ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

চুয়াডাঙ্গা জেলা

নৌকার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই

রাজীব হাসান কচি, চুয়াডাঙ্গা

প্রকাশিত: ০০:২২, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩

নৌকার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই

শীতের আমেজ রাজনীতিতেও টের পাওয়া যাচ্ছে

শীতের আমেজ রাজনীতিতেও টের পাওয়া যাচ্ছে। কিছুদিন পরই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। একদিকে শীতের আমেজ, অন্যদিকে নির্বাচনের উত্তেজনা- এ দুই মিলে চুয়াডাঙ্গাবাসীর কাছে দিনগুলো হয়ে উঠেছে অন্যরকম।
‘ভাই, দুধ-চিনি বাড়িয়ে এক কাপ চা। টিভিতে খবরের চ্যানেল ধরেন। নির্বাচনের খোঁজখবর দেখি। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দিয়ে আবার বলেছে স্বতন্ত্র হয়েও নির্বাচন করা যাবে। মনে হচ্ছে, এবার নির্বাচন জমবে।’ শুক্রবার সন্ধ্যায় হাতিকাটা মোড়ে ‘চায়ের হাট’ দোকানে হাজির হয়ে কথাগুলো বলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সিরাজুল হোসেন। এরপর সেখানে আগে থেকে উপস্থিত তার অন্য বন্ধুদের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় মেতে ওঠেন তিনি।

সিরাজুলের মতো বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অবসর সময়টায় চায়ের দোকানের আড্ডায় হাজির হয়ে নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠছেন। ভোটে কার জনপ্রিয়তা কেমন, তা যাচাই করতে সহজ একটি উপায়Ñ চায়ের দোকানে হাজির হওয়া। কারণ সব পেশার মানুষ বসেন চায়ের দোকানে। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে মেলান ভোটের নানা হিসাব-নিকাশ।
পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকানের পাশাপাশি গণপরিবহনের যাত্রীদের মধ্যেও চলে নির্বাচনী হিসাব-নিকাশ। কোন দলের কোন প্রার্থী আসন্ন নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারেন, কিংবা কোন দল হতে পারে বিরোধী দল, কে কত সিট পাবে, এমন আলোচনা আর বিশ্লেষণে মুখরিত চায়ের দোকান।
দেশ স্বাধীনের পর চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে ১১টি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ চারবার, বিএনপি পাঁচবার, স্বতন্ত্র একবার এবং জাসদ (রব) সমর্থিত প্রার্থী একবার সংসদ সদস্য বিজয়ী হয়েছেন। চুয়াডাঙ্গা-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগ চারবার, বিএনপি চারবার এবং জাসদ (শাহজাহান সিরাজ), জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর সমর্থিত প্রার্থী একবার করে বিজয়ী হয়েছেন। একসময় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমানে সমান বলে পরিচিতি পেলেও বর্তমানে আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দুটি আসনে বৈধ প্রার্থী হয়েছেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে আওয়ামী লীগের সোলায়মান হক জোয়ার্দার ছেলুন, জাতীয় পার্টির (জাপা) সোহরাব হোসেন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ইদ্রিস চৌধুরী ও জাকের পার্টির মোহাম্মদ সালাম উদ্দিন। চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে আওয়ামী লীগের আলী আজগার, জাপার রবিউল ইসলাম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ইদ্রিস চৌধুরী, জাসদ (ইনু) দেওয়ান মো. ইয়াছিন উল্লাহ ও জাকের পার্টির আব্দুল লতিফ খান।
এবারের নির্বাচনে বিএনপি ও তাদের মিত্ররা ভোটে না আসার সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতার আমেজ ধরে রাখতে নির্বাচনে কৌশলী অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগ।

ইতোমধ্যে দলটি প্রতিটি আসনে ডামি প্রার্থী রাখার বিষয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছে। দলের হাইকমান্ডের এমন অবস্থানের কারণে এবার ভোটের মাঠ ছাড়তে নারাজ মনোনয়ন বঞ্চিতরা। তারা স্বতন্ত্র লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে দীর্ঘদিন এলাকায় আধিপত্য ধরে রাখা এমপিদের বিরুদ্ধে লড়ার কথা জানিয়েছেন অনেক প্রার্থী। এরমধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে আওয়ামী লীগের দিলীপ কুমার আগরওয়ালা ও এমএ রাজ্জাক খান। সরাসরি স্বতন্ত্র হিসেবে লড়ছেন এম শহিদুর রহমান। অপরদিকে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে আওয়ামী লীগের মো. আবু হাশেম রেজা ও নূর হাকিম। ফলে প্রধান প্রতিপক্ষ মাঠে না থাকায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এবার নৌকার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ঘরের প্রার্থীরাই। এসব স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন দলীয় প্রার্থীরা।
শহরতলীর দৌলাতদিয়ার ‘সুমন টি স্টোর’ মালিক সুমন বলেন, কয়টা দিন আমাদের দোকান বেশ জমজমাট থাকবে। যদিও মাঝেমধ্যে আমরা বলি, নির্বাচনী আলোচনা করবেন না। কিন্তু কে শোনে কার কথা! নির্বাচন নিয়েই এখন সবার আগ্রহ।
ওই দোকানে আসা রিক্সাচালক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে আমগো চিন্তা নাই। যেই আসুক, আমগো কথা একটাই, জিনিসপত্রের দাম কমাইয়া দিবেন। চাইরডা খাইয়া-পইরা বাঁচতে চাই।’
একইভাবে দিনমজুর মিয়াজান বলেন, ‘নির্বাচন দিয়া কী অইবো! আমগো অবস্থার তো পরিবর্তন নাই। তয় এবার আওয়ামী লীগ মাঠে থাকলেও বিএনপি নাই। আবারও যদি ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন অয়, ভালো হইব না।’
অন্য পাশ থেকে হাসিব নামে এক যুবক বলেন, ‘আরে না, এবার নির্বাচন ভালো হইব। আওয়ামী লীগ বলছে, কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে সমস্যা নাই। নির্বাচন জমবে। অনেক স্বতন্ত্র প্রার্থীও বিজয়ী হবে।’
একদিকে পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকানে নির্বাচন নিয়ে সাধারণ ভোটারদের তর্ক-বিতর্ক, অন্যদিকে চা দোকানির চা বিক্রি নিয়ে ব্যস্ততা, শীত আমেজে বিকেলের পরিবেশকেই পাল্টে দিচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষ দুই লাখ ৪১ হাজার ৩৮৭ জন, মহিলা দুই লাখ ৪২ হাজার ৫৮৯ জন। চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে পুরুষ ভোটার দুই লাখ ৩৪ হাজার ৪০২ এবং মহিলা দুই লাখ ১৬ হাজার ১২ জন।

×