ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় বাতিল হচ্ছে ক্রয় আদেশ

প্রকাশিত: ০৯:৩৫, ১৫ মার্চ ২০২০

করোনায় বাতিল হচ্ছে ক্রয় আদেশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাসের প্রভাবে কিছু কিছু দেশ বাংলাদেশ থেকে তাদের ক্রয় আদেশ বাতিল করতে চাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেছেন, ‘এ সব ক্রয় আদেশ তারা অন্য কোনো দেশে পাঠিয়ে দিতে চাচ্ছে’। রবিবার বিশ্বভোক্তা অধিকার দিবস-২০২০ উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও হটলাইন সেবা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। ব্যবসা বাণিজ্যে ওপর করোনাভাইরাসের প্রভাবের বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বড় সমস্যা হচ্ছে- কিছু কিছু দেশ তাদের ক্রয় আদেশ বাতিল করতে চাচ্ছে অথবা রেফার (অন্য কোথাও দিতে চাচ্ছে) করতে চাচ্ছে। আমার মনে হয়, সেটা নিয়ে আমাদের কিছু সমস্যা হবেই। আরও তো সমস্যা সার্বিকভাবে রয়েছেই। সারা পৃথিবীতে যোগাযোগ বন্ধ। সারা পৃথিবীতে যেমন ধাক্কা লেগেছে, আমাদের দেশেও তার প্রভাব পড়েছে।’ কোন কোন দেশ ক্রয় আদেশ বাতিল করতে চাচ্ছে? জবাবে তিনি বলেন, ‘আজকে সকালেই আমি খবর পেলাম, ইতালি কিছু ক্রয় আদেশ বাতিল করতে চেয়েছে। বড় সমস্যা হচ্ছে, সঠিক সময়ে মাল না পাওয়ার কারণে আল্টিমেট ফাইনাল সেলার্স যারা, তারা ক্রয় আদেশ বাতিল করতে চাচ্ছে অথবা প্লেনে করে পাঠাতে বলছে।’ অন্য দেশে পাঠানোর বিষয়ে টিপু মুনশি বলেন, ‘সেখানেও সমস্যা রয়েছে। যে সময়ে মালটা বিক্রি হবে, তার থেকে যদি পিছিয়ে যায়। তাছাড়া যে সমস্ত দেশ নেবে তাদেরও করোনার ভয় আছে। সার্বিক অবস্থা আপনারা সবাই জানেন, সারা পৃথিবী একটা অস্থির সময় পার করছে। আমরা আশা করছি, খুব শিগগিরই এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারব।’ তিনি বলেন, ‘গার্মেন্টসের ৬০ শতাংশ র-ম্যাটেরিয়ালস চায়না থেকে আনা হয়। সেখানে কিছু স্লো-ভাব দেখছি। তবে সুখের বিষয় হচ্ছে- চায়না আবার ফ্যাক্টরিতে ফিরে গেছে। তারা আবার কাজ শুরু করেছে। তবে ইতোমধ্যে এর কিছুটা প্রভাব আমাদের ওপর পড়েছে। সেটা কীভাবে কাভার করা যায় সেটা চেষ্টা করা হচ্ছে।’ মন্ত্রী বলেন, ‘তবে সুখের বিষয়- আমাদের দেশে করোনার প্রভাব তেমন বেশি মাত্রায় পায়নি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও খুব শক্তভাবে বিষয়টি দেখছে। আমরা ঠিক করেছি, প্রতি সপ্তাহেই বা এর বাইরেও আমরা বসতে পারি। টোটাল বিষয়টা কীভাবে সমাধান করা যায়, সে বিষয়ে আমরা কাজ করব।’ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, গণজমায়েত পরিহার করতে। সেক্ষেত্রে বড় বড় গার্মেন্টস শিল্পে তিন চার হাজার শ্রমিক কাজ করে তাদের ক্ষেত্রে কী ভাবা হচ্ছে? জবাবে টিপু মুনশি বলেন, ‘দেখুন বাংলাদেশে মাত্র তিনজন রোগী পাওয়া গেছে। তারা তিনজনই সুস্থ আছেন। এখনও সে রকম কোন সমস্যা হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘তারপরও প্রতিটা গার্মেন্টসে একটা সচেতনতা তৈরি করা হয়েছে। অধিকাংশ কারখানায় মাস্ক, হাত ধোয়ার জন্য সাবানসহ স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোনো গার্মেন্টসে এমন কোনো অবস্থা তৈরি হয়নি যে বন্ধ করে দিতে হবে। আর স্কুলগুলো এখনও বন্ধের চিন্তা করা হয়নি।’ দেশের বাইরে থেকে যারা আসছে তারাতো বিভিন্ন স্থানে লোকজনের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে, এখানে আপনারা কী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন? জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশ থেকে আসা কমে গেছে। আপনারা জানেন, গত কয়েক বছরে আমাদের দ¶তা বাড়ানোর পর বিদেশ থেকে এমনিতেই লোকজন আসা কমে গেছে। এখন আমরা ডিজিটাল অর্ডার নেই, দাম নির্ধারণ করে থাকি। আজ থেকে ২৫/৩০ বছর আগে যে পরিস্থিতি ছিল সেটা কিন্তু এখন আর নেই। আজকাল অর্ডারতো সশরীরে কেউ এসে দেখে না। এ জন্য অর্ডারে কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে কাঁচামালে। আমাদের নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ৬০ শতাংশ কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। যেটা নিটিং, ওভেন খাতে ৯০ শতাংশ আমরা নিজেরাই তৈরি করি। ফলে সাপ্লাই ও সেলিং দুই খাতেই সমস্যা। এটা শুধু আমাদের জন্য না সারা পৃথিবী সমস্যায় পড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আশার কথা হলো- চায়নাতে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের কিছুটা উন্নীত হয়েছে। নতুন করে ইউরোপে গেছে। আমার ধারণা ইউরোপ উন্নত দেশ, তারা এ বিষয়টা তাড়াতাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। কাঁচামাল আমদানিতে কিছুটা ধীর ছিল। কারণ কিছুদিন আগে তাদের (চীন) নববর্ষ উপলক্ষে ছুটি গেল। সেই ছুটি কিছুটা বাড়িয়েছে। চায়নার সব প্রদেশেই এরকম ঝামেলা, তা কিন্তু নয়। কয়েকটি প্রদেশে হয়েছে। অন্যান্য স্থানে তেমন কারখানা বন্ধ হয়নি। সাময়িক সমস্যার জন্য নববর্ষের ছুটি বাড়িয়েছিল। তবে উহানে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয়েছিল, সেখানে অনেকটা নরমাল হয়ে গেছে। তাদের ৯০ শতাংশ লোক কাজে ফিরে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে চীন বাংলাদেশে পণ্য রফতানি শুরু করেছে। আমাদের কিছু ক্ষতি হলেও সেগুলো পুষিয়ে উঠতে পারব।’ ৩ বছরের মধ্যে পেয়াজ রফতানি \ পেঁয়াজের দামের বিষয়ে যেকোনো মূল্যে সরকার কৃষকদের সন্তুষ্ট রাখতে চায় বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেছেন, ‘আমরা আগামী তিন বছরের মধ্যে পেঁয়াজ রফতানি করতে চাই। আমরা সে লক্ষ্যে আমাদের কৃষকদের সন্তুষ্ট রাখব’। ভারত পেঁয়াজ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে, এ দিকে দেশের পেঁয়াজও উঠানো শুরু করেছে কৃষকরা এমন পরিস্থিতি পেঁয়াজ আমদানিতে কোনো নির্দেশনা দিচ্ছেন কি না? জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কৃষকদেরকে আগে স্যাটিসফাই (সন্তুষ্ট) করতে হবে। না হলে আমরা কোনোদিন পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হব না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা পুরোপুরিভাবে মাঠ সার্ভে (জরিপ) করেছি। আমাদের দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনে খরচ প্রায় ১৬ থেকে ১৭ টাকা। কেউ বলছে ১২ টাকা কেউ বলছে ১৯ টাকা, গড় ধরলে হয় ১৬ থেকে ১৭ টাকা। তাই আমরা লক্ষ্য রাখব- কৃষকরা যেন ২০ থেকে ২৫ টাকা পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারে। যখনই দেখবে এ দামটা তারা পাচ্ছেন না। তখনই আমরা যেকোনোভাবে সেটাকে রক্ষা করার জন্য যা যা করা দরকার তা করব।’ টিপু মুনশি বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন শুধু আমাদের মার্কেটই নয়, ভারতের মার্কেটের দিকেও নজর রাখছি। এই মুহূর্তে ভারতের নাসিকের বাজারেও খুচরা পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ৩২ থেকে ৩৩ রুপি। আমাদের দেশেও কিন্তু ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় চলে এসেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা পেঁয়াজের বিষয়ে খুবই সিরিয়াস। প্রধানমন্ত্রী আমাকে নির্দেশনা দিয়েছেন, তিন বছরের মধ্যে আমরা পেঁয়াজ রফতানি করতে চাই। তাই আমরা সে লক্ষ্যে আমাদের কৃষকদের সন্তুষ্ট রাখব।’ গত বছরের সেপ্টেম্বরে হঠাৎ করে ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়। এতে করে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম আকাশচুম্বী হয়। প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায় পৌঁছে। এক পর্যায়ে পেঁয়াজের চাহিদা মেটাতে বিমানে করে মিশর, পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে সরকার। তবে বর্তমানে দেশি পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। এ সময় আবার ভারতও পেঁয়াজ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়। তাই দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম খুচরাতেই ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় নেমে এসেছে। এতে পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে সংশয়ে আছেন দেশের কৃষকরা। অনুষ্ঠানে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান, ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান তপন কান্তি ঘোষ, প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, বিভাগীয় কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সদস্য শেখ কবির হোসেনসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বাবুল কুমার সাহা।
×