ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তরের পাশাপাশি;###;দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলও;###;বিপর্যস্ত

শীতের তীব্রতা আরও কয়েকদিন

প্রকাশিত: ০৪:৫৫, ১১ জানুয়ারি ২০১৮

শীতের তীব্রতা আরও কয়েকদিন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শীতের কাঁপন যেন থামছেই না। উত্তরের পাশাপাশি দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মানুষও প্রচ- শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে ক্রমেই। কুষ্টিয়া ও যশোর অঞ্চলের ওপর দিয়ে এখনও বয়ে যাচ্ছে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। ঠা-ার পাশাপাশি শীত জনিতরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে অনেকেই। শিশু এবং বৃদ্ধরা শীতে বেশি কাবু হয়ে পড়ছে। প্রতিদিনই ঘটছে মৃত্যুর ঘটনা। এ অবস্থায় আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে আরও কয়েকদিন শীতের তীব্রতা থাকবে। এদিকে রাজধানীতে তাপমাত্রা বাড়লেও শীতের দাপট কমেনি এতটুকুও। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে বুধবার শিশুসহ আরও দুই জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে এক সপ্তাহে সারাদেশে প্রায় অর্ধশত মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তারা জানায়, যশোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ফরিদপুর, মাদারীপুর, টাঙ্গাইল, শ্রীমঙ্গল, সীতাকু-, কুমিল্লা ও ফেনী অঞ্চলসহ রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগ এবং খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বিদ্যমান শৈত্যপ্রবাহ পরিস্থিতি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে সারাদেশে অব্যাহত থাকতে পারে। তবে শৈত্যপ্রবাহের ধরণ যাই হোক না কেন শীতে কাঁপন থেকে রক্ষা পাচ্ছে না খেটে খাওয়া মানুষ। প্রতীক্ষায় রয়েছে কবে শীত যাবে। তারা জানায়, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি বর্তমানে শ্রীলঙ্কা ও তামিলনাড়ু উপকূলের অদূরে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের বর্ধিতাংশ রূপে অবস্থান করছে। এর প্রভাবে মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে তা দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে চুয়াডাঙ্গায় আবারও সর্বনি¤œ তাপমাত্রা নেমে এসেছে। এদিন জেলায় সর্বনি¤œ ৫.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। পাশাপাশি যশোরেও এদিন ৫.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। তাপমাত্রা সর্বনি¤œ পর্যায়ে নেমে নেমে আসার কারণে শৈত্যপ্রবাহ তীব্র আকার ধারণ করেছে। কুড়িগ্রাম থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, ৯ দিনের অব্যাহত শৈত্যপ্রবাহে জনজীবনে স্থবিরতা বিরাজ করছে। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু এবং বৃদ্ধরা। কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে এক শিশুসহ ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। দিনের কিছু সময় সূর্যের দেখা মিললেও বাকি সময় কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকছে এ জনপদ। দিনের বেলায়ও হেডলাইট চালিয়ে চলছে গাড়ি। ঘন কুয়াশার সঙ্গে হিমেল হাওয়া শীতের তীব্রতা বাড়িয়ে দিচ্ছে আরও। ফলে শ্রমজীবী মানুষেরা কাজে বের হতে পারছে না। এ অবস্থায় বিলম্বিত হচ্ছে চাষাবাদ। গরম কাপড়ের অভাবে দুর্ভোগ বেড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষজনের। রেহাই পাচ্ছে না গবাদি পশুরাও। স্টাফ রিপোর্টার নীলফামারী থেকে জানান, সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ১০-এর নিচে থাকায় নীলফামারীসহ তার পার্শ¦বর্তী এলাকায় তীব্র শীত ও শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। ফলে কনকনে হাড়কাঁপানো শীতে কাঁপছে নীলফামারী। দিনমজুররা এখনও কাজে বের হতে পারছে না। ফসলি জমির কাজ স্থবির হয়ে পড়েছে। আবার সন্ধ্যার পর ও ভোরে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা গড়ে ৫-এর মধ্যে নেমে থাকায় মানুষজন চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। বুধবার সূর্যের মুখ দেখা মেলে দুপুর ১২টায়। পরিস্থিতি এমনটাই যে রাস্তাঘাট থাকছে জনশূন্য। প্রচ- শীত ও শৈত্যপ্রবাহের কারণে রবি ফসলের মারাতœক ক্ষতি হয়েছে। মরে যাচ্ছে আলু ক্ষেত। ফলে বাজারে আলুর মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ৭ দিন আগে যে আলু ১০ টাকা কেজি ছিল সেটি এখন ১৮ টাকায় উঠেছে। দিনাজপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, উত্তরের জনপদ হিমালয়ের পাদদেশের বৃহত্তর দিনাজপুর জেলায় মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ চলছে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। তাপমাত্রা বাড়লেও শীতের তীব্রতা থেকেই যাচ্ছে। বুধবার সকালে বাতাসের আর্দ্রতা ১০০ ভাগ থাকলেও বাতাসের গতিবেগ ৭ থেকে ১০ নটিক্যাল মাইল চলমান ছিল। বুধবার দুপুর ২টা থেকে কুয়াশা কমে গিয়ে সূর্যের মুখ দেখা যাওয়ায় জনমনে স্বস্তি দেখা দিয়েছে। তবে বিকেল ৪টার পরে আবার কুয়াশা পড়তে দেখা গেছে। ফলে রাস্তায় যানবাহন চলাচল হেড লাইট জ্বালিয়ে করতে দেখা গেছে। স্টাফ রিপোর্টার রাজশাহী থেকে জানান, তাপমাত্রা সামান্য বাড়লেও শৈত্যপ্রবাহ কাটছে না রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলে। পৌষের শেষে হিমেল হাওয়ার সঙ্গে ঘন কুয়াশা মিলে তৈরি করছে হাড়কাঁপুনি শীত। ফলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় অচলবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। ছিন্নমূল ও কর্মজীবী মানুষেরা বেকায়দায় পড়েছেন সবচেয়ে বেশি। তাপমাত্রা বাড়লেও ভোর থেকে ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে রাজশাহী অঞ্চল। এ সময় সড়ক-মহাসড়কে যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে বেলা ১১টার দিকে সূর্যের মুখ দেখা দিলে ধীরে ধীরে কুয়াশা কেটে যায়। তবে শীতের তীব্রতা না কমায় সকাল থেকে পথের ধারে ছিন্নমূল মানুষদের খড়কুটো জ্বালিয়ে শরীরে উত্তাপ নিতে দেখা গেছে। নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা কম দামে গরম কাপড় কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন মহানগরীর ফুটপাতের দোকানে। নিজস্ব সংবাদদাতা ঠাকুরগাঁও থেকে জনান, পৌষের শেষ দশকে এসে শীতের দাপট বেড়েছে উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে। তীব্র শৈত্যপ্রবাহ আর হিমেল হাওয়ায় সর্বস্থরের মানুষ জবুথবু হয়ে পড়েছে। শীত আর কাঁচের মত স্বচ্ছ ঘন কুয়াশার বিন্দুগুলো ভর করেছে সবুজ প্রকৃতিতে। গত এক সপ্তাহ যাবত দিন-রাত ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে আছে দেশের উত্তর জনপদের এই জেলাটি। মঙ্গলবার রাত থেকেই বৃষ্টির পানির মত কুয়াশা পড়তে শুরু করে। ঘন কুয়াশার কারণে বুধবার ভোর থেকে পথপ্রান্তর ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে। দু’চোখ যেদিকে যায় সেদিকে কুয়াশা ছাড়া আর কিছু দেখা যায়নি। গতকাল তাপমাত্রা ভয়াবহ আকার ধারণ করলেও আজ তাপমাত্রা কিছুটা ছাড় দিয়েছে। আজ সকাল আটটায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তীব্র ঠা-ায় সাধারণ মানুষ জবুথবু হয়ে পড়েছে। মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। মানুষের মত গবাদি পশুর অবস্থাও বেহাল। শীত থেকে রক্ষার জন্য এসব গবাদি পশুর মালিকরা গায়ে চট দিয়েছেন।
×