ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

১৮ গুণীজন পাচ্ছেন স্বাধীনতা পুরস্কার

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

১৮ গুণীজন পাচ্ছেন স্বাধীনতা পুরস্কার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশ ও জাতির কল্যাণে গৌরবৌজ্জ্বল অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৮ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন ১৮ গুণীজন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকার জন্য রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ এই সম্মাননাপ্রাপ্তদের তালিকায় রয়েছেন সাবেক স্পীকার প্রয়াত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, শহীদ সার্জেন্ট জহরুল হক, কথাশিল্পী সেলিনা হোসেনসহ প্রয়াত ও জীবিত ১৬ বরেণ্য ব্যক্তিত্ব। মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ বছরের স্বাধীনতা পুরস্কারে মনোনীতদের নাম ঘোষণা করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এবারের মনোনীতদের মধ্যে দশজনই মরণোত্তর এ পুরস্কার পাচ্ছেন। আগামী ২৫ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা পুরস্কার তুলে দেবেন সম্মাননাপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও তাঁদের স্বজনদের হাতে। পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ১৮ ক্যারেট মানের পঞ্চাশ গ্রাম স্বর্ণের পদক, পদকের একটি রেপ্লিকা, ৩ লাখ টাকা ও একটি সম্মাননাপত্র প্রদান করা হবে। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য এবার মোট ১২ জনকে দেয়া হচ্ছে স্বাধীনতা পুরস্কার। এই ক্যাটাগরিতে মরণোত্তর এ সম্মাননা পাচ্ছেন সাবেক স্পীকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি দিল্লীতে বাংলাদেশ মিশনের প্রধান হিসেবে অনন্য ভূমিকা রেখেছিলেন। এই খ্যাতনামা কূটনীতিবিদ ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল জাতীয় সংসদে স্পীকারের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৪১তম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করার গৌরব অর্জন করেছিলেন। বহুভাষী এই ব্যক্তি বাংলার পাশাপাশি ইংরেজী, উর্দু, ফরাসী ও ইতালীয় ভাষায় কথা বলায় ছিলেন দারুণ দক্ষ। এছাডা আরবী, স্প্যানিশ, পর্তুগীজ, জার্মান ও ইন্দোনেশীয় ভাষাতেও ছিল তার সম্যক দখল। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য পদকপ্রাপ্ত তালিকায় আছেন দেশের জন্য প্রাণ দেয়া শহীদ বুদ্ধিজীবী এম এম এ রাশীদুল হাসান। স্বাধীনতার পক্ষে সোচ্চার অবস্থানে একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে এই শিক্ষককে ধরে নিয়ে যায় মুখোশধারী পাক হানাদার বাহিনীর সহযোগীরা। এই শিক্ষাবিদ ১৯৩২ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার বডশিজা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। এই শাখায় সম্মাননাপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর সহচর সাবেক সংসদ সদস্য শংকর গোবিন্দ চৌধুরী। মুক্তিযুদ্ধের এই সংগঠক সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে তিনি নাটোরের গবর্নর নিযুক্ত হন। একই শাখায় সম্মাননাপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সাবেক সংসদ সদস্য এম আব্দুর রহিম ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামি ভূপতি ভূষণ চৌধুরী (মানিক চৌধুরী)। তারা প্রত্যেকেই মরণোত্তর এ সম্মাননা পাচ্ছেন। একই ক্যাটাগরিতে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন শহীদ লেফটেন্যান্ট মোঃ আনোয়ারুল আজিম, শহীদ আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, শহীদ মতিউর রহমান মল্লিক, শহীদ সার্জেন্ট জহরুল হক ও কাজী জাকির হাসান। সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ বীরউত্তম ও সাবেক কূটনীতিক আমজাদুল হকও স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য এ পুরস্কার পাচ্ছেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হকের জন্ম নোয়াখালী জেলার সোনাপুর গ্রামে। ১৯৫৬ সালে তিনি পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে যোগদান করেন। পর্যায়ক্রমে উন্নীত হন ‘সার্জেন্ট’ পদে। পরবর্তীতে ১৯৬৭ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় জাতীয় স্বার্থবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হন সার্জেন্ট জহুরুল হক। পরবর্তীতে এই মামলাকেই অভিহিত করা হয় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হিসেবে। যে মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এছাড়া সাহিত্যে এ সম্মাননা পাচ্ছেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, চিকিৎসাবিদ্যায় অধ্যাপক ডাঃ এ কে এমডি আহসান আলী, সমাজসেবায় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান এবং খাদ্য নিরাপত্তায় ড. মোঃ আব্দুল মজিদ এবার স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন। পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে সেলিনা হোসেন প্রখ্যাত নারী ঔপন্যাসিক। তার উপন্যাসে প্রতিফলিত হয়েছে সমকালের সামাজিক ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সঙ্কটের সামগ্রিকতা। বাঙালীর অহঙ্কার ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ তার লেখায় যোগ করেছে নবমাত্রা। অনবদ্য লেখনীর স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন একুশে পদক, বাংলা একাডেমির সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ১৯৭৭ সাল থেকে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবছর এ পুরস্কার দেয়া হচ্ছে।
×