ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

বড় ক্রেতারা বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে

পোশাক শিল্পের ক্রয়াদেশ বাতিল হচ্ছে না

প্রকাশিত: ০৮:৫৯, ৩ এপ্রিল ২০২০

পোশাক শিল্পের ক্রয়াদেশ বাতিল হচ্ছে না

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সুখবরের আভাসটা ছিল আগে থেকেই। সে আভাস সত্যি হলো। পোশাক খাতের বড় বড় ক্রেতারা ক্রয়াদেশ বাতিলের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছেন। বিপরীতে এবার তারা ক্রয়াদেশগুলো বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। শিপমেন্টের অপেক্ষায় থাকা পণ্য নেয়ার বিষয়েও ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। ক্রেতাদের এমন সিদ্ধান্তের ফলে করোনার প্রভাবে যে ৩০০ কোটি ডলারের পোশাক ক্রয়াদেশ স্থগিত বা বাতিলের কথা বলা হচ্ছিল, এখন সেই পরিমাণ কমে আসবে। তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বুধবার এক হোয়াটসএ্যাপ বার্তায় বলেন, এইচএ্যান্ডএম, ইন্ডিটেক্স, পিভিএইচ, টার্গেট ও কিয়াবির মতো ক্রেতারা আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। তারা তাদের ক্রয়াদেশ বহাল রাখার কথা জানিয়েছে। আগামী মঙ্গলবার সিএ্যান্ডএ আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে। রুবানা হক আরও বলেন, কেউ কেউ স্বাস্থ্যকর্মীদের পেশাদার পিপিই দেয়ার জন্য তাদের একদিনের বেতন ডোনেট করার প্রস্তাব দিয়েছেন। আমরা আশা করি, দীর্ঘদিন ধরে যারা আমাদের সঙ্গে আছেন, কঠিন এই দুঃসময়েও তারা আমাদের সঙ্গে থাকবেন। আমাদের সমর্থন দিতে তাদের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। আশা করি, অর্থ প্রদানে তাদের শর্তগুলো এই সময়ে শিথিল থাকবে। এদিকে সুইডেনের বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান এইচএ্যান্ডএম গণমাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তাদের অর্ডারগুলো বহাল রাখবে। বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা যেসব তৈরি পোশাক কারখানাকে পণ্য ক্রয়ের অর্ডার দিয়েছিলাম, সেগুলো বাতিল হচ্ছে না। আমরা আমাদের প্রতিজ্ঞা রক্ষা করব। অর্ডারগুলোর ডেলিভারি নেব। গণমাধ্যমে দেয়া ওই বিবৃতিতে এইচএ্যান্ডএম কোন দেশের নাম উল্লেখ করেনি। তবে বাংলাদেশ থেকে সুইডিশ এই প্রতিষ্ঠান বিপুল পরিমাণ তৈরি পোশাক কিনে থাকে। বিবৃতিতে উল্লেখ করা অর্ডারের মধ্যে তাই বাংলাদেশের কারখানাগুলোতে দেয়া অর্ডার থাকাও স্বাভাবিক। ওই বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি আরও বলেছে, ‘আমরা যে দরে অর্ডার দিয়েছিলাম, সেই দর অনুযায়ীই বিক্রেতাদের মূল্য পরিশোধ করব।’ পোশাক ক্রেতা টম টেইলেরের পক্ষ থেকেও ১ এপ্রিল বিজিএমইএকে চিঠি দেয়া হয়েছে। সেখানে প্রতিষ্ঠানটি তাদের কিছু কিছু ক্রয়াদেশ বহাল রাখার কথা জানিয়েছে। একই সঙ্গে তাদের একদিনের বেতন বিজিএমইএর ফান্ডে জমা দেয়ার কথা জানিয়েছে। আর বাতিল হয়ে যাওয়া ক্রয়াদেশগুলো ফিরে পেতে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক। এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে বিজিএমইএর পরিচালক রেজওয়ান সেলিম বলেন, ‘আমরা বায়ারদের বলছি, তোমরা তোমাদের অর্ডার ক্যানসেল করো না। দেরিতে শিপমেন্ট নেয়ার ব্যাপারটি এ্যালাউ করছি। সাধারণত ৬০ থেকে ৯০ দিন পর টাকা দেয়। আমরা বলেছি, প্রয়োজনে আরও এক মাস পরে টাকা দাও। তবুও অর্ডার বহাল রাখো।’ রেজওয়ান সেলিম বলেন, ‘৩ বিলিয়ন ডলার মানে প্রায় এক মাসের রফতানি উধাও হয়ে যাওয়া। ক্রয়াদেশ বহাল রাখতে যতটা ছাড় দেয়া যায়, তার সর্বোচ্চটা আমরা দেয়ার চেষ্টা করছি।’ ইউরোপ-আমেরিকার কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাস ইস্যুতে যেসব ক্রেতা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের অর্ডার বাতিল করেছে, সেগুলো ফিরিয়ে আনা এবং এই ইস্যুতে বিদেশী ক্রেতাদের ইতিবাচক সহযোগিতার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কূটনীতিক, সরকারী কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ চলছে। তাদের এ বিষয়ে প্রকৃত পরিস্থিতি বোঝানো হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, অচিরেই এ বিষয়ে সুবাতাস পাওয়া যাবে। পাশাপাশি করোনার মতো বৈশ্বিক মহামারী ইস্যুতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের পাশে যেন বিদেশী ক্রেতারা সক্রিয়ভাবে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে, সেজন্যও কূটনীতিক তৎপরতা চালানো হচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘এই দুর্যোগের সময় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের পাশে যেন বিদেশী ক্রেতারা থাকে, এজন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। সব মিশনকে এ বিষয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে। এই দুর্যোগে বিদেশী ক্রেতারা যেন আমাদের সহযোগিতা করে, সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি।’ করোনাভাইরাসের প্রভাবে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের পোশাকের ক্রয়াদেশ স্থগিত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিজিএমইএ। গত ৩১ মার্চ সংগঠনটির পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। সংগঠনটি বলছে, ১ হাজার ৮২টি ফ্যাক্টরির ৯৩২ দশমিক ৬৩ মিলিয়ন পিস অর্ডার স্থগিত বা বাতিল হয়েছে। এর আর্থিক পরিমাণ ২৯৫ কোটি ডলার। এসব কারখানাতে শ্রমিক রয়েছেন প্রায় ২১ লাখ। এর আগে ক্রয়াদেশ বাতিল হওয়ার প্রথম দিকে বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক জানিয়েছিলেন, পোশাক খাতে ভয়াবহ অবস্থা চলছে। বিভিন্ন দেশ, বিভিন্ন মহাদেশ থেকে ক্রেতারা তাদের ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত করছে। ফলে এ খাতটি স্মরণকালের বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে। পোশাক খাতের দুরবস্থায় রফতানিমুখী শিল্পে সরকার ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়েছে। এ অর্থ দিয়ে পোশাক মালিকরা শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করতে পারবেন। চীনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বিস্তৃতির শুরু থেকেই চাপের মুখে পড়তে থাকে দেশের তৈরি পোশাক খাত। ব্যবসায়ীরা জানান, ওই সময় চীন থেকে তারা কাঁচামাল আমদানি করতে পারছিলেন না। ফলে তাদের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। সঠিক সময়ে পণ্যের শিপমেন্ট নিয়ে তারা চিন্তিত হয়ে পড়ছিলেন। ফেব্রুয়ারির শেষভাগে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ইউরোপ-আমেরিকার ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে পোশাক খাতে দেখা দেয় নতুন সমস্যা। এই ভাইরাসের কারণে দেশগুলো লকডাউন হয়ে যায়। ফলে বন্ধ হয়ে যায় দোকানপাট। এসব দেশের ক্রেতা পোশাক কারখানাগুলোকে দেয়া অর্ডার বাতিল করতে থাকে।
×