স্টাফ রিপোর্টার ॥ দিল্লীর যুবরাজ মুহম্মদ বুলবনের বিশ^কবি সম্মেলনে মুখ্য কবি হিসেবে আমন্ত্রণ পান শেখ সাদী। তার প্রাণাধিক প্রিয় বন্ধু দিল্লীর কবি আমীর খসরু আমন্ত্রণপত্র পাঠান। শেখ সাদীর আগমন নিশ্চিত করতে হৃদয়ের অন্তস্তল থেকে আহ্বান জানান। রাষ্ট্রীয় সম্মান এবং বন্ধুর আহ্বানে উৎফুল্ল শেখ সাদী সম্মানিত এবং আনন্দে আপ্লুত হলেও বার্ধক্যজনিত কারণে বিগত সময়ে একাধিকবার দিল্লী ভ্রমণ করলেও সেবার সে আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে দিল্লী আসতে পারেননি। চন্দ্রকলা থিয়েটার প্রযোজিত ‘শেখ সাদী ’নাটকের গল্পের শুরুটা এ রকম। দলের ১৮তম প্রযোজনা এ নাটকটি মঞ্চস্থ হয় রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে চলমান গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসবের সপ্তম দিন এক্সপেরিমেন্টাল হলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। পারস্যের মহাকবি শেখ সাদীর জীবন ও কর্ম আশ্রীত নাটকটি লিখেছেন অপূর্ব কুমার কু-ু। এতে নির্দেশনার পাশাপাশি নামভূমিকায় একক অভিনয় করেছেন দলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এইচ আর অনিক।
নাটকের পরের অংশে দেখা যায়, শেখ সাদী কবি সম্মেলনে সশরীরে না যাবার ক্ষেত্রে অপরাপর আরেকটি কারণ ছিল। তিনি চেয়েছিলেন তার অন্তিমবেলা কাটুক শিরাজী নগরীতে; যেখানে তার জন্ম-শৈশব-কৈশোর ও যৌবনের বেড়ে ওঠা। ফলে শিরাজী নগরী ত্যাগ করে শেখ সাদী না গেলেও কবিবন্ধুর সম্মানার্থে তার রচিত গুলিস্তা, বুলিস্তাসহ অন্যান্য রচিত গ্রন্থ তুলে দিয়েছিলেন শিরাজীতে অভ্যাগত দিল্লীর রাষ্ট্রীয় অতিথিদের হাতে। ইতিহাসের এই সত্যকে ঘিরেই নাটকটির উপজীব্য। মহাকবি শেখ সাদী তার সৃজন সাহিত্যের সম্ভার নিয়ে দাঁড়িয়ে শিরাজীর নিজ গৃহে, পারস্য থেকে দিল্লীগামী মুসাফিরদের আসার অপেক্ষায়। ফজরের আজান শেষে ভোরের আলো ফুটবার মাহেন্দ্রক্ষণের মধ্যবর্তী অপেক্ষমাণ শেখ সাদীর সময়টুকু নিয়েই নাটক ‘শেখ সাদী’। পোশাকের পকেটে খাবার পুরার বহুল প্রচলিত কাহিনীর পাশাপাশি পারস্যের কবি রুদাকী, ফেরদৌসী, জালাল উদ্দীন রুমি, ওমর খৈয়ামসহ পূর্বসূরি ও সমসাময়িক সাহিত্যিকের সমান্তরাল পথচলা, যাপিত জীবনকে তুলে ধরা এবং নিজ সাহিত্য সৃজনের প্রেক্ষাপটকে মনোজগতে পুনরায় ফিরে দেখার এবং অপেক্ষার অবসানে শেখ সাদীর আত্ম উপলব্ধি উঠে এসেছে এ নাটকে। নাট্যকার অপূর্ব কুমার কু-ুর ভাষ্য, বিশ্বের মানুষ শেখ সাদীর অংশিদার এবং বাংলাদেশের মানুষও ঠিক সেভাবেই ভালবাসেন। নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়নে দর্শকের উপস্থিতি এটাই বুঝিয়ে দেয় শেখ সাদীকে দেখার ব্যাকুলতা কত। খুব স্বাভাবিকভাবেই গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসবে ‘শেখ সাদী’ নাটকটি সেই একই দর্শকপ্রিয়তায় মুগ্ধতা ছড়াল। নির্দেশক এইচআর অনিক বলেন, নাট্যকারের চিন্তার সঙ্গে সহমত থাকা সত্ত্বেও আরও কিছু নতুন ভাবনার সুযোগ রয়েছে। এই নাটকের ধারাভাষ্যে শুরুতে এবং শেষে রয়েছেন আইটিআইয়ের সাম্মানিক সভাপতি শ্রদ্ধেয় রামেন্দু মজুমদার। ফলে তার কণ্ঠস্বরের ব্যবহারটি নাটকে যে অর্থে সে অর্থ অনুধাবনের জন্য বিপুল দর্শকের উপস্থিতি আশার সঞ্চার করে। উপরন্তু আমরা জেনেছি যে ইরানেও শেখ সাদীকে নিয়ে কোন নাটক মঞ্চায়িত হয়নি। ফলে বাংলাদেশে নাটকটি মঞ্চে আনা গর্বের। নাটকের প্রযোজনা অধিকর্তা-মামুনুর রশীদ, সঙ্গীত-হামিদুর রহমান পাপ্পু, মঞ্চ-ফজলে রাব্বি সূকর্ণ, মঞ্চ সহযোগী-মাহমুদুল হাসান মাসুম, আলো-এসএম অঙ্গন, কাজী নজরুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈকত, নিশি, পপি, গোলাম সারোয়ার, আনিস, অবনী, মেহেদী, রিজু, নাহিয়ান, মেকাপ-জনি সেন এবং শিল্প নির্দেশনা-সুজন মাহাবুব।
শিল্পকলা একাডেমির তিন মিলনায়তনে তিনটি নাটক ও মহিলা সমিতি মিলনায়তনে একটি নাটকসহ চারটি নাটক মঞ্চায়নের পাশাপাশি উৎসবের সপ্তম দিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একাডেমির উন্মুক্ত মঞ্চ ও সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে ছিল মনোমুগ্ধকর নাচ,গান ও আবৃত্তির পরিবেশনা।