করোনাভাইরাসের দুঃসহ সংক্রমণে সরকার ছুটি ঘোষণা দেয় ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। তার আগে ৪ এপ্রিল এই ছুটির মেয়াদ থাকলেও পরবর্তীতে তা ক্রমান্বয়ে বাড়ানো হয়। দ্বিতীয় নির্দেশনায় বলা হয় ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারী ছুটি থাকবে। শেষ অবধি তা ১৪ এপ্রিল অর্থাৎ ১ বৈশাখ পর্যন্ত বলবৎ হয়। সরকার ছুটি ঘোষণা দিলেও মানুষ ঘরে বসে থাকেনি। বিশেষ করে ঢাকায় কর্মজীবী মানুষের উপচে পড়া ভিড়কে মোকাবেলা করে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয়। এ পর্যন্ত মোটামুটি সহনীয় থাকলেও গণপরিবহনে ভিড়কে সামলে ঢাকা থেকে বের হওয়া কোনভাবেই স্বাস্থ্যসম্মত ছিল না। পরবর্তীতে অসংখ্য পোশাক শিল্প শ্রমিক তাদের কারখানা খোলা থাকার নির্দেশ পেলে আবার ঢাকায় ফিরে আসতেও শুরু করে। সেখানেও দৃশ্যমান হয় কি অসহনীয় যাত্রাপথকে সম্মুখ সমরে লড়াই করার মতো দুর্দশায় পড়তে হয় এসব শ্রমজীবীকে। বকেয়া বেতন এবং চাকরি হারানোর ভয়ে তাদের এমন দুঃসহ পরিণতি বোঝাই যায়। পরবর্তীতে কারখানা মালিক সমিতি ছুটির ব্যাপারে শেষ অবধি সরকারী কার্যক্রমকেই আমলে নেয়। কিন্তু যা ঘটার তা তো ঘটেই গেল। অর্থাৎ, একবার ঢাকা থেকে যাওয়া পুনরায় ফিরে আসা করোনা সংক্রমণের মারাত্মক ঝুঁকিকে তোয়াক্কা করা হয়নি। এমন বিপত্তির মুখে সরকার পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, ঢাকা থেকে আসা-যাওয়া কোনটাই চলবে না। ফলে ঢাকা শহর এখন দেশের অন্যান্য জেলা থেকে অবরোধের কঠিন বেড়াজালে। এ ছাড়া রাজধানীতে গাড়ি চলাচল এবং সাধারণ মানুষের রাস্তায় বের হয়ে আসা কোনটাই বর্তমান পরিস্থিতিতে অনুকূল নয়। ছুটি দেয়া হয়েছে ঘরে বসে সবাইকে নিরাপদে থাকার জন্য। কিন্তু তেমন নির্দেশনা উপেক্ষা করে সড়কে গাড়ি বের করা এবং মানুষের চলাফেরা, চায়ের দোকানে বসে আড্ডা সবই যেন প্রায় স্বাভাবিক পর্যায়। কিন্তু গোটা বিশ্বসহ বাংলাদেশও এক অস্বাভাবিক মরণ ছোবলে আক্রান্ত, দিশেহারা। ফলে রাষ্ট্রই সর্বোত্তম পদক্ষেপ নিয়ে মানুষের চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কর্মজীবন থেকে ছুটি দিয়ে ঘরে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। কিন্তু মানুষের মধ্যে যদি কোন ধরনের যুক্তি, বুদ্ধি কাজ না করে তাহলে একা সরকারের পক্ষে পুরো ঝক্কি-ঝামেলা সামলানো কঠিন হয়ে পড়বে। ততদিনে করোনা ও তার স্বভাবসুলভ সংক্রমণে মানুষের মধ্যে সর্বগ্রাসী আক্রমণ ছড়াতে সময় নেবে না। সুতরাং আরও কঠিন পদক্ষেপে রাজধানী ও অন্যান্য জেলার ওপরও নিষেধাজ্ঞার নির্মম বেড়াজালে আবদ্ধ হওয়া ছাড়া বিকল্প কোন পথ খোলা নেই। ইতোমধ্যে এই আক্রমণাত্মক ভাইরাসটির সংক্রমণ প্রতিদিন বেড়ে যাওয়ার পথে। সম্প্রসারিত এই মরণ ঘাতকের বহুল বিস্তার রোধ করাই এই মুহূর্তে সব থেকে জরুরী। ফলে সামাজিক দূরত্বের নিশ্চয়তা দিতে ঢাকাকে মুড়ে ফেলা হয়েছে অবরোধের অচল বেষ্টনীতে। সামাজিক দূরত্বকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী পুলিশের সঙ্গে সেনাবাহিনীও সড়কে টহল দিচ্ছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাই শুধু নয়, ব্যক্তিক সচেতনতাও অতি প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। সেটাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিতে হবে সবাইকে। জরুরী প্রয়োজন ব্যতিরেকে কেউ যেন ঘর থেকে বাইরে পা না রাখে। এমন নিশ্চয়তা আর নিরাপত্তা তৈরি করা সব মানুষের নৈতিক ও সচেতন দায়বদ্ধতা। মানুষকে ঘরে আটকে রাখার জন্য প্রয়োজনে কারফিউ জারির পরামর্শ দিয়েছেন ডাঃ এবিএম আবদুল্লাহ। আর প্রধানমন্ত্রী ঘরে ঘরে খাবার ও ত্রাণ পৌঁছে দেয়ার কথা বলেছেন। নিঃসন্দেহে দুটো পদক্ষেপই ইতিবাচক হতে পারে।
শীর্ষ সংবাদ: