ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

কুসিক নির্বাচন

প্রচার শেষ, কাল ভোট জয়-পরাজয়ের সংশয়ে প্রার্থীরা

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা

প্রকাশিত: ০০:০৫, ৮ মার্চ ২০২৪

প্রচার শেষ, কাল ভোট জয়-পরাজয়ের সংশয়ে প্রার্থীরা

কুমিল্লায় টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু ও বাস প্রতীকের প্রার্থী ডা. তাহসিন বাহার সূচনার গণসংযোগ

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রচার বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। এ নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থীরা বৃহস্পতিবার দিনভর ব্যাপক প্রচার চালিয়েছেন। রাত পোহালে আগামীকাল ৯ মার্চ শনিবার কুমিল্লা সিটির ১০৫টি কেন্দ্রে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। শেষ মুহূর্তে জয়-পরাজয়ের সংশয়ে মেয়র পদে ৪ প্রার্থীর মধ্যে দুই হেভিওয়েট প্রার্থী। এদিকে নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে ইতোমধ্যে র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ৩ হাজার সদস্যকে প্রস্তুত করা হয়েছে।

এছাড়া মাঠে থাকবেন ৩৬ জন জুডিসিয়াল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমানের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের একটি মনিটরিং টিম নগরীর ১০৫টি কেন্দ্র পরিদর্শনে মাঠে থাকছেন। বুধবার পর্যন্ত চার দিনব্যাপী প্রিসাইডিং অফিসারদের ট্রেনিং হয়েছে। ইতোমধ্যে ভোট গ্রহণের আনুষ্ঠানিক সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। 
পুলিশ-প্রশাসন ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, এবার সিটির ১০৫টি কেন্দ্রের মধ্যে সবকয়টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যা পুলিশের ভাষায় গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। জেলা পুলিশের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা জানান, শুক্রবার থেকে পুরো নগরীতে প্রায় ৩ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মাঠে নামবে। ভোট কেন্দ্রের বাইরে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সবগুলো পয়েন্টে মোবাইল টিম ও চেক পোস্ট গঠন করে অপরাধ-সন্ত্রাস দমন করে ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠুু রাখা হবে।

কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সৈয়দ সামছুল তাবরিজ বৃহস্পতিবার বিকেলে জানান, শুক্রবার থেকে ৯ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ২৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ১২ প্লাটুন বিজিবি ও র‌্যাবের ২৭টি টিম মাঠে কাজ করবে। তিনি জানান, ভোটকেন্দ্রগুলো ইতোমধ্যে পরিদর্শন করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ভোটের মাঠের পরিবেশ এখনো প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

এমন ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে নগরবাসীকে একটি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দেওয়া যাবে। কুমিল্লা পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান জানান, ভোটের দিন প্রতি কেন্দ্রে ৫ জন করে অস্ত্রধারী পুলিশ, অস্ত্রধারী ২ জনসহ ১২ জন আনসার নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় করে ২৭টি ওয়ার্ডে পুলিশের ২৭টি মোবাইল টিম, ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে একটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্সের টিম থাকবে এবং রিজার্ভ হিসেবে থাকবে ২টি স্ট্রাইকিং ফোর্সের টিম।

সবকিছু মিলিয়ে শুক্রবার থেকে শনিবার নির্বাচন পর্যন্ত নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা হবে পুরো সিটি এলাকাকে। এছাড়া একই সময় থেকে ভোটের দিন পর্যন্ত নগরীতে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার দিনশেষে মধ্যরাত থেকে বন্ধ হয়েছে প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক গণসংযোগ, পথসভা, উঠান বৈঠক ও সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা। শেষ মুহূর্তে এসে ভোটের মাঠে চলছে টানটান উত্তেজনা, চলছে বাগ্যুদ্ধও। বিশেষ করে মেয়র পদে হেভিওয়েট দুই প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণা ছিল তুঙ্গে।

নির্বাচনের বৈতরণী পার হতে নানান কৌশলে গণমাধ্যমেও একে অপরের সমালোচনায় তারা ছিলেন বেশ সরব, হয়েছে মামলা-হামলা, পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনও। টানটান উত্তেজনার মধ্যে দুই হেভিওয়েট প্রার্থী নগর আওয়ামী লীগ সমর্থিত বাস প্রতীকের ডা. তাহসিন বাহার সূচনা ও বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা ও সাবেক মেয়র টেবিল ঘড়ি প্রতীকের মনিরুল হক সাক্কুসহ তাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে জয়-পরাজয়ের সংশয়-শঙ্কা।

এছাড়াও মাঠে সরব আছেন স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে বহিষ্কৃত নেতা ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার ও মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য হাতি প্রতীকের প্রার্থী নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম। 
শেষ সময়ে প্রার্থীদের গণসংযোগ-প্রচারণা ॥ বাস প্রতীকের প্রার্থী ডা. তাহসিন বাহার সূচনা নগরীর স্টেডিয়াম মার্কেট, সাত্তার খান কমপ্লেক্স, সোনালি স্কয়ার, রাজগঞ্জ বাজার, চান্দি কালিবাড়ি, বাতাশাপট্টি, চকবাজার, পাথুরিয়াপাড়া, দুর্গাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক করেন।

এ প্রার্থীর পক্ষে বাংলাদেশ ইয়ুথ ক্যাডেট ফোরামের চেয়ারম্যান শাহ মুজিবুল হক ৩৭টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে এক করে সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জোট গঠন করেন। তিনি তাদেরকে নিয়ে নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডকে ভাগ করে ৪৮০ জন সদস্য নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণাসহ ভলন্টিয়ার হিসেবে কাজ করছেন। মেয়র পদে টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী মো. মনিরুল হক বৃহস্পতিবার তার নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা দেন। 

এছাড়াও সাক্কু ও তার স্ত্রী পৃথকভাবে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ, পথসভা ও উঠান বৈঠক করেন। ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার তার কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নগরীর বাদুরতলা, কান্দিরপাড়, রাজগঞ্জ, চকবাজার, কালিয়াজুড়িসহ বিভিন্ন ওয়ার্ড এলাকায় গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক করেন। হাতি প্রতীকের প্রার্থী নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড এলাকায় গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক করেন। বৃহস্পতিবার শেষ দিনের প্রচারকালে প্রার্থীদের সবাই জয়ের আশাবাদ ব্যক্ত করে ভোটারদের কাছে ভোট চান এবং শনিবার ভোট দিয়ে তাদের নির্বাচিত করার আহ্বান জানান।

×