ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বরগুনার আদালতে চার্জশীট গ্রহণ

রিফাত হত্যা মামলায় ৯ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

প্রকাশিত: ১১:১৪, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯

রিফাত হত্যা মামলায় ৯ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

নিজস্ব সংবাদদাতা, আমতলী, বরগুনা, ১৮ সেপ্টেম্বর ॥ বহুল আলোচিত বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছে আদালত। বাদী পক্ষের অভিযোগপত্র নিয়ে আপত্তি না থাকায় বুধবার দুপুর দুইটার দিকে শুনানি শেষে বরগুনার আদালতের বিচারক সিরাজুল ইসলাম গাজী এই অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। দুই পাটে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। অপ্রাপ্ত বয়স্ক ১৪ জন এবং প্রাপ্ত বয়স্ক ১০ জনকে আসামি করে এই অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। আগামী ৩ অক্টোবর এই মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছে আদালত। এ সময় আয়শাসহ আট আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সকাল ১০টার পর বরগুনা কারাগার থেকে সাত আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। আর আয়শা বাবার সঙ্গে মোটরসাইকেলে করে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আদালত চত্বরে আসেন। একই সঙ্গে মামলায় পলাতক ৯ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। এছাড়া ৬ আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। আদালত সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ২৬ জুন বরগুনার সরকারী কলেজের সামনে রিফাত শরীফকে তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির সামনে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে সন্ত্রাসীরা। দ্রুত সঙ্কটজনক অবস্থায় বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নেয়া হয়। ওইদিন বিকেলে রিফাত শরীফ মারা যান। এ ঘটনার পরদিন ২৭ জুন নিহত রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বাদী হয়ে বরগুনা থানায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। গত ১ সেপ্টেম্বর আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী মিন্নিসহ ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ হুমায়ুন কবির অভিযোগপত্রটি বরগুনা জেলার জ্যেষ্ঠ বিচারিক আদালতের জেনারেল রেজিস্ট্রার (জিআরও) বাবুল আকতারের কাছে জমা দেন। পূর্বনির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী বুধবার সকালে এ অভিযোগপত্রের শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও মামলার মূল নথি বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে থাকায় শুনানি শুরু হতে বিলম্ব হয়। বেলা ১১টার দিকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোঃ সিরাজুল ইসলাম গাজী অভিযোগপত্র শুনানির জন্য দুপুর দুইটা নির্ধারণ করেন। শুনানির জন্য আদালতে হাজির করা হয় বরগুনা জেলা কারাগারে থাকা রিফাত হত্যাকা-ে অভিযুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক মোঃ রাকিবুল হাসান ওরফে রিফাত ফরাজী, আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজোয়ান আলী খান ওরফে টিকটক হৃদয়, মোঃ হাসান, রাফিউল ইসলাম রাব্বি, মোঃ সাগর। এছাড়া এ মামলায় জামিনে মুক্ত থাকা আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি ও আরিয়ান হোসেন শ্রাবণ আদালতে উপস্থিত ছিলেন। শুনানি শুরু হওয়ার আগেই তারা সবাই দাঁড়ান আদালতের কাঠগড়ায়। নিহত রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বলেন, অভিযোগ পত্রটি গ্রহণ করায় আমি খুবই আনন্দিত। আভিযোগপত্র নিয়ে আমার কোন অভিযোগ নেই। বাকি আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তিনি। তিনি ন্যায়বিচার পেতে আশাবাদী। এ বিষয়ে আসামি পক্ষের আইনজীবী এ্যাডভোকেট মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, রিফাত হত্যা মামলায় অভিযুক্ত সকলের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন আদালত। এদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ-বিধি ৩০২, ৩৪, ১৩৯, ১২০ (বি-১) ধারায় অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ মামলায় শিশু ও কিশোর অভিযুক্তদের অভিযোগ আমলে নিয়ে সেই আদেশ শিশু আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রিফাত হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ২৪ জনের মধ্যে ১৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া এ মামলার প্রাপ্তবয়স্ক অভিযুক্ত মোঃ মুছা, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, মোঃ হাসান, কিশোর অভিযুক্ত মোঃ আবদুল্লাহ ওরফে রায়হান, মোঃ সাইয়েদ মারুফ বিল্লাহ ওরফে মহিবুল্লাহ, মারুফ মল্লিক, প্রিন্স মোল্লা, রাকিবুল হাসান রিফাত হাওলাদার, মোঃ নাইম পলাতক রয়েছেন। আর এ মামলার এজাহারে প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এ মামলার বাদী পক্ষের নিয়োজিত আইনজীবী এ্যাডভোকেট এম মজিবুল হক কিসলু বলেন, শুনানি শেষে আদালত রিফাত হত্যা মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন। একই সঙ্গে এ মামলায় অভিযুক্ত পলাতক নয় আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। এ মামলার চার্জ গঠনের জন্য আগামী ৩ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন আদালত। ওইদিন সকল অভিযুক্তকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, রিফাত হত্যা মামলার শুনানির আগে এ মামলায় অভিযুক্ত মোঃ সাগর, আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজোয়ান আলী খান ওরফে টিকটক হৃদয়, মোঃ হাসান, রাফিউল ইসলাম রাব্বির জামিনের আবেদন করা হয়। পরে আদালত শুনানি শেষে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
×