসে আপনার গৃহীত পদক্ষেপ নোটিস প্রেরণের ৭  দিনের মধ্যে নিম্ন স্বাক্ষরকারীকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যথায় আপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে নোটিসে উল্লেখ করা হয়েছে।

×