ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল ॥ স্টেডিয়ামে দর্শক ঢল, টিকেট কালোবাজারি

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল ॥ স্টেডিয়ামে দর্শক ঢল, টিকেট কালোবাজারি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দৃশ্যপট-১ : ৮ ফেব্রুয়ারি, রবিবার। দুপুর সোয়া দুইটা। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম চত্বর। জায়গায় জায়গায় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পজিশন নিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর বিভিন্ন সদস্যরা। তাদের মধ্যে আছে পুলিশ, র‌্যাব, সেনাবাহিনী, বিজিবি, ডিবি, এসএসএফ এবং গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা। এদের দেখলেই মনে হয় একটা যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব। মেরুদ-ের শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে যায় এদের দেখে। কিন্তু আশ্চর্য- আশপাশের মানুষরা তাদের দেখে মোটেও ভয় পাচ্ছে না। বরং তাদের ভেতর একটা উৎসব উৎসব ভাব! আচ্ছা, এত বাহিনীর লোক সব একসঙ্গে কেন? উত্তর হচ্ছেÑ আজ যে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উপলক্ষ্য? আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ’-এর ফাইনাল খেলা দেখা এবং বিজয়ী ও বিজিত দলকে পুরস্কৃত করা। এ জন্যই চারদিকে এত নিরাপত্তার বহর। চোখে পড়ল টিকেট ব্ল্যাকারদের আনাগোনা। তবে খুব বেশি টিকেট বিক্রি হচ্ছে না। দৃশ্যপট-২ : বেলা আড়াইটা। একই স্থান। খেলা দেখতে আসা ফুটবল দর্শক সংখ্যা বেড়েছে পঙ্গপালের মতো। তাদের ভিড়ের কারণে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের চোখেই পড়ছে না। তবে তারা ঠিকই আছেন। এত ভিড়, হট্টগোল, তারপরও কোথাও কোন বিশৃঙ্খলা নেই। যাদের হাতে ‘সোনার হরিণ’ টিকেট আছে, তারা ইতোমধ্যেই দাঁড়িয়ে পড়েছেন লাইনে। ৫০ বছরের পুরনো বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের ৫, ৬, ৮, ১২, ১৩, ১৪, ১৮, ১৯ ও ২০ নম্বর গেটের সামনে পরিলক্ষিত হলো এই দীর্ঘ লাইন। দৃশ্যপট-৩ : বেলা সোয়া চারটা। নিরাপত্তা বাহিনীর লোকদের ব্যস্ততা বেড়ে গেছে দ্বিগুণ। দর্শকদের ভিড় এখন রূপ নিয়ে বিশাল জনসমুদ্রে। এদের কাউকেই টাকা দিয়ে ভাড়া করে আনতে হয়নি। নিজেরাই এসেছেন ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে দূর-দূরান্ত থেকে। ফুটবলকে ভালবাসেন। ভালবাসেন বাংলাদেশকে। তাই ছুটে এসেছেন এখানে। বিপুল এই দর্শক সমাগমের কারণে বিভিন্ন ফেরিওয়ালাদের হয়েছে পোয়াবারো! বিক্রি হচ্ছে ‘সাবাস বাংলাদেশ’ লেখা সংবলিত হ্যান্ডব্যান্ড, বিভিন্ন আকারের জাতীয় পতাকা, জাতীয় পতাকার রংয়ের বিশেষ টুপি, ভুভুজেলা। এছাড়া ১০ টাকা খরচ করলেই একদল তরুণ চিত্রকর দর্শকের হাতে বা গালে এঁকে দিচ্ছে পতাকার ছবি। এবার সক্রিয় দেখা গেল টিকেট ব্ল্যাকারদের। ৮০ টাকার টিকেট বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায় তা কিনতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই ফুটবলপ্রেমীদের! দৃশ্যপট-৪ : ফেসবুক ভিত্তিক ফুটবল সংগঠন ‘ফুটবল ফ্রিক’। তাদের সদস্যসংখ্যা ৩৮ হাজারেরও বেশি! এদেরই একজন আহমেদ জামিল। সে এসেছে ফেনী থেকে। পড়ে সেখানকারই একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনার্স প্রথম বর্ষে। কথা হয় তার সঙ্গে। টুর্নামেন্ট শুরুর পরদিনই, ৩০ জানুয়ারি পাঁচ বন্ধুর সঙ্গে ফেনী থেকে ট্রেনে চড়ে ঢাকা এসেছে। উঠেছে ঢাকায় তার এক বন্ধুর বাসায়। এ প্রসঙ্গে তার ভাষ্য, ‘ট্রেনে পেট্রোল বোমা হামলার তেমন ভয় না থাকলেও ট্রেন লাইনের ফিশপ্লেট তুলে ফেললে ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা ঠিকই থাকে। এ কারণেই পরিবারের সবাই আমাকে এই হারতাল-অবরোধের মধ্যে ঢাকা আসতে মানা করেছিল। তাদের ম্যানেজ করতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে আমার।’ ট্রেনে নিরাপদে ঢাকা আসলেও তা মোটেও আরামদায়ক ছিল না বলে জানায় জামিল, ‘ট্রেন অনেক লেট করেছে। প্রচ- ভিড়ও ছিল। খুব কষ্ট হয়েছে!’ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত প্রতিটি ম্যাচই দেখেছে সে। জামিল জানায়, বাংলাদেশ দলের সুদিনে-দুর্দিনে ছিলাম, আছি, থাকব। লাল-সবুজ বাহিনীকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে যাব। আমাদের স্বপ্নÑ বাংলাদেশ একসময় ফিফা বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলবে। ২০২২ সালে না হোক, ২০২৬ সালে খেলবে।’ কিভাবে সেটা সম্ভব? ‘নিয়মিত লীগ ফুটবল হতে হবে। স্কুল ফুটবল, বয়সভিত্তিক ফুটবল, জেলা ফুটবল নিয়মিত আয়োজন করতে হতে। ফুটবল একাডেমির কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। লীগে বিদেশী খেলোয়াড়দের সংখ্যা অবশ্যই কমাতে হবে। তাহলেই সম্ভব উন্নতি করা।’
×