ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রেমিক সৈকত ৪ দিনের রিমান্ডে

প্রকাশিত: ১০:১৭, ৯ ডিসেম্বর ২০১৯

প্রেমিক সৈকত ৪ দিনের রিমান্ডে

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ রুবাইয়াত শারমিন রুম্পার (২১) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের ইতি টানতে চেয়েছিলেন তার প্রেমিক আব্দুর রহমান সৈকত। এরই বিরোধের জের ধরে সৈকত তার সহযোগীদের নিয়ে রুম্পাকে সিদ্ধেশ্বরীর সেই ভবনের ছাদ নিয়ে যান। একপর্যায়ে তাকে সেখান থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন তারা। এই হত্যাকা-ের ঘটনায় গ্রেফতার সৈকতকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এমন সন্দেহ হচ্ছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের। রবিবার গ্রেফতার সৈকতকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ওই ভবনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ঘটনার দিন রাতে ওই ভবনে ঢুকতে দেখা গেছে, রুম্পা ও তার প্রেমিক সৈকতকে। এমনকি রুম্পার এক বান্ধবীর সঙ্গে সৈকতের কথোপকথনের যে অডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়েছে তাতেও স্পষ্ট ঘটনার দিনও রুম্পার সঙ্গে সৈকতের দেখা হয়েছিল। ঘটনার সাড়ে তিন ঘণ্টা আগে সিদ্ধেশ্বরী বিশ্ববিদ্যালয়ে অদূরে সৈকতকে দেখা গেছে। এরপরই ডিবি পুলিশের সন্দেহের তীর ছিল সৈকতের দিকে। এরপরই তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় আরও একজনকে আটক করা হয়েছে বলে সূত্রগুলো জানায়। রবিবার সকালে রুম্পা হত্যার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক শাহ মোঃ আখতারুজ্জামান ইলিয়াস গ্রেফতারকৃত সৈকতকে ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (সিএমএম) আদালতে হাজির করে সাতদিন রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করেন। ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পরিদর্শক শাহ আখতারুজ্জামান আদালতকে জানান, রুম্পা ও সৈকতের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু দিন দিন তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ৪ ডিসেম্বর বিকেলে তারা স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বাইরে দেখা করেন। তখন কোন যৌক্তিক কারণ ছাড়াই সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা বলেন সৈকত। রুম্পা বার বার অনুরোধ করলেও সৈকত সম্পর্ক রাখতে রাজি হচ্ছিলেন না। এ নিয়ে দু’জনের মনোমালিন্য ও বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। এর জের ধরে ওইদিন রাত পৌনে ১১টায় সৈকত তার কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে রুম্পাকে ৬৪/৪ সিদ্ধেশ্বরীর বাড়িটির ছাদে নিয়ে যান। একপর্যায়ে রুম্পাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেন। এটাই প্রাথমিকভাবে জোর সন্দেহ করা হচ্ছে। এ কারণে তাকে রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করা হচ্ছে। শুনানি শেষে মহানগর হাকিম মামুনুর রশীদ চারদিন হেফাজতের নির্দেশ দেন। সৈকতের পক্ষে তার আইনজীবী আবদুল হামিদ ভূইয়া রিমান্ড বাতিলের আবেদন করলেও তা নাকচ করে দেন বিচারক। শুনানিতে তিনি জানান, এক সপ্তাহ আগেই আসামির সৈকতের বাবা মারা গেছে। তারও সপ্তাহ খানেক আগে তার চাচা মারা যান। ঘটনার পর ডিবি পুলিশ ফোন করে ডাকলে সৈকত সেখানে উপস্থিত হয়। সে সাদা মন নিয়ে ডিবি অফিসে যায়। সদ্য বাবা হারানো একটা ছেলের পক্ষে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটানোর মতো মানসিক অবস্থা থাকাটা অস্বাভাবিক। তাছাড়া এই মেয়ের যন্ত্রণায়ই সম্প্রতি সে স্ট্যামফোর্ড ছেড়ে পড়াশোনার জন্য অন্যত্র ভর্তি হয়। জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন খান জানান, যেহেতু আসামি পক্ষের আইনজীবী নিজেই স্বীকার করছেন মেয়ের যন্ত্রণায় ওই মেয়ে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েছে। সুতরাং তার সঙ্গে মেয়ের সম্পর্কের বিষয়টি প্রমাণিত। তাই তাকে মোবাইল ফোনের কল রেকর্ড পরীক্ষাসহ প্রাপ্ত আলামত যাচাই-বাছাই করতে তাকে রিমান্ডে নেয়া জরুরী। রুম্পার খুনীদের দ্রুত বিচার করুন- ভিপি নূর ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নূর জানান, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ছাত্রী রুবাইয়াত শারমিন রুম্পা হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করে দ্রুত খুনীদের বিচার করুন। শনিবার বিকেলে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এই দাবি জানান। ভিপি নূর জানান, আপনারা জানেন, রুম্পা একজন ছাত্রী যে একজন পুলিশ অফিসারের মেয়ে, তাকে সম্ভবত ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। আমরা রাষ্ট্রের কাছে বলতে চাই, ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে হত্যা করেছে নাকি অন্যভাবে হত্যা করা হয়েছে, সে রহস্য উন্মোচন করতে হবে। রুম্পার সহপাঠী শাহেদা জান্নাত বলেন, রুম্পা আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন। আজ এখানে তার হত্যার বিচারের জন্য দাঁড়াতে হবে কখনও ভাবিনি। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এই হত্যার সুষ্ঠু বিচার হোক। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক বিন ইয়ামিন মোল্লার সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন যুগ্ম-আহ্বায়ক ফারুক হাসান, রাশেদ খান প্রমুখ।
×