ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হয়রানি কমবে ॥ ফি আগের মতোই থাকবে

২৮ দিনে জমির নামজারি ॥ সহজীকরণ হচ্ছে পদ্ধতি

প্রকাশিত: ১০:৪৮, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

২৮ দিনে জমির নামজারি ॥ সহজীকরণ হচ্ছে পদ্ধতি

তপন বিশ্বাস ॥ সহজীকরণ হচ্ছে ভূমির নামজারির পদ্ধতি। সেবার সময়ও কমিয়ে আনা হচ্ছে। এতে গ্রাহক হয়রানিও কমবে। পঁয়তাল্লিশ দিনের পরিবর্তে আটাশ দিনের মধ্যে নামজারি সম্পন্ন করবেন সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড)। দলিল নিবন্ধনের সঙ্গে জমির নামজারি ফি জমা দেয়া হবে। একই সঙ্গে দলিল গ্রহীতা দলিলের তিনটি কপি সাবরেজিস্ট্রি অফিসে জমা দেবেন। তিন কপি দলিলের এক কপি থাকবে সাবরেজিস্ট্রি অফিসে। আরেক কপি পাবেন দলিল গ্রহীতা। অপর কপিটি যাবে এসিল্যান্ডের কাছে। এসিল্যান্ডের কাছে পাঠানো কপির সঙ্গে ভূমি রেজিস্ট্রেশনের সময় নামজারি ফি বাবদ যে টাকা জমা দেয়া হয়েছে তার রশিদ জুড়ে দেয়া হবে। একই সঙ্গে ল্যান্ড ট্রান্সফার নোটিস (এলটি) জেলা প্রশাসকরা এসিল্যান্ডের কাছ থেকে সংগ্রহ করে তা প্রতিমাসে প্রতিবেদন আকারে ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। মাঠ পর্যায়ে সেবা সহজীকরণের জন্য এই ব্যবস্থা নিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। তবে নামজারি ফি আগের মতোই বহাল থাকবে। সম্প্রতি ভারপ্রাপ্ত ভূমি সচিব মাকছুদুর রহমান পাটোয়ারির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত ভূমি সচিব মোঃ মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারি বলেন, জনকল্যাণের জন্যই আমরা নামজারির সময়সীমা কমিয়েছি। এখন আর হয়রানির সুযোগ থাকবে না। নামজারি ফি সারা দেশের জন্য অভিন্ন রাখা বিষয়ে সচিব বলেন, আমরা কল্যাণ রাষ্ট্রের নাগরিক। সব ক্ষেত্রে সরকার জনগণের কাছ থেকে বেশি পয়সা নিতে হবে বিষয়টি এমন নয়। জমির শ্রেণী পরিবর্তনের বিষয়ে সচিব বলেন, আঞ্চলিক নাম বাদ দিয়ে প্রমিত বাংলায় জমির শ্রেণীর নাম করণ করা হবে। সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নামজারি ভূমি ব্যবস্থাপনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। এসিল্যান্ড, কানুনগো, তহশিলদার, নাজির এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা সম্পৃক্ত। দীর্ঘদিন নামজারি ফি কম থাকলেও ২০১০ সালে সাবেক ভূমি সচিব আতাহারুল ইসলাম ৫৪০ টাকা নির্ধারণ করেন। পরবর্তীতে তা বাড়িয়ে করা হয় ১ হাজার ১শ’ ৫০ টাকা। বর্তমানে এটাই বহাল রয়েছে। সঙ্গে বিশ টাকার কোর্ট ফি’ও জমা দিতে হয়। নামজারির আবেদন করতে হয় এসিল্যান্ডের দফতরে। সঙ্গে দলিলের কপি, জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি এবং ভূমি মালিক কিংবা মালিকগণের ছবি জমা দিতে হয়। সহকারী কমিশনারের দফতরে আবেদনের কপিটি যাছাই-বাছাইয়ের জন্য পাঠানো হয় সংশ্লিষ্ট তহশিল অফিসে। তহশিল অফিসে জমির মালিকানা সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিশ্চিত করার সময় ভূমি মালিককে দলিলের মূল কপিসহ নির্ধারিত তারিখে উপস্থিত থাকতে হয়। তহশিলদার জমির মালিকাসহ যাবতীয় বিষয় যাছাই-বাছাই করে করে এসিল্যান্ডকে নির্ধারিত ফরম ও ছকে লিখিত নামজারি প্রস্তাব পাঠান। পরবর্তীতে আবেদনটি নামজারি প্রস্তাব আকারে এসিল্যান্ড অফিসে পাঠানো হয় এবং কানুনগোর মাধ্যমে এসিল্যান্ডের কাছে নামজারির প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়। এসিল্যান্ড অনুমোদনের সময়ও ভূমি মালিককে দলিলের মূল কপিসহ এসিল্যান্ড অফিসে উপস্থিত থাকতে হয়। এসিল্যান্ড নামজারির প্রস্তাবটি অনুমোদন করার পর নামজারি প্রস্তাবের শিটটি ফের তহশিল অফিসে পাঠানো হয়। ওই সময় ভূমি মালিককে নামজারি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সংক্রান্ত নামজারি প্রস্তাবের মূল শিটটি দেয়া হয়। ওই নামজারি প্রস্তাবের শিটে জমির মালিকানা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যাদি থাকে এবং ভূমি মালিক ওই শিটটি সংরক্ষণ করবেন। ওই শিটের একটি ফটোকপি নিয়ে ফের ভূমি মালিককে যেতে হয় তহশিল অফিসে তখন তহশিলদার এসিল্যান্ডের অনুমোদিত নামজারি প্রস্তারে শিটের ফটোকপি গ্রহণ করেন এবং অনুমোদিত নামজারি প্রস্তাবের শিটের ভিত্তিতে খতিয়ান খোলেন। খতিয়ানে যার কাছ থেকে জমিটি কেনা হলো, যতটুকু কেনা হলো তা বর্তমান মালিকের নামে খারিজ করা হয়। একই সঙ্গে বর্তমান মালিক ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করে নিজের নামে দাখিলা সংগ্রহ করেন। এর পর ওই খতিয়ানের কপিটি নিয়ে ফের আসতে হয় এসিল্যান্ড অফিসে। নির্ধারিত ফরমপূরণ করে ১ হাজার ১শ’ ৫০ টাকা নামজারি ফি জমা নেন নাজির। ফি জমা দেয়ার সময় খতিয়ানের কপি নাজিরের কাছে জমা দিতে হয়। ২/৩ দিন পর ফের ভূমি মালিককে গিয়ে খতিয়ানের মূলকপি নাজিরের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে হয়। নামজারির এই বিশাল প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপেই বিশেষ সুবিধা দিতে হয় ভূমি মালিককে। বর্তমানে রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল নিবন্ধনের সময় দুই কপি দলিল জমা দেয়ার নিয়ম। এক কপি সাবরেজিস্ট্রার অনুমোদন করে রেকর্ড রুমে সংরক্ষণের জন্য পাঠাবেন। অপর কপি নতুন করে জমির যিনি মালিক হবেন তাকে অনুমোদন করে দেয়া হবে। নতুন উদ্যোগ ॥ নতুন করে রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল নিবন্ধনের সময় দুই কপি দলিল স্থলে তিন কপি দলিল জমা দিতে হবে। এক কপি সাবরেজিস্ট্রার অনুমোদন করে রেকর্ড রুমে সংরক্ষণের জন্য পাঠাবেন। একটি কপি নতুন করে ভূমির যিনি মালিক হবেন তাকে অনুমোদন করে দেয়া হবে। অপর কপিটি এল্টি নোটিসসহ নামজারি ফি আদায়ের রশিদসমেত এসিল্যান্ডের কাছে নামজারির জন্য পাঠানো হবে। আটাশ দিনের মধ্যে নামজারি সম্পন্ন করে তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। ভূমিমালিকগণ ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে খতিয়ানের কপি সংগ্রহ করবেন। এতে জনদুর্ভোগ এবং হয়রানি লাগব হবে বলে মনে করছে ভূমি মন্ত্রণালয়। প্রবাসী বাংলাদেশীদের নামজারির আবেদন দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। প্রতিমাসে নতুন এই প্রক্রিয়ায় কতগুলো নামজারি কেস নিষ্পত্তি করা হয়েছে সে তথ্য ডিসিরা এসিল্যান্ডের কাছ থেকে সংগ্রহ করবেন এবং ভূমি মন্ত্রণালয়কে প্রতিবেদন আকারে অবহিত করবেন। এছাড়া ভূমির শ্রেণী সংখ্যা ১৫৩ থেকে নামিয়ে ১০টিতে আনা হবে। যে সমস্যা রয়েই গেল ॥ ভূমির পরিমাণ যাইহোক, যে স্থানেই হোক নামজারি ফি সারা দেশের জন্য অভিন্ন থেকে যাচ্ছে। চরাঞ্চলের জমির বিঘা মাত্র কয়েক হাজার টাকা। অথচ ঢাকাসহ মহানগরীর জমির কাঠা প্রতি মূল্য কোটি কোটি টাকা। রেজিস্ট্রেশন ফিও অনেক বেশি। কিন্তু নামজারি ফি থাকছে মাত্র ১ হাজার ১৫০ টাকা। এখানে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অঞ্চল বা স্থান বা মহানগরী ও মফস্বল উপজেলা পর্যায়ের কিংবা চরাঞ্চলের জমির নামজারি ফি আলাদা হওয়া একান্তই অপিরহার্য বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
×