ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

‘নির্বাচনে না এলে হবে দ্বিতীয়বার আত্মহত্যা’

বিএনপির স্টেশনে ভোটের ট্রেন থামবে না ॥ ওবায়দুল কাদের

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৬ জানুয়ারি ২০১৮

বিএনপির স্টেশনে ভোটের  ট্রেন থামবে না ॥ ওবায়দুল কাদের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় নির্বাচনের চতুর্থ বর্ষপূর্তির দিন শুক্রবার ঢাকাসহ সারাদেশেই বড় ধরনের সাংগঠনিক শক্তির মহড়া দেখিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এবং বনানী পূজার মাঠে দুটি বিশাল জনসমাবেশে বিএনপির উদ্দেশে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা বলেছেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ ছাড়া বিএনপির সামনে অন্য কোন পথ খোলা নেই। আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে আসতেই হবে। বিএনপি অংশ না নিলে বিরল প্রজাতির প্রাণীর মতো দলটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। মুসলিম লীগের চেয়েও খারাপ পরিণতি হবে। আর আগামী নির্বাচন বিএনপি বা অন্য কারও জন্য বসে থাকবে না। সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আপনাদের (বিএনপি) ঠেকানোর সাধ্য থাকলে দেখান। আর অগ্নিসন্ত্রাস কিংবা নাশকতার চেষ্টা করলে দেশের জনগণই ঐক্যবদ্ধভাবে বিএনপিকে প্রতিহত করবে। ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চতুর্থ বর্ষপূর্তি ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আয়োজিত এ দুটি সমাবেশে আওয়ামী লীগ নেতারা এসব কথা বলেন। সমাবেশ শেষে এ দুটি স্থান থেকেই বিশাল বিজয় র‌্যালি বের করা হয়। বিজয় র‌্যালি ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। শুধু ঢাকায় নয়, সারাদেশেই আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সমাবেশ ও বিজয় র‌্যালি বের করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে দুপুরের পর থেকেই গোটা মহানগরী মিছিলের নগরীতে পরিণত করে বড় ধরনের সাংগঠনিক শক্তির মহড়া প্রদর্শন করে আওয়ামী লীগ। দশম সংসদ নির্বাচনের চতুর্ষ বর্ষপূর্তির দিন শুক্রবার ব্যাপক শোডাউনের মাধ্যমে রাজপথসহ সারাদেশের মাঠ ছিল আওয়ামী লীগের দখলে। গণতন্ত্রের বিজয় দিবসের এই দিনটিতে দেশজুড়ে শান্তিপূর্ণভাবে বিজয় শোভাযাত্রা ও সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। শুক্রবার বিকেল তিনটায় একযোগে সারাদেশে বর্ণাঢ্য এ শোভাযাত্রায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অসংখ্য মানুষের ঢল নামে। শোভাযাত্রায় সন্ত্রাস-নাশকতা-জঙ্গীবাদ ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়। এছাড়া রাজধানীর অলিগলিসহ দুই শতাধিক স্থানে দিনভর সতর্ক অবস্থানে থেকে বিজয়োৎসব পালন করেছে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অসংখ্য মানুষ। নির্বাচনের ট্রেন বিএনপির স্টেশনে থামবে না- ওবায়দুল কাদের ॥ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত বিশাল সমাবেশে দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সময় ও স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না। আগামী নির্বাচনও কারও জন্য অপেক্ষা করবে না। নির্বাচনের ট্রেন বিএনপির স্টেশনে থামবে না। বিএনপিকে আগামী নির্বাচনে আসতেই হবে। এর কোন বিকল্প নেই। তিনি বলেন, আজকের দিনটি গণতন্ত্রের বিজয় দিবস। আর বিএনপির জন্য এটি আত্মহত্যার দিন। গত জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির অংশ না নেয়া ছিল রাজনৈতিকভাবে আত্মহত্যা। আগামী নির্বাচনে অংশ না নিলে দ্বিতীয় বার রাজনৈতিক আত্মহত্যা হবে। মুসলিম লীগের চেয়েও তাদের খারাপ পরিণতি হবে। বিরল প্রাণীর মতো বিএনপি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, বিএনপির নেতাদের ক্ষোভ হচ্ছে তাদের কর্মীরা মাঠে নামে না। আবার কর্মীদের ক্ষোভ নেতারা মাঠে নামে না। তাহলে আগামীকাল (শনিবার) তাদের বিক্ষোভ কর্মসূচী করবে কে? বিএনপির কিছু কিছু কর্মী মাঠে নামলেও নেতারা কর্মসূচী দিয়ে ঘরের মধ্যে শীতাতপ ঘরে বসে হিন্দী সিনেমা দেখে। নেতারা ঘরে বসে খবর নেয় পুলিশের গতিবিধি নরম না গরম। সেতুমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া বলেছেন পদ্মা সেতু নাকি জোড়াতালি দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে। দুর্নীতি মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে দিতে বেগম জিয়ার মাথা বোধ হয় নষ্ট হয়ে গেছে। উনি কি কিছুই বোঝেন না? জোড়া ছাড়া সেতু হয় না, উনি কি এটাও বোঝেন না। খালেদা জিয়া বলেছেন সাবমেরিন ডুবে গেছে। আসলে সাবমেরিন তো ডুবেই থাকে। তিনি কি এটাও জানেন না। তিনি কি ভাসমান সাবমেরিন দেখতে চেয়েছিলেন? আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন না হলে জিয়াউর রহমান ও এইচএম এরশাদ যেভাবে স্বৈরাচারী কায়দায় দেশ চালিয়েছিল বাংলাদেশ আবার সেই জায়গায় চলে যেত। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। বিএনপি নির্বাচনে না এলে মুসলিম লীগের চেয়েও খারাপ পরিণতি হবে। তাদের জন্য অন্য কোন পথ খোলা নেই। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ৫ জানয়ারি নির্বাচন হয়েছিল বলেই আজকে দেশে গণতন্ত্র আছে। সেদিন নির্বাচন না হলে অসাংবিধানিক শক্তি ক্ষমতায় আসার পথ তৈরি হতো। আজকে দেশে এত উন্নয়ন হতো না। পদ্মা সেতুর তৈরি হতো না। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাতের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম, কেন্দ্রীয় নেতা ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, দেলোয়ার হোসেন, আমিনুল ইসলাম আমিন, মহানগরের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ প্রমুখ। ক্ষমতা থাকলে নির্বাচন ঠেকিয়ে দেখান ॥ বিএনপি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকানোর চেষ্টা করলে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব জনগণ প্রতিহত করবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা। দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আজকে একদিকে জনগণের গণতন্ত্রের বিজয় দিবস, অন্যদিকে বিএনপিসহ সাম্প্রদায়িক শক্তির আত্মহত্যা দিবস। আগামী নির্বাচনে অংশ না নিলে বিএনপিকে আরেকবার আত্মহত্যা দিবস পালন করতে হবে। সময় ও ¯্রােত কারও জন্য অপেক্ষা করে না। তাই আগামী নির্বাচন বিএনপি বা অন্য কারও জন্য বসে থাকবে না। সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আপনাদের (বিএনপি) ঠেকানোর সাধ্য থাকলে দেখান। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে জনগণ আপনাদের প্রতিহত করবে। শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর বনানী পূজা মাঠে ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র রক্ষা দিবস’ উপলক্ষে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে ওবায়দুল কাদের বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের কড়া সমালোচনা করে বলেন, ‘বহুরূপী ব্যারিস্টার সাহেব, আপনাদের সকলে চেনে। দেশে একটু ঝড়-ঝঞ্ঝা দেখলে বিদেশে গিয়ে পালিয়ে থাকেন। ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে বাড়ি দখল করতে গিয়ে আদালতে ধরা খেয়ে রাস্তায় কান্না করেছেন। এই লোক যদি দেশের আইনমন্ত্রী হয়, দেশের বারোটা বেজে যাবে। তিনি বলেন, সংবিধান সুরক্ষা দিবস, আজ ঢাকা শহর মিছিলের নগরী। সব রাস্তায় মিছিল আর মিছিল। গণতন্ত্র রক্ষা দিবসে আজ আমাদের শপথ-অঙ্গীকার বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধকে বাঁচাতে হলে, স্বাধীনতার চেতনা বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হলে, আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে হবে। দেশে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে শেখ হাসিনাকে আরেকবার ক্ষমতায় আনতে হবে। এ সময় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে পরাজিত করে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় নৌকা বিজয়ী হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান বলেন, আগামী নির্বাচনে ভরাডুবি হবে বুঝতে পেরে বিএনপি ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। আগামীতে কেউ যাতে নির্বাচন বানচাল করতে না পারে সেদিকে নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি। বিএনপি গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালনের নামে সারাদেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে এমন অভিযোগ করে মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ঢাকাবাসী তথাকথিত বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করতে দেবে না। কর্মসূচী পালনের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে ঢাকাবাসী তাদের উচিত শিক্ষা দেবে। মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম রহমতুল্লাহ এমপির সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতি-লীর সদস্য এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন এমপি, সম্পাদকম-লীর সদস্য হাবিবুর রহমান সিরাজ ও উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান প্রমুখ।
×