ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাহত চিকিৎসা সেবা

প্রকাশিত: ০৮:৪৭, ২ এপ্রিল ২০২০

ব্যাহত চিকিৎসা সেবা

পশ্চিমী সংস্কৃতিতে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক বলে গণ্য গ্রীক পণ্ডিত হিপোক্রেটিসের শপথবাক্য পাঠ করেই একজন নবীন চিকিৎসককে নিজ পেশায় নিয়োজিত ও নিবেদিত হতে হয়। তিনি এর অন্যথা করতে পারেন না কিছুতেই। সেই শপথবাক্যে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে যে, ‘আমার কাছে সকল মানব, যার মন এবং শরীর অথবা যার নয়, সবার প্রতি বিশেষ দায়বদ্ধতা রয়েছে এবং আমি যখনই পারব অসুখের প্রতিরোধ করব, কারণ প্রতিরোধ উপশম অপেক্ষা শ্রেয়।’ দেশ ও জাতির এই দুঃসময়ে বাংলাদেশের চিকিৎসকদের এই বিষয়টি বিশেষভাবে মনে রাখা আবশ্যক। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, দেশে করোনার সংক্রমণ হতে না হতেই অধিকাংশ সরকারী-বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিক বিশেষ করে জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত রোগীকে ভর্তি করতে অনিচ্ছুক। গত কয়েকদিনে এ রকম বেশ কয়েকটি ঘটনা এসেছে গণমাধ্যমে, যাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এ জাতীয় দায়িত্বহীনতার একাধিক চিত্র উঠে এসেছে। অনেক ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যুর খবরও আছে, যা মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক। অজুহাত হিসেবে চিকিৎসকরা অবশ্য বলছেন, তাদের হাসপাতালে পিপিইসহ যথোপযুক্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ওষুধপত্র নেই। করোনা পরীক্ষার কিট তো দূরের কথা! তবে এখন তো সরকারী-বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় এসব সরঞ্জাম দেয়া হচ্ছে পর্যায়ক্রমে। এর পরও কেন রোগী ভর্তি না করে ফিরিয়ে দেয়ার অভিযোগ থাকবে, যা কাম্য নয় কোন অবস্থাতেই। শীতের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে এ সময়ে প্রকৃতি ও পরিবেশে শুরু হয়েছে ঋতু পরিবর্তনের খেলা। এতে নববসন্তে একদিকে প্রকৃতি যেমন হাজির হয়েছে নতুন পাতা ও কুঁড়ি নিয়ে, অন্যদিকে ঘরে ঘরে শুরু হয়েছে সর্দি-কাশি-জ্বর-হাঁচি ইত্যাদি উপসর্গ। এর পাশাপাশি রাজধানীসহ শহরাঞ্চলের অধিবাসীদের জন্য সমূহ উপদ্রব- প্রচণ্ড ধূলিদূষণ, শব্দদূষণ, যানজট, দুর্ভাবনা, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি। উল্লেখ্য, ধূলিদূষণের দিক থেকে বিশ্বে প্রায় শীর্ষে রয়েছে ঢাকা। স্বভাবতই মানুষকে এই বিরূপ আবহাওয়া ও পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে বেগ পেতে হয়। আর এজন্যই প্রধানত সর্দি-কাশি-জ্বরের উপদ্রব- প্রাথমিক রোগ নির্ণয়ে যাকে বলা যায় ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জা। এবারে এর প্রকোপটি কিছুটা হলেও বেশি। এর সঙ্গে বাড়তি উপদ্রব তথা প্রায় আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে চীনের মহামারী সদৃশ করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯। সরকার অবশ্য এ বিষয়ে সবিশেষ সচেতন ও সতর্ক। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সুচিকিৎসা দিতে আলাদা কেয়ার ইউনিট স্থাপনসহ স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন। এর পাশাপাশি তিনি সরকারী চিকিৎসকদের বাইরের চেম্বারে নয়, হাসপাতালেই চেম্বার স্থাপন করে রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। চিকিৎসকরা তা করবেন বলেই জনসাধারণের প্রত্যাশা। বর্তমানে প্রায় ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক সারাদেশে মা ও শিশুদের বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে। এসব কেন্দ্র থেকে ৩০টি মারাত্মক রোগের ওষুধও দেয়া হচ্ছে বিনামূল্যে। সরকারের এই জনস্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্বব্যাংকসহ বহির্বিশ্বে বিপুল প্রশংসা কুড়িয়েছে। একই সঙ্গে দেশে রোগ নির্ণয়সহ আনুষঙ্গিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সর্বাধুনিক প্যাথল্যাব প্রতিষ্ঠাসহ দক্ষ জনবল গড়ে তোলার ওপর যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। তারপরও কেন চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ উঠবে? স্বীকার করতে হবে যে, দেশে সরকারীভাবে স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় খুব কম, জিডিপির শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ মাত্র। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাজেট বরাদ্দে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ জিডিপির ৫ শতাংশ হওয়া বাঞ্ছনীয়। আমরা আশা করব, করোনা পরবর্তী জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় বরাদ্দ বাড়াবে। এর পাশাপাশি চিকিৎসকরাও আরও দায়িত্বসচেতন ও জনবান্ধব হয়ে উঠবেন নিশ্চয়ই।
×