অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চলতি বছরের শেষ সপ্তাহের প্রথম কার্র্যদিবসে পুুঁজিবাজারে মূল্য সূচক ও লেনদেনের নেতিবাচক প্রবণতা দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। বেশিরভাগ কোম্পানির দর কমার কারণে সেখানে সব ধরনের সূচকই ছিল নিম্নমুখী। নতুন সফটওয়ার চালুর পর থেকেই নেতিবাচক প্রবণতা শুরুর পর তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ডিসেম্বর ক্লোজিংয়ের কারণে বাজারে কিছুটা প্রভাব পড়ছে বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। তাদের মতে, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বীমা কোম্পানিগুলোর ক্লোজিংয়ের প্রভাব বাজারে পড়েছে বেশি।
বাজার পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, বিগত ১০ কার্যদিবসে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) টাকার অঙ্কে লেনদেন ২০০ কোটি টাকার ঘরে নেমেছে। এর আগে গড়ে ৪০০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল ডিএসইতে। এ ছাড়া মূল্যসূচক বাড়ার চেয়ে কমছে তুলনামূলক বেশি।
সকালে সূচকের নেতিবাচক প্রবণতা শুরুর পর রবিবার ডিএসইর সার্বিক সূচকটি আগের কার্যদিবসের চেয়ে ২২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৪ হাজার ৮০১ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩০৫টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৮২টির, কমেছে ১৯০টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৩টি কোম্পানির শেয়ার দর। সেখানে মোট লেনদেন হয়েছে ১৫৬ কোটি ৭৪ লাখ ৪১ হাজার টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট। এর আগে বুধবারে ডিএসইর সার্বিক সূচকটির অবস্থান ছিল ৪ হাজার ৮২৩ পয়েন্টে। ওইদিন লেনদেন হয় ১৯১ কোটি ৭৫ লাখ ৬৬ হাজার টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট। সেই হিসেবে রবিবার ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ৩৫ কোটি ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা বা ১৮.২৫ শতাংশ।
রবিবার ডিএসইর টপ-২০ তালিকায় থাকা কোম্পানিগুলোর মোট ৭০ কোটি ৯১ লাখ ৭৮ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা ডিএসইর মোট লেনদেনের ৪৫.২৪ শতাংশ। এ দিন ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি শেয়ার লেনদেন হয়েছে লাফার্জ সুরমা সিমেন্টের। দিনভর এ কোম্পানির ৭ লাখ ১৭ হাজার ৬৭৬টি শেয়ার ৮ কোটি ৬৮ লাখ ১৪ হাজার টাকায় লেনদেন হয়েছে, যা ডিএসইর মোট লেনদেনের ৫.৫৩ শতাংশ। এছাড়া এমজেএল বিডির ৬ কোটি ৮৮ লাখ, স্কয়ার ফার্মার ৫ কোটি ৯২ লাখ, সামিট এলায়েন্স পোর্টের ৪ কোটি ৮১ লাখ, ডেসকোর ৪ কোটি ৬৩ লাখ, তিতাস গ্যাসের ৪ কোটি ৩৬ লাখ, গ্রামীণফোনের ৪ কোটি ৩৬ লাখ, বেক্সিমকো ফার্মার ৩ কোটি ৮০ লাখ, সাইফ পাওয়ারটেকের ৩ কোটি ৭০ লাখ এবং বিডি থাইয়ের ২ কোটি ৯৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিসেম্বর মাসে গত কয়েক বছরের মতোই বাজারে ধীরগতি বিরাজ করে। কারণ এ সময় প্রাতিষ্ঠানিক ও বড় পুঁজির বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগ পরিকল্পনা নির্ধারণ করছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর নানা বিচার বিশ্লেষণের প্রভাব পড়েছে বাজারে। ফলে আগের তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা কমেছে। একইভাবে কমেছে বিক্রেতার সংখ্যাও।
ডিএসইর দরবৃদ্ধির সেরা কোম্পানিগুলো হলোÑ ফাস্ট বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকাম ফান্ড, ৭ম আইসিবি মিউচুয়াল ফান্ড, ইবিএল এনআরবি, বিডি থাই, স্যান্ডার্ড সিরামিক, প্রাইম লাইফ, সামিট এলায়েন্স পোর্ট লিমিটেড, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, তাকাফুল ইন্স্যুরেন্স ও এআইবিএল ১ম মিউচুয়াল ফান্ড।
দরপতনের সেরা কোম্পানিগুলো হলোÑ শ্যামপুর সুগার, সাভার রিফ্যাক্টরিজ, স্টাইল ক্রাফট, মেঘনা পেট, মেঘনা কনডেন্স মিল্ক, নদার্ন জুটস, শাহজিবাজার পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড, বেক্সিমকো সিনথেটিকস, সাইফ পাওয়ার টেক ও প্রাইম টেক্সটাইল।
দিনশেষে অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক ৭৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৮ হাজার ৯৪৫ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২৩৮টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৪২টির, কমেছে ১৬৫টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩১টি কোম্পানির। লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ৬৪ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট। আগের কার্যদিবসে সিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ৮৬ কোটি ১৯ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচুয়ার ফান্ডের ইউনিট। সে হিসাবে রবিবার সিএসইতে লেনদেন কমেছে ৭৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বা ৮৫.৩২ শতাংশ।
সিএসইর লেনদেনের সেরা কোম্পানিগুলো হলোÑ লাফাজ সুরমা সিমেন্ট, বেক্সিমকো, মবিল যমুনা বিডি, সামিট এলায়েন্স পোর্ট, ডেসকো, সাইফ পাওয়ার, গ্রামীণফোন, হামিদ ফেব্রিক্স, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড ও স্কয়ার ফার্মা।