ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

জিম্বাবুইয়েকে আবার হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১১:০৩, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯

জিম্বাবুইয়েকে আবার হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে জিতলেই ত্রিদেশীয় টি২০ সিরিজের ফাইনালে খেলা নিশ্চিত হয়ে যাবে। এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে জিম্বাবুইয়েকে ৩৯ রানে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে খেলা নিশ্চিত করে। সঙ্গে আফগানিস্তানও ফাইনালে উঠে যায়। বাংলাদেশের ফাইনালে ওঠার কারিগর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তিনি দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন। তার ৬২ রানের ইনিংসের সঙ্গে ওপেনার লিটন কুমার দাসের (৩৮) দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ ৭ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৭৫ রান করে। মুশফিকের ব্যাট থেকে আসে ৩২ রান। জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে টি২০তে সর্বোচ্চ স্কোর গড়ে বাংলাদেশ। এর আগে ২০১৩ সালে বুলাওয়েতে ৭ উইকেটে ১৬৮ রান করে যে জিতেছিল বাংলাদেশ, সেটি জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে টি২০তে সর্বোচ্চ স্কোর ছিল। ১৭৬ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে শফিউল ইসলাম (৩/৩৬) ও অভিষিক্ত লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লবের (২/১৮) দুর্দান্ত বোলিংয়ে ২০ ওভারে ১৩৬ রান করে অলআউট হয় জিম্বাবুইয়ে। রিচমন্ড মুতোম্বদজি ৫৪ রান করেন। জিম্বাবুইয়ের সামনে রানের পাহাড়। সেই পাহাড় পাড়ি দেয়া কী এত সহজ! দলের ৮ রানেই যখন ৩ উইকেট পড়ে যায়, তা আরও কঠিন হয়ে পড়ে। তৃতীয় উইকেটে অধিনায়ক হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ও মুতোম্বদজি মিলে বিপদ এড়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কাজ হয়নি। দলের ৩৫ রানে মুতোম্বদজিকে ফিরিয়ে দিয়ে অভিষেক ম্যাচে প্রথম উইকেট নেন আমিনুল। এরপর ৪৪ রানের মধ্যে যখন রায়ান বার্ল ও মাসাকাদজাও (২৫) আউট হন, তখন জিম্বাবুইয়ের সব আশাই শেষ হয়ে যায়। রিচমন্ড মুতোম্বদজি শেষমুহূর্তে ব্যাটিং ঝলক দেখান। ১৪তম ওভারে নিজের চতুর্থ ওভার করতে আসেন সাকিব। এই ওভারে দুই ছক্কা ও এক বাউন্ডারি হাঁকান মুতোম্বদজি। কাইল জার্ভিসকে নিয়ে অষ্টম উইকেটে ৫০ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন মুতোম্বদজি। তিনি ৩২ বলে ৫৪ রানও করেন। জিম্বাবুইয়ে ইনিংসের একমাত্র হাফসেঞ্চুরি করেন মুতোম্বদজি। দলের যখন ১২৪ রান হয়, তখন জার্ভিসের সঙ্গে ৫৮ রানের জুটি গড়ে শফিউলের বলে আউট হয়ে যান। টি২০তে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেন শফিউল। জার্ভিসও ব্যাট হাতে জৌলুস ছড়িয়ে ২০ বলে ২৭ রান করেন। জার্ভিসকে আউট করে মুস্তাফিজ ক্যারিয়ারে ৫০ উইকেট শিকার করেন। শেষ বলে এনডিলোভুকে বোল্ড করে দিয়ে জিম্বাবুইয়েকে অলআউট করে দেন মুস্তাফিজ। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বুধবার টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে বাংলাদেশ। তিন পরিবর্তন নিয়ে খেলে বাংলাদেশ। এর মধ্যে একজন পুরোপুরি ব্যাটসম্যান। তিনি অভিষিক্ত নাজমুল হোসেন শান্ত। একজন স্পিন অলরাউন্ডার। তিনি অভিষিক্ত আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। আরেকজন পেসার। তিনি অভিজ্ঞ শফিউল ইসলাম। প্রায় দুই বছর পর টি২০ খেলার সুযোগ পান শফিউল। একাদশের বাইরে থাকেন দলের বাইরে চলে যাওয়া সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান রুম্মন ও তাইজুল ইসলাম। একজন লেগ স্পিনারের কমতি দলে আছে। তা ভালভাবেই প্রভাব বিস্তার করে। আর তাই আমিনুলকে সুযোগ করে দেয়া হয়। শান্ত, আমিনুল ও শফিউলের দিকে ভালই নজর থাকে। শান্ত স্বস্তি দিতে না পারলেও লিটনের সঙ্গে যে ৪৯ রানের জুটি গড়েন, তাতে শুরুতেই উইকেট পড়ার ধুম থেকে মুক্ত হওয়া যায়। আমিনুল ও শফিউলের বোলিংয়ের দিকেই আসল নজর থাকে। শফিউল প্রথম বলেই উইকেট নিয়ে নিজের ফেরার বার্তা দেন। আমিনুলও প্রথম ওভারেই উইকেট নিয়ে জৌলুস ছড়ান। লিটন কুমার দাস শুরুতেই ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং করতে থাকেন। প্রথম ওভারেই জিম্বাবুইয়ে ‘রিভিউ’ নিয়েও কাজ হয়নি। দ্বিতীয় ওভারে লিটন দুটি চার হাঁকান। তৃতীয় ওভারে প্রথম তিন বলেই দুটি ছক্কা ও একটি চার হাঁকিয়ে বসেন লিটন। স্পিনার এনডিলোভুর করা ওভারটিতে ২১ রান আসে। লিটনই ২০ রান নেন। মুহূর্তেই ৩ ওভারে দল ৩২ রানে চলে যায়। লিটনের ব্যাট থেকেই আসে ৩০ রান। শান্তও একইভাবে খেলার চেষ্টা করেন। কিন্তু পঞ্চম ওভার পর্যন্তই উইকেটে টিকে থাকতে পারেন। নিজের স্কোরবোর্ডে ১১ রান হতেই কট এ্যান্ড বোল্ড হয়ে যান শান্ত। নিজের অভিষেক ম্যাচটিতে বড় ইনিংস খেলতে পারেননি শান্ত। তার দিকে নজর ছিল। সৌম্যের পরিবর্তে ওপেনিংয়ে নেমে কী করতে পারেন, সেদিকে দৃষ্টি ছিল। কিন্তু বেশিদূর এগিয়ে যেতে পারেননি তিনি। তবে লিটনের সঙ্গে ৪৯ রানের জুটি গড়েন। যা বাংলাদেশকে আশায় ভাসায়। শান্ত আউটের পর লিটনও খুব বেশিদূর যাননি। ব্যাটিং ঝড় তোলেন। কিন্তু সেই ঝড় ৩৮ রানেই থেমে যায়। ৬ ওভারে ৫৫ রান আসে। লিটনই করেন ২২ বলে ৩৮ রান। তার ঝড় যদি চলত, তাহলে স্কোরবোর্ড আরও মজবুত হতো। কিন্তু ঝড় থামিয়ে দিলেন পেসার এমপফু। শান্তর কিছুক্ষণ পরই লিটন আউট হওয়াতে রানের গতিও কমে যায়। সাকিবও (১০) যখন দ্রুতই সাজঘরে ফেরেন, তখন চাপ তৈরি হয়ে যায়। মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ মিলে চাপ দূর করেন। মুশফিক অফফর্ম থেকে ফর্মে ফেরার চেষ্টা করেন। আর গত ম্যাচেই ৪৪ রানের ইনিংস খেলা মাহমুদুল্লাহ আবারও ব্যাটিং ঝলক দেখাতে থাকেন। দুইজন মিলে দলকে ১২ ওভারে ১০০ রানে নিয়ে যান। ৪০ বলে ৫০ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন দুইজন। উইকেটে থিতু হয়ে স্কোরবোর্ডে দ্রুত রানও জমা করতে থাকেন। দুইজনই অসাধারণ ব্যাটিং করতে থাকেন। দলকে দেড়শ’ রানের কাছাকাছিও নিয়ে যান। যখন ১৪৩ রান হয়, তখন মুতোম্বদজির ঘূর্ণি বলটি লাফিয়ে উঠে মুশফিকের ব্যাটের ছোঁয়া লেগে উইকেটরক্ষক টেইলরের কাছে যায়। দুর্দান্ত ক্যাচ ধরেন টেইলর। চতুর্থ উইকেটে দুইজনের ৭৮ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি হয়। মাহমুদুল্লাহ যে কিছু একটা করবেন তার ব্যাটিং দেখেই বোঝা যায়। আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিং করেন। নিজের ৩৭ বলে গিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে হাফসেঞ্চুরি করেন মাহমুদুল্লাহ। ফর্মহীনতায় ভুগছিলেন। শেষপর্যন্ত রানের দেখা পেতে শুরু করেছেন। তবে আফিফ যে সিরিজের প্রথম ম্যাচটিতে ব্যাটিং ঝড় তোলেন, তা আর দেখা যাচ্ছে না। ৭ রানের বেশি এদিনও করতে পারেননি। তবে মাহমুদুল্লাহ ব্যাটিংয়ে থাকায় সমস্যাও হয়নি। মাহমুদুল্লাহই দলকে টেনে নিয়ে যেতে থাকেন। আর ১০ রান হতেই মাহমুদুল্লাহও আউট হয়ে যান। আউট হওয়ার আগে ৪১ বলে ১ চার ও ৫ ছক্কায় ৬২ রানের ইনিংস খেলেন। যে ইনিংসটিই দলকে অনেক দূর নিয়ে যায়। ইনিংসের তিন বল বাকি থাকতে মাহমুদুল্লাহ আউটের পরের বলেই মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও (২) সাজঘরে ফেরেন। তাতে টানা দুই বলে দুই উইকেট নেয়ায় কাইল জার্ভিসের হ্যাটট্রিকেরও সম্ভাবনা জেগে যায়। কিন্তু মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন হ্যাটট্রিক হতে দেননি। উল্টো ইনিংসের শেষ বলে চার হাঁকান। ১৭৫ রান করে বাংলাদেশ। তাতে করে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে টি২০তে সর্বোচ্চ স্কোর গড়ে। এই স্কোর অতিক্রম করতে পারেনি জিম্বাবুইয়ে। বাংলাদেশের ফাইনালে ওঠার সঙ্গে আফগানিস্তানেরও শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে খেলা নিশ্চিত হয়ে যায়। জিম্বাবুইয়ে টানা তিন ম্যাচে হারায় সিরিজ থেকে ছিটকে পড়ে। হাতে থাকা আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচটিতে শুক্রবার জিম্বাবুইয়ে জিতলেও ২ পয়েন্ট হবে। বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের চার পয়েন্ট করে হয়ে গেছে। জিম্বাবুইয়েকে হারিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে বাংলাদেশ।
×