নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর ॥ রংপুর জেলা জজ কোর্টের বিশেষ পিপি ও আওয়ামীলীগ নেতা এ্যাড. রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবুসোনা হত্যা মামলায় সরকারী কৌশুলী (পিপি) এবং রাষ্ট্র নিযুক্ত আসামী পক্ষের আইনজীবি‘র মধ্যে যুক্তি তর্ক শেষ হয়েছে। সোমবার যুক্তি তর্ক শেষ হলে রংপুরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক আগামী ২৯ জানুয়ারী মঙ্গলবার রায় ঘোষনার দিন ধার্য্য করেছেন।
রংপুরের চাঞ্চল্যকর বাবুসোনা হত্যা মামলায় ৩৭জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহন শেষে সোমবার যুক্তি তর্ক সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন এ মামলার সরকারী কৌশুলী (পিপি) আব্দুল মালেক।
রংপুরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এই মামলার স্বাক্ষীদের স্বাক্ষ্য গ্রহন শেষে যুক্তি তর্ক করা হয়েছে। এ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ এ বি এম নিজামুল হক স্বাক্ষীদের স্বাক্ষ্য গ্রহন এবং উভয় পক্ষের আইনজীবিদের যুক্তি তর্ক শেষে বিজ্ঞ বিচারক আগামী ২৯ জানুয়ারী মঙ্গলবার রংপুরের চাঞ্চল্যকর আইনজীবি বাবুসোনা হত্যা মামলার রায় ঘোষনার দিন ধার্য্য করেছেন।
যুক্তি তর্ক উপস্থাপনকালে সরকারী কৌশুলী (পিপি) আব্দুল মালেক স্বাক্ষীদের জবানবন্দী, জব্দকৃত আলামত এবং বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত উপস্থাপনকালে বাবুসোনার মর্মান্তিক মৃত্যু বর্ণনাকালে নিহত আইনজীবিরা, তাদের সহকর্মী, বাবুসোনার ছোট ভাই ও দু‘বোন কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এসময় আদালত প্রাঙ্গনে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
রংপুর সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারী কৌশুলী (পিপি) আব্দুল মালেক জানান, গত অক্টোবর মাসের ৩০ তারিখ থেকে এই হত্যা মামলার স্বাক্ষ্য গ্রহন শুরু করা হয়েছে। এর আগে গত ২১ অক্টোবর অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে বিচার কার্যক্রম শুরুর আদেশ দেন এ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক।
যুক্তি তর্ক শুরুর আগে কড়া পুলিশী প্রহরার মধ্য দিয়ে এই হত্যা মামলার বেঁচে থাকা একমাত্র আসামী স্নিগ্ধা সরকার ওরফে দীপাকে বিজ্ঞ আদালতে হাজির করা হয়। এদিকে, আদালতে যুক্তি তর্ক চলাকালে রংপুর আইনজীবি সমিতির শতাধিক আইনজীবি সদস্য বিজ্ঞ আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল মালেক এবং তাকে সহযোগিতা করেন শাহ মো: নয়ন্নুর রহমান টফি, অ্যাড.উৎপল আদনান ইসরাম, অ্যাড. জাহাঙ্গীর আলম তুহিন, অ্যাড. ফিরোজ কবীর গুঞ্জন, অ্যাড. সাজেদুর রহমান তাতা, অ্যাড. শিরিন, অ্যাড. প্রশান্ত কুমার রায়, অ্যাড. আব্দুস ছাত্তার, অ্যাড. আইনুন নাহার পাপড়ী, অ্যাড. শহিদুল ইসলাম, অ্যাড. মাহমুদুল ইসলাম রানা সহ অর্ধশতাধিক আইনজীবি এবং অপরদিকে আসামি পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন স্টেট ডিফেন্স (রাষ্ট্র নিযুক্ত) আইনজীবী বসুনিয়া মো. আরিফুল ইসলাম স্বপন।
সরকারী কৌশুলী আব্দুল মালেক জানান, গত বছরের ২৯ মার্চ বৃহস্পতিবার রাতে রংপুর বারের সহকারী সম্পাদক ও সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক বাবু সোনাকে ১০টি ঘুমের ওষুধ খাইয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। এরপর তার লাশ তাজহাট মোল্লাপাড়ায় প্রেমিক শিক্ষক কামরুলের ভাইয়ের নির্মাণাধীন বাড়ির ঘরের মেঝেতে পুঁতে রাখা হয়।
পরবর্তীতে ৩ এপ্রিল মধ্যরাতে বাবুসোনার স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার ওরফে দীপাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র্যাব আটক করে। তিনি এ হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করেন এবং লাশের অবস্থান সম্পর্কে তাদের জানান। সেই সূত্র ধরে ওই দিন রাতে মোল্লাপাড়ার একটি বাড়ির মেঝে খুঁড়ে নিহত আইনজীবি বাবুসোনার গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় পুলিশ বাবুসোনার স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার ওরফে দিপা, প্রেমিক শিক্ষক কামরুল ইসলাম, বাবুসোনার সহকারী মিলন মোহন্ত, ছাত্র মোল্লাপাড়া এলাকার সবুজ ইসলাম ও রোকনুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করে। দীপার প্রেমিক শিক্ষক কামরুল ইসলাম, বাবুসোনার সহকারী মিলন মোহন্ত কারাগারে বন্দি অবস্থায় মারা যায়। সবুজ ইসলাম ও রোকনুজ্জামান বিনা দোষে খালাস পায়।