ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গীবাদ ও শোষণমুক্ত সমাজ গড়তে হবে ॥ রাষ্ট্রপতি

প্রকাশিত: ০২:২৬, ৭ জানুয়ারি ২০১৮

জঙ্গীবাদ ও শোষণমুক্ত সমাজ গড়তে হবে ॥ রাষ্ট্রপতি

সংসদ রিপোর্টার ॥ রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ স্বাধীনতা সমুন্নত ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুজ্জ্বল রাখতে দেশ থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ সম্পূর্ণরূপে নির্মূলের মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজ-প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে বাঙালী জাতিকে আবারও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, একাত্তরের শহীদানদের কাছে আমাদের অপরিশোধ্য ঋণ রয়েছে, আসুন ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে এবং দল-মত-পথের পার্থক্য ভুলে জাতির গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা ও দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরাম্বিত করার মধ্য দিয়ে আমরা লাখো শহীদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করি। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে রবিবার কানায় কানায় পরিপূর্ণ ১৯তম জাতীয় সংসদ অধিবেশনের সূচনা দিনে প্রদত্ত ভাষণে রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জনের যে পথ আমরা পরিক্রমণ করছি, তা আমাদেরকে বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। বিশ্বসভায় ইতোমধ্যে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও সামাজিক অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি অর্জনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটি সম্মানজনক অবস্থানে সমাসীন হয়েছে এবং অচিরেই একটি উন্নত দেশ হিসাবে আপন মহিমায় উদ্ভাসিত হবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বাংলাদেশ মধ্য-আয়ের দেশে পরিণত হবে এবং ২০৪১ সালে বিশ্বসভায় একটি উন্নত দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত হবে- এটাই জাতির প্রত্যাশা। আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী- সুশাসন ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপায়ন এবং সমাজের সকল স্তরে প্রত্যক্ষ জন-সমৃক্তির মধ্য দিয়ে আমরা নির্ধারিত লক্ষ্যসমূহ অর্জনসহ একটি আদর্শ সমাজভিত্তিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনে সক্ষম হব। সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের উপস্থিতিতে সন্ধ্যা ৬টায় কালো হাল্কা এ্যাঁশ কালানের স্যুট-প্যান্ট ও লাল টাই পরিহিত রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সংসদ অধিবেশনে প্রবেশের সময় বিউগলে তাঁর আগমনী বার্তা বাজানো হয়। এ সময় বিউগলে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। অধিবেশনে প্রবেশ করেই রাষ্ট্রপতি স্পীকারের ডান পাশে রাখা নির্ধারিত আসনে আসন গ্রহণ করেন। এরপর ৬টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি তাঁর ১৫৭ পৃষ্ঠাব্যাপী ভাষণের সংক্ষিপ্ত সার তাঁর ভাষণে উত্থাপন করেন। দীর্ঘ ভাষণের সময় মাঝে মাঝেই সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা তুমুল টেবিল চাপড়িয়ে রাষ্ট্রপতিকে উজ্জীবিত রাখেন। ভিভিআইপি লাউঞ্জেও দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ, কূটনীতিক এবং ও সামরিক- বেসামরিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে রাষ্ট্রপতির ভাষণ প্রত্যক্ষ করেন। রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে বর্তমান সরকারের গত চার বছরের উন্নয়ন-সফলতাগুলো বিস্তারিতভাবে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেন। রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণের শুরুতেই দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতা এবং মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সকল মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বলেন, বাংলাদেশ সংবিধান সমুন্নত এবং সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রেখে ২০১৪ সালে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দশম জাতীয় সংসদ গঠিত হয় এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের ওপর দেশ পরিচালিনার গুরুদায়িত্ব অর্পিত হয়। গত মহাজোট সরকারের ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার ’রূপকল্প- ২০২১, দিন বদলের সনদ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও জ্ঞানভিত্তিক ’ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যে আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্য-আয়ের দেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারের নিরবিচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নিম্ন মধ্য-আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। এখন জাতির দৃষ্টি নিবদ্ধি হয়েছে ২০৪১ সালের দিকে- বিশ্বসভায় একটি উন্নত দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত হওয়ার মানসে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সরকার উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত রেখে জাতির আকাক্সক্ষা পূরণে সফল হবে। রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, বর্তমান সরকারের চূড়ান্ত লক্ষ্য হল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ। এ লক্ষ্য অর্জনে সরকার দারিদ্র্যনিরসন এবং বৈষম্য দূর করে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রথমবারের মত দীর্ঘমেয়াদী রূপকল্প হিসাবে ’বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা’ এবং মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা হিসাবে ’পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা’ প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করা। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৫-২০ মেয়াদে প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিতকরণ, দারিদ্র্য হ্রাস ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, যা বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। তিনি বলেন, এই পরিকল্পনায় গড়ে বার্ষিক ৭ দশমিক ৪ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা ২০২০ সাল নাগাদ ৮ শতাংশে পৌঁছবে। সহ¯্রাব্ধ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি)’র অনর্জিত লক্ষ্যসমূহ সনাক্তকরণসহ টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টসমূহ সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অন্তর্ভূক্ত করে তা অর্জনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ সকল পরিকল্পনার মৌলিক উদ্দেশ্য হল- উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্য আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে উন্নীতকরণ। সরকার কর্তৃক এ-সকল কার্যক্রম গ্রহণের ফলে জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার দৃশ্যমান উন্নয়ন ঘটছে এবং বাংলাদেশ প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জন করে যাচ্ছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস সরকার নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হবে। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ॥ রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে বলেন, দেশে আইনের শাসন সুসংহত ও সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যাকারী পলাতক খুনীদের আইনের আওতায় আনার প্রচেষ্টা চলমান আছে। একুশে আগষ্ট গ্রেনেড হামলা ও হত্যা মামলাটি বিচারিত আদালতে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির পর্যায়ে আছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১৯৭১ সালে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পন্ন করছে এবং বিচারের রায় কার্যকর হচ্ছে। তিনি বলেন, জঙ্গীবাদ ও উগ্র সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ এবং ধর্মীয় সম্প্রীতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৬ সালের জুলাই হতে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের বিভাগ ও জেলাপর্যায়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণী- পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। ফলে জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে এবং জনগণ জঙ্গীবাদবিরোধী চেতনায় উজ্জীবিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সরকার ’জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করে আসছে। বিগত মেয়াদে গৃহীত কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার এ লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ফলে দেশে নাশকতামূলক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে এসেছে এবং জনজীবনে স্বস্তি বিরাজ করছে। সরকারের দক্ষ পরিচালনায় অর্থনীতির সকল সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। একইভাবে সামাজিক সূচকসমূহের অগ্রগতিতেও বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশসমূহের তুলনায় অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে গেছে।
×