ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গারা বেপরোয়া, নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি

প্রকাশিত: ০৯:৪০, ১৪ নভেম্বর ২০১৯

  রোহিঙ্গারা বেপরোয়া, নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি

শংকর কুমার দে ॥ কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৩ রোহিঙ্গা শিবির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিগত দুই বছরে রোহিঙ্গাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে অন্তত ৭৫ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। ইয়াবা ব্যবসা, মানবপাচার, খুন, ধর্ষণ চোরাচালান ও ডাকাতিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ার ঘটনায় ৪৭১টি মামলা হয়েছে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে। এতে আসামির সংখ্যা ১০৮৮ রোহিঙ্গা। এ ছাড়াও ১ হাজার রোহিঙ্গাকে সন্ত্রাসী হিসাবে কালো তালিকাভুক্ত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে থাকা-খাওয়াসহ মৌলিক অধিকারগুলো পেয়েও রোহিঙ্গাদের নানামুখী অপরাধে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। পুলিশ সদর দফতরের এক প্রতিবেদনে এই ধরনের তথ্য জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গারা এখন বাগড়া দিয়েছে, নাগরিক অধিকার ও মানবাধিকার নিশ্চিতের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত মিয়ানমারে ফিরে যাবে না। আর তাদের উস্কে দিচ্ছে এনজিওগুলো। দিন যত যাচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে রোহিঙ্গারা বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইয়াবা ব্যবসা, মানবপাচার, খুন, ধর্ষণ, চোরাচালান ও ডাকাতিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। রোহিঙ্গাদের উৎপাতে এলাকাবাসী উদ্বিগ্ন, প্রশাসনও উৎকণ্ঠায়। সহজেই ঘরে বসে ত্রাণ সামগ্রী পেয়ে যাওয়ায় তাদের মাথায় চেপে বসেছে নতুন ভূত। কোন কাজ ও সংসারের পিছুটান না থাকায় রোহিঙ্গারা নানা অপকর্মে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। দিন যত যাচ্ছে তত তারা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। নানা অপরাধের ঘটনা ঘটাচ্ছে। জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছে। পোশাকধারী পুলিশের পাশপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নজরদারি অব্যাহত রেখেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার শিবিরে ৭টি করে সন্ত্রাসী বাহিনী আছে। এর মধ্যে টেকনাফের ‘আবদুল হাকিম বাহিনী’ বেশি তৎপর। এই বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিপণ আদায়ের জন্য যখন-তখন লোকজনকে অপহরণ করে। মুক্তিপণ না পেলে হত্যা করে লাশ গুম করে। ইয়াবা, মানবপাচারে যুক্ত থাকার পাশাপাশি এ বাহিনীর সদস্যরা রোহিঙ্গা নারীদের তুলে নিয়ে ধর্ষণের ঘটনাও ঘটায়। উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। বিপুল এই জনগোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করা অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশী-বিদেশী দাতা সংস্থাগুলোর কারসাজিতে পরপর দুইবার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ভুগছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। যেখানে রোহিঙ্গাদের এমন অপরাধ কর্মকান্ড ও সহিংস আচরণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকেও উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। পুলিশ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই বছর আগে রোহিঙ্গারা খাবারসহ নানা প্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য দৌড়াদৌড়ি করত। এখন তাদের খাবার ও সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য কোথাও দৌড়াতে হয় না। এনজিওরা তাদের ঘরে ঘরে সব প্রয়োজনীয় জিনিস পৌঁছে দিচ্ছে। কোন কাজ ও সংসারের পিছুটান না থাকায় রোহিঙ্গারা নানা অপকর্মে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে ইয়াবা রাজ্য বানিয়েছে। ধর্ষণ, খুন, হামলা তাদের নিয়মিত কাজে পরিণত হয়েছে। তাদের কারণে স্থানীয়রা এখন অসহায় হয়ে পড়েছে। নিরাপত্তা ঝুঁকি ও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয়রা। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিয়ত অভিযান চলছে। পাশাপাশি মাদক পাচারে জড়িত বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে গুলিবিনিময়ের ঘটনাও ঘটেছে। টহল জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট পরবর্তী মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার পর নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার, ত্রাণ সামগ্রী বণ্টন নিয়ে বিরোধ, পূর্ব-শত্রুতার জের, ইয়াবা কারবার, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে অপহরণ, খুন, ধর্ষণের মতো অনেক অপরাধের ঘটনা ঘটছে।
×