ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘বাংলা বন্ড’ বেসরকারী খাতকে এগিয়ে নেবে ॥ অর্থমন্ত্রীর আশাবাদ

প্রকাশিত: ১১:০৬, ১২ নভেম্বর ২০১৯

‘বাংলা বন্ড’ বেসরকারী খাতকে এগিয়ে নেবে ॥ অর্থমন্ত্রীর আশাবাদ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলা বন্ডের মাধ্যমে বিদেশ থেকে পাওয়া অর্থ দেশের বেসরকারী খাতকে এগিয়ে নেবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল। সোমবার লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের প্রথম ‘টাকা ডিনমিনেটেড বন্ড’, যার নাম দেয়া হয়েছে বাংলা বন্ড। লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল আরও বলেন, এর মধ্য দিয়ে আমাদের লক্ষ্য অর্জনের পথে এক দীর্ঘ যাত্রার সূচনা হলো। আইএফসি ও লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জের যৌথ আয়োজনে এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আইএফসির এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট নিনা স্টোয়েলকোভিচ, আইএফসির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ট্রেজারার জন গ্যান্ডোলফ, লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জের সিইও নিখিল রথী এবং যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিমও উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের পথে বাংলাদেশের অভাবনীয় সাফল্যের গল্প এ অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী। এদিকে, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি) বলছে, তাদের চালু করা এই বন্ডের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে বাজার থেকে তোলা হবে ৯.৫ কোটি ডলার (প্রায় ৮০ কোটি টাকা)। এই অর্থ ব্যয় হবে প্রাণ গ্রুপের পরিচালন ও বিপণন ব্যবস্থার উন্নয়নে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে এই বন্ডের মেয়াদ হবে ৩ বছর। পরে তা বাড়িয়ে ৫ বছর এবং সর্ব্বোচ্চ ১০ বছর করা হতে পারে। প্রসঙ্গত, ভারতে প্রথমে তিন বছর মেয়াদী রুপী বন্ড ছাড়া হয়েছিল। পরে মেয়াদ বাড়িয়ে ৫ বছর করা হয়। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১০ বছর। প্রবাসী ভারতীয়রা এই বন্ডে বিপুল হারে বিনিয়োগ করেছেন। বাংলাদেশও ২০১১ সাল থেকে এ ধরনের বন্ড ছাড়ার পরিকল্পনার কথা বলে আসছিল। ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ বার্ষিক সভায় আইএফসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের এ বিষয়ে আলোচনাও হয়েছিল। বাংলাদেশ সরকার তখনই এ বিষয়ে প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছিল। এরপর আইএফসি বাংলাদেশ সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠায় এবং তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অর্থ মন্ত্রণালয় একই বছর ৪ অক্টোবর এক চিঠিতে টাকা বন্ড ছাড়ার অনুমোদনের বিষয়টি জানায়। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) যাচাই কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে আইএফসির ওই প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। ওই কমিটির কাছে প্রাণ গ্রুপের দুই প্রতিষ্ঠান প্রাণ এ্যাগ্রো ও নাটোর এ্যাগ্রো লিমিটেডের জন্য এ বন্ড ছাড়ার প্রস্তাব করে আইএফসি। চলতি বছরের এপ্রিলে আইএফসির প্রস্তাবে সাড়া দেয় বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এই বন্ডের মাধ্যমে বাজার থেকে যে অর্থ পাওয়া যাবে, সেখান থেকে প্রাণ এ্যাগ্রো ও নাটোর এ্যগ্রো ৮০ কোটি টাকা ঋণ পাবে। সুদের হার নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এ ঋণ সমান কিস্তিতে তিন ও পাঁচ বছরে তাদের পরিশোধ করতে হবে। এই বন্ডের তালিকাভুক্তি উপলক্ষে আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বলেন, আইএফসির সঙ্গে আমার অনেক মিটিং হয়েছে। সামনে আরও ৩০০ মিলিয়ন ডলার আসবে। তার মধ্যে এটা প্রথম। এই বন্ডে কী রকম সারা পাওয়া যায় সেটা দেখে পরেরগুলো ছাড়া হবে। তিনি বলেন, আজকের দিনটি আমাদের দেশের জন্য একটি গৌরবের দিন। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই চিন্তার আদলে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা প্রথমবারের মতো লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে একটি বন্ড নিয়ে আসতে পেরেছি। এরপর আমরা পর্যায়ক্রমে আরও বন্ড আনব। তিনি বলেন, আমরা অনেকদিন ধরে একটা জায়গায় আটকা পরেছিলাম। আমাদের ফাইন্যান্সিয়াল মার্কেটে কোন ফাইন্যান্সিয়াল টুলস ছিল না। আমাদের শুধু ছিল ব্যাংক ঋণ। সেখানে অনেক সমস্যা আছে। আমরা সবাই এখন চাইছি ব্যাংকগুলোর ওপর আর চাপ না বাড়াতে। বন্ড ফাইন্যান্সিং একটি ভাল বিকল্প হতে পারে। বাংলা বন্ডের কারণে আন্তর্জাতিক মুদ্রাবাজারে বাংলাদেশের মুদ্রা টাকার মর্যাদা বাড়বে মন্তব্য করে লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জের সিইও নিখিল রথী বলেন, বাংলাদেশের টাকাকে আমরা লন্ডনে স্বাগত জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে আইএফসিকে অভিনন্দন জানাচ্ছি পথিকৃৎ হিসেবে তাদের এই ভূমিকার জন্য।
×