ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

বোরো ধান রোপণে ব্যস্ত কৃষক

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী

প্রকাশিত: ২২:৩০, ২৩ জানুয়ারি ২০২৪

বোরো ধান রোপণে ব্যস্ত কৃষক

শীত উপেক্ষা করে লাঙ্গল দিয়ে বোরোর জমি তৈরি করছেন বৃদ্ধ কৃষক

মাঘ মাসের  ঘন কুয়াশা ও কনকনে ঠান্ডা বাতাসের দাপটের হাড়কাঁপানো শীতে জনজীবনে  স্থবিরতা দেখা দিলেও যারা মাঠে ফসল ফলায় সেই কৃষকের যেন স্থবিরতা নেই। শীত উপেক্ষা করে ঘর থেকে বেরিয়ে সেই সাতসকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কৃষক কাদামাঠে নেমে সেচনির্ভর বোরো ধানের জমি তৈরি ও চারা রোপণ করে চলেছে। 
 সোমবার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র মতে, এ বছর জেলার ৬ উপজেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮১ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমিতে। 
হাড়কাঁপানো শীত চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকের কাছে রীতিমত হার মেনেছে। জেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায় কৃষক জমি তৈরি করছে, কেউ হাল বা মই দিচ্ছে । কেউবা  বোরো ধানের চারা লাগাচ্ছে। কৃষক লুৎফর বলেন, ‘শীতের ভয়ে হামরলার বসি থাকির চলে না বাহে। ধান আবাদ না করিলে হামরা চলিমো কেমনে।

শীত ঠাণ্ডাকে  ভয় পাইলে চলিবে না।’ হারোয়া এলাকার কৃষক আতিয়ার রহমান জানান, রাতে টিনের চালে টুপটাপ শব্দে বৃষ্টির মতো ঝড়ে কুয়াশা। সকাল পেরিয়ে দুপুর হয়ে গেলেও কুয়াশাচ্ছন্ন থেকে যায় চারপাশ। তবে কুয়াশা বা শীত আমাদের দমিয়ে রাখতে পারে না। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন না হলে  মাঠের পর মাঠ হয়ে যাবে বোরোর সবুজ ধান খেত। আর তারপরই সোনার ফসলে শুরু হবে হাসির ঝিলিক।
এদিকে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র মতে, দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে জেলার ডিমলা উপজেলায় ৪ হাজার হেক্টর, জলঢাকা উপজেলায় ৮ হাজার হেক্টর, নীলফামারী সদরে ৭ হাজার হেক্টর, কিশোরীগঞ্জ উপজেলায় ১০ হাজার হেক্টর ও সৈয়দপুর উপজেলায় ১ হাজার হেক্টরসহ ৩০ হাজার হেক্টর জমি বোরো আবাদের জন্য সেচ পাচ্ছে। 
অপরদিকে বরেন্দ্র বহুমুখী সূত্র জানায়, তাদের গভীর নলকূপের  মাধ্যমে সেচ পাচ্ছে জেলা সদরে ৩ হাজার ১৬৭ হেক্টর, জলঢাকায় ১ হাজার ৭৯৫ হেক্টর, কিশোরীগঞ্জে ১ হাজার ৬৪৩ হেক্টর, সৈয়দপুরে ৩ হাজার ৯৫ হেক্টর, ডোমারে ৩ হাজার ৯৫৮ হেক্টর ও ডিমলা উপজেলায় ১ হাজার ৫৯০ হেক্টরসহ ১৫ হাজার ২৪৮ হেক্টর জমি। নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. এসএম আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, বোরো আবাদে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষককে সার্বিক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ঘন কুয়াশায় বীজতলার খুব একটা সমস্যা হয়নি।

খুলনায় ঘন কুয়াশায় বীজতলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক
স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস থেকে জানান, প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে খুলনায় শুরু হয়েছে বোরো ধানের আবাদ। তবে কয়েকদিন ধরে চলা তীব্র শীতের সঙ্গে ঘন কুয়াশা এবং গেল সপ্তাহে বৃষ্টির কারণে বীজতলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষক। অনেক বীজতলা হলুদ ও লাল বর্ণের হয়ে গোড়া পচে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে চারা সংকটের সঙ্গে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষি। তবে বীজতলা রক্ষায় কৃষকের সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি কৃষি অফিসের।
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রমতে, রবি মৌসুমে বোরো ধানের আবাদে খুলনায় বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন হাজার ৩৩৫ হেক্টর জমিতে। অর্জিত হয়েছে চার হাজার নয় হেক্টর জমিতে। এরই সঙ্গে জেলায় ৬৪ হাজার ১০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রাও ঠিক করা হয়েছে। 
বটিয়াঘাটা উপজেলার জলমা এলাকার কৃষক তারাপদ কবিরাজ বলেন, বীজতলা মরে যাচ্ছে। অন্যান্য বছর এমনটি দেখা যায় না। কোনো কোনো খেতে আবার হলুদ ও লাল বর্ণের হয়ে গোড়া পচে যাচ্ছে। কি ওষুধ দিয়ে এই রোগ ভালো হবে তার কোনো কূলকিনারা পাচ্ছি না। আমার আশপাশের অন্যের বীজতলারও একই অবস্থা। ডুমুরিয়ার গুটুদিয়া গ্রামের কৃষক মোবারক তালুকদার বলেন, বীজতলায় ওষুধপত্র দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। এই ঘন কুয়াশার কারণে দুইদিন পরপর ওষুধ দিয়েও গাছ মরা ঠেকানো যাচ্ছে না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বোরো বীজতলায় কিছুটা সমস্যা হয়। সে জন্য তাদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যেমন বেশি শীত পড়লে বীজতলা স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে, অথবা রশি দিয়ে শিশির ঝেড়ে ফেলতে হবে; সন্ধ্যায় পানি দিয়ে আবার সকালে বের করে দিতে হবে; ম্যানকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক স্প্রে লিটারে দুই গ্রাম মিশিয়ে দুই থেকে তিনবার দিতে হবে। 

ধান রোপণ করে দিলেন গ্রামবাসী
সংবাদদাতা, নালিতাবাড়ী, শেরপুর থেকে জানান, নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের দরিদ্র-অসহায় আসাদ নামে এক প্রান্তীক চাষির বেদখল করতে চাওয়া জমিতে গ্রামবাসী মিলে চলতি আবাদের বোরো ধান লাগিয়ে দিয়েছেন। একইসঙ্গে এর প্রতিবাদে তারা অসহায় আসাদের পক্ষে মাইকিং করে স্থানীয় আমবাগান বাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সোমবার সকালে উপজেলার বাতকুচি বালাপাড়া গ্রামের ফসলি মাঠের ওই জমিতে ধানের চারা রোপণ করেন তারা।

গ্রামবাসী জানান, গত শনিবার বশর হাজী তার লোকজন নিয়ে আসাদের বোরো ধান লাগানো খেতে ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করে নতুন করে লাগাতে যান। এতে দুই পক্ষের মাঝে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় আসাদ, নুর ইসলাম, লাল মিয়া, সুলতান ও আসাদের স্ত্রী হাফেজা বেগমকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে বশর হাজীর লোকজন। 
এলাকাবাসী তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।  এদিকে, এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী সোমবার সকালে মাইকিং করে একত্রিত হয়ে বাতকুচি ও আমবাগান বাজারের পার্শ্ববর্তী এলাকার ২ সহ¯্রাধিক নারী-পুরুষের উপস্থিততে অসহায় আসাদের বেদখল করতে চাওয়া ৫০ শতাংশ জমিতে নতুন করে চাষ করে বোরোধান লাগিয়ে দেন। একইসঙ্গে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানান ও বিক্ষোভ করেন।

×