ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনী গণসংযোগ চলাকালে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া সংঘর্ষ, আহত ৩০

প্রকাশিত: ১০:১৫, ২৭ জানুয়ারি ২০২০

 নির্বাচনী গণসংযোগ চলাকালে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া  সংঘর্ষ,  আহত ৩০

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর বিভিন্নস্থানে নির্বাচনী গণসংযোগকে কেন্দ্র করে ধাওয়া, পাল্টাধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় দুই সাংবাদিকসহ ৩০জন আহত হয়েছে। পুরনো ঢাকার গোপীবাগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ভোটের প্রচারের সময় বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনের কর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থীর কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। দুই গ্রুপের ধাওয়া, পাল্টাধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গাড়ি ভাংচুরে পুরো এলাকায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। টানা ৪০ মিনিট এই সংঘর্ষের মধ্যে গুলি ছোড়ার শব্দ শোনা গেছে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রবিবার দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে বিএনপি মেয়র প্রার্থী ইশরাক মিছিল নিয়ে গোপীবাগে নিজের বাসার দিকে যাওয়ার সময় সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের গলিতে প্রবেশের সময় সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। সূত্র জানায়, ইশরাকের মিছিল যখন ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিল, ঠিক তখন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ব্যাডমিন্টন মার্কার রোকন উদ্দিন আহমেদ এবং সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর পদের প্রার্থী লাভলী চৌধুরীর কর্মীরা উপস্থিত হন ওই মোড়ে। এ সময় দুই পক্ষের সেøাগান-পাল্টাসেøাগান দিতে থাকে। এ সময় উভয়পক্ষের কর্মীরা হ্যান্ড মাইকে ধানের শীষ ও নৌকা প্রতীকের স্লোগান দিতে থাকেন। এতে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে উভয় গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতি হয়। পরে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। দুই পক্ষের কর্মীরা এ সময় রাস্তার পাশে থাকা চেয়ারও ছুড়ে মারেন। এর মধ্যে অন্তত ১০টি গুলির শব্দও শোনা গেছে। দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে শুরু হয়ে ১টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত উভয় গ্রুপের ধাওয়া, পাল্টাধাওয়া চলে। এ সময় কয়েকটি গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে উভয় গ্রুপকে ধাওয়া দেয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। সংঘর্ষের সময় টেলিভিশনের চিত্র সাংবাদিক আশরাফুল ইসলামের মাথা ফেটে যায়। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কয়েক কর্মী আহত হয়েছেন। ওয়ারী থানার পরিদর্শক (অপারেশন্স) সুদীপ কুমার সাহা জানান, ইশরাক হোসেনের এই এলাকায় নির্বাচনী প্রচারের কথা ছিল বিকেল ৫টায়। সে অনুযায়ী পুলিশকে তারা একটি চিঠিও দিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে তারা দুপুর ১টায় ওই এলাকায় নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন। যা পুলিশকে জানাননি। ফলে পুলিশের কোন প্রস্তুতি ছিল না। ইশরাক হোসেন টিকাটুলি উইমেন্স কলেজের কাছে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী রোকন উদ্দিনের নির্বাচনী ক্যাম্পের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় উত্তেজনা বাড়ে। এ সময় দুই পক্ষের কথা কাটাকাটি থেকে ধাওয়া, পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী রোকন উদ্দিন আহমেদ অভিযোগ করেন, আমরা ক্যাম্পের ভেতরে ছিলাম। হঠাৎ ইশরাকের লোকজন আমাদের নির্বাচনী ক্যাম্পের দরজা ভেঙ্গে আমাদের ওপর হামলা করে। এ সময় ইশরাকের লোকজন আট রাউন্ড গুলি ছোড়ে, তাদের হামলায় আমাদের লোকজন আহত হয়েছে। আমাদের কেউ হামলায় ছিল না। এদিকে প্রচারে হামলার ঘটনায় নেতাকর্মীদের বিচলিত না হয়ে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন। হামলার পর রবিবার দুপুরে নিজ বাস ভবন গোপীবাগের আরকে মিশন রোডে সংবাদ সম্মেলনে ইশরাক জানান, সংঘর্ষে গণমাধ্যমকর্মীসহ ১০/১২ জন আহত হয়েছেন। এ ধরনের হামলা ন্যক্কারজনক। ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এটি দেখে নির্বাচন বানচাল করার জন্য এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে সরকার। এদিকে এ ঘটনার দুই ঘণ্টা পর ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন ইশরাক হোসেনের সঙ্গে দেখা করতে তার গোপীবাগের বাসভবনে যান। সেখানে থেকে দেখা করে বের হয়ে যাবার সময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। নির্বাচন সামনে রেখে কোন সংঘাত চাই না। ব্রিটিশ হাইকমিশনার জানান, আমি সব মেয়র প্রার্থীদের সঙ্গে দেখা করেছি। তারই অংশ হিসেবে আজ বিএনপির প্রার্থীর সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। এ নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচন সকলেরই কাম্য। আমি আশা করব, এটা সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। আমরা সবাই সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করি। রবার্ট জানান, আমি ইলেকশন কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা কীভাবে নির্বাচন পরিচালনা করছে সে বিষয়ে ধারণা নেয়ার চেষ্টা করেছি। ইলেকশন কমিশনের কাছেও আমরা ভাল নির্বাচন প্রত্যাশা করছি। আশা করি, তারা একটা ভাল নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। অপরদিকে গোপীবাগে ধানের শীষ ও নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাকে ‘হামলা’ আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের শান্ত থাকতে আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। ওয়ারীতে কাউন্সিল প্রার্থীর অফিসে হামলা ওয়ারীতে ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিল প্রার্থীর অফিসে দুর্বৃত্তদের হামলায় একজন গুলিবিদ্ধসহ তিনজন আহত হয়েছে। এরা হচ্ছে মোঃ শান্তি (৩০), আরজু (৪০) ও শেখ রবিন (৪৫)।
×