ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

এগিয়ে চলেছে বিমান

প্রকাশিত: ১০:৫৫, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 এগিয়ে চলেছে বিমান

আজাদ সুলায়মান ॥ কোন ধরনের ফ্লাইট বাতিল না করে ৬৬ হাজারেরও বেশি হজযাত্রী পরিবহন করেছে বিমান। অন্যান্য বছরের মতো নানা আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও কোন ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতি ছাড়াই নিরবচ্ছিন্ন হজ ফ্লাইট পরিচালনার মতো কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এ ছাড়া এবারই প্রথম হজযাত্রীদের ভাড়া কমানোর মতো ঝুঁকি নিয়েও শেষ পর্যন্ত রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আয় করেছে বিমান। এ বছর শুধু হজ খাত থেকেই বিমান আয় করেছে ৮১৫ কোটি টাকা। যা অতীতের যে কোন পরিমাণের চেয়ে বেশি। টিকেটের দাম কমানোর মতো ঝুঁকি নিয়েও বিমান হজ ফ্লাইটে লোকসানের আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে প্রত্যাশিত লাভও করেছে। সার্বিক বিচারে বিমানের এমন সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্বীকৃতি ও লভ্যাংশ প্রদান করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সার্বিক দিক-নির্দেশনায় প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী ও সচিব মহিবুল হকের সর্বক্ষণিক তদারকিতে এবার বিমান সত্যিকার অর্থেই হজযাত্রীদের প্রত্যাশিত মানের সেবা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে। হজ পরবর্তী বিমানের অন্যান্য কার্যক্রমে একই ধারা অব্যাহত রাখার স্বার্থে আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সচিব মহিবুল হক। তার ভাষায়, প্রধানমন্ত্রী বিমানকে নতুন উচ্চতায় দেখতে চান। আমরা সবাই সে লক্ষ্য অর্জনেই কাজ করছি। সামনে আরও বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। জানা গেছে, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত হজযাত্রী পরিবহন করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এ বছর বিমানে ৬৩ হাজার ৫৯৯ হজযাত্রী পরিবহনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে বিমান ১ হাজার ২৭০ সরকারী প্রতিনিধি ও সৌদি এয়ারলাইন্সের ১ হাজার ৪১৭ হজযাত্রীসহ মোট ৬৬ হাজার ২৮৬ জনকে বহন করেছে। গত ৪ আগস্ট বিকেল ৪টায় বোয়িং-৭৭৭-৩০০-ইআর উড়োজাহাজে বিমানের শেষ হজ ফ্লাইট ঢাকা ছেড়ে যায়। ৪ জুলাই থেকে শুরু থেকে বিমান ১৪৯ ডেডিকেটেড ও ৩২ শিডিউল ফ্লাইটসহ ১৮১ ফ্লাইট পরিচালনা করে। এছাড়া বিমান চলতি হজ মৌসুমে হজযাত্রীদের সুবিধার্থে চট্টগ্রাম থেকে জেদ্দা রুটে ১২ ফ্লাইট, সিলেট থেকে জেদ্দা রুটে ২ ফ্লাইট, চট্টগ্রাম থেকে মদিনা রুটে সাতটি ফ্লাইট ও সিলেট থেকে মদিনায় ১ ফ্লাইট পরিচালনা করে। হজ শেষে আল্লাহর মেহমানদের ফিরিয়ে আনা শুরু হয় ১৭ আগস্ট। ফিরতি হজ ফ্লাইট শেষ হয় গতকাল রবিবার। হজের বহির্গামী ফ্লাইটের মতোই ফিরতি ফ্লাইটও সফলতার সঙ্গে অপারেট করা হয়েছে বলে জানিয়ে সচিব মহিবুল হক বলেছেন, এই প্রথমবারের মতো বিমান হজযাত্রীদের প্রতি বিশেষ সহানুভূতির নিদর্শন হিসেবে টিকেটের দাম কমিয়েছে। এটা ছিল একটা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। কেননা সাধারণত বিমানের টিকেট সব সময় বাড়ার প্রবণতা থাকে। সে প্রবণতা উপেক্ষা করে সাড়ে ৬৩ হাজার হজযাত্রীর টিকেটের দাম কমানোর ফলে লোকসান হওয়ার আশঙ্কা ছিল কমপক্ষে ৬৩ কোটি টাকা। কিন্তু আল্লাহর রহমতে সেই লোকসানের আশঙ্কাকে অমূলক প্রমাণ করে আরও কয়েক কোটি টাকা লাভ করা সম্ভব হয়েছে। এখানে একটা বিষয় অবশ্যই উল্লেখ্য, এবার মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে বিমানের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরলস প্রচেষ্টা ও পেশাদারিত্বের দরুন সঠিক সময়ে সব ফ্লাইট অপারেট করা সম্ভব হয়েছে। যে কারণে এবার একটি ফ্লাইটও বাতিল করতে হয়নি। এটা একটা নতুন রেকর্ড। প্রত্যেকে যদি তার দায়িত্বটুকু সঠিকভাবে পালন করে- তাহলেই এ ধরনের সফলতা সম্ভব- মন্ত্রণালয় শুধু এটা নিশ্চিত করতে চায়। শুধু বিমানের কাউকে শাস্তি দেয়া কিংবা অহেতুক নজরদারি খবরদারি যে মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য নয়- তার বড় প্রমাণ দিয়েছে প্রতিটি বিমানকর্মীর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পুরস্কার দেয়ার মধ্যে দিয়ে। একটা কথা খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই, ‘দুষ্টের দমন শিষ্টের লালন’ নীতিতেই চলবে বিমানের সার্বিক কার্যক্রম। আগামী বছরের হজের চেয়েও সুন্দর ও সফল হবে। এ বছর বিমানের ফ্লাইট বাতিল না হওয়ার বিষয়ে বিমানের একজন পরিচালক জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার সত্যিকার অর্থেই বিমানের ব্যবস্থাপনা ছিল বেশ সুশৃঙ্খল ও সুপরিকল্পিত। বিশেষ করে যেভাবে বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী ও সচিব মহিবুল হক প্রতি মুহূর্তে ফ্লাইটের তদারকি করেছেন সেটা ছিল অপ্রত্যাশিত। সামান্য ভুল-ত্রুটির আশঙ্কা দেখা দিলেই তাদের ছুটে যেতে দেখা গেছে বিমানবন্দর ও হজ ক্যাম্পে। হজের আগেই ভিসা প্রাপ্তির সময়েই বিমানের টিকেট নিশ্চিত করার মতো সিদ্ধান্ত নেয়ার ফলেই এবার আর কোন এজেন্সি সাহস করেনি ফ্লাইট বাতিলের। যদি কেউ করত- তাহলে তাকে বড় ধরনের জরিমানা গুনতে হতো। বিমান জানিয়েছে, এবারই প্রথম হজ ফ্লাইট সফল করার জন্য বিমানের ২৩৫০ কর্মচারীকে ৫ হাজার টাকা করে বিশেষ সম্মানী প্রদান করা হয়েছে। এতে ১ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে। ঈদের আগে এ ধরনের স্বীকৃতিতে তাদের মাঝেও ছিল প্রাণ চাঞ্চল্য ও আনন্দের হাসি। তারা ফিরতি ফ্লাইটেও একই মনোভাবে সেবা দিয়ে বিমানকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। একটি দক্ষ ও গতিশীল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই বিমানকে প্রধানমন্ত্রীর কাক্সিক্ষত এয়ারলাইন্সে পরিণত করাই এখন আমাদের সবার টার্গেট বলে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। এজন্য ইতোমধ্যে অতিরিক্ত সচিব মোকাব্বির হোসেন খানের মতো একজন প্রতিভাবান ও আত্মপ্রত্যয়ী সিইও নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
×