ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

রশিদ মামুন

যারা চলে গেলেন

প্রকাশিত: ০৭:০১, ১ জানুয়ারি ২০১৮

যারা চলে গেলেন

বিদায় ২০১৭ এই বছরটিতে আমাদের বার বার বলতে হয়েছে বিদায় প্রিয় মানুষ, বিদায় মনের মানুষ। যেখানেই থাকবেন ভাল থাকবেন। আপনাকে আর কখনও চারপাশের কোলাহলে না পেলেও আপনি নিশ্চই আমাদের অনুভবে বেঁচে থাকবেন। দেশ বিখ্যাত এত মানুষের এক বছরে চলে যাওয়ার ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে বিরলই বলা চলে। সেই বিবেচনায় বছরটি দুঃখ বয়ে বেড়ানোর বছর হয়েই থাকবে। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত : সংসদে তার মতো প-িত ব্যক্তি ছিলেন হাতে গোনা। যেখানেই জটিলতা-সংশয় সেখানেই শক্ত হাতে মোকাবেলা। নতুন আইন তৈরি, আইনের সংস্কার সবখানে তার দক্ষ হাতের ছোয়া লেগে আছে লেগেই থাকবে। তিনি বাংলাদেশের অন্যমাপের এক রাজনীতিবিদ ছিলেন তিনিই সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। মাত্র অল্প কটা দিন রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু সেই ক’দিনেই বহুবছরের গড়মিলের ট্রেন ছাড়ার সময়কে ঠিক করে ছাড়লেন। তিনি দ্বিতীয়, তৃতীয়, পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম জাতীয় সংসদসহ মোট সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর আগে সত্তরের নির্বাচনেও তিনি প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি রেলপথমন্ত্রী ছাড়াও সংসদীয় কমিটির প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন। বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি তাকে হারিয়েছি আমরা। মহিউদ্দিন চৌধুরী : তিনি বীর, চট্টলা বীর বলা হতো তাকে। চট্টগ্রামের মাটি আর মানুষকে ভালবেসেই জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রিত্ব দিতে চাইলেও ছাড়তে চাননি চট্টগ্রামকে। তিনি মহিউদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রামের মাটি আর মানুষের প্রাণের নেতা ছিলেন। প্রথমবারের ১৯৯৪ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালে মেয়র নির্বাচনে তিনি ওই সময় ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) একজন মন্ত্রীকে পরাজিত করে তৃতীয়বারের মতো চট্টগ্রামে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন। আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা রেখে তিনি বছরের বিদায় লগ্ন ১৫ ডিসেম্বর পাড়ি জমান না ফেরার দেশে। এমকে আনোয়ার : মোহাম্মদ খোরশেদ আনোয়ার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সংক্ষেপে তিনি এমকে আনোয়ার নামে পরিচিত ছিলেন। জীবনের ৮৪ তে চলতি বছর ২৪ অক্টোবর তিনি চলে যান না ফেরার দেশে। পাকিস্তান আমলে সরকারী চাকরিতে যোগ দেয়ার পর স্বাধীন বাংলাদেশেও প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সরকারের অর্থ সচিব ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্বও তিনি পালন করেন। ১৯৯০ সালে অবসরের পর এম কে আনোয়ার রাজনীতির মাঠে নামেন, যোগ দেন বিএনপিতে। কুমিল্লার হোমনা আসন থেকে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এম কে আনোয়ার খালেদা জিয়ার বিএনপি সরকারে দুই দফা মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। আনিসুল হক : বাংলাদেশ টেলিভিশেনের অনুষ্ঠান সঞ্চালক হিসেবে তিনি প্রথম জনপ্রিয়তা পান। যারা আনিসুল হকের সেই সময় দেখেছেন তারা জানেন সেই জনপ্রিয়তা আকাশ ছুয়েছিল। এরপর ব্যবসায়ী নেতা সেখানেও সমান জনপ্রিয়। তবে সব জনপ্রিয়াতা ছাপিয়ে গেছে মেয়র আনিসুল হকের কাছে। অল্প দিনেই তিনি যা করেছেন অনেকে বহুদিন চেষ্টা করেও তা করতে পারেননি। হয়ত তিনি থাকলে অচিরেই আধুনিক ঢাকার স্বাদ পেত নগরবাসী। গত ৩০ নবেম্বর আমরা এই প্রিয় মানুষটিকে বিদায় বলেছি। ছায়েদুল হক : আমরা ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের প্রসংশায় পঞ্চমুখ হই। নিশ্চই সততার জন্য তিনি প্রশংসা পাওয়ারই যোগ্য। কিন্তু আমাদের দেশের রাজনীতিবিদের সততা আমরা সহজে চোখে দেখি না। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একজন মানুষের সততা সকলের সামনে এসেছে। তিনি প্রয়াত মৎস্য এবং প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হক। মৃত্যুই যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে তার সরল- সাধারণ জীবনযাপনের কথা জানিয়ে গেল। জনপ্রিয় এই রাজনীতিবিদ থাকতেন পুরাতন দুই টিনের ঘরে। জেলার সার্কিট হাউসের একদিনের ভাড়াও বাকি রেখে যাননি। নির্লোভ এই মানুষটিকে আমরা হারিয়েছি আমাদের বিজয় দিবস ডিসেম্বর ১৬-২০১৭ তে। তিনি সত্যিই আমাদের হৃদয়ে বিজয়ীর আসনেই থাকবেন। দ্বিজেন শর্মা : ইদানীং মানুষের মন থেকে প্রকৃতির জন্য প্রেম উবে যাচ্ছে। যান্ত্রিকতা মানুষকে গ্রাস করেছে। কোন গাছের কি নাম। ঘাসফুল কেন এত সুন্দর হয়, কেন সেথায় চোখ হারায় উদাসী পথিকের এসব ভাবার যেন সময় নেই। এই অস্থিরতা আর দূষণের মধ্যেও যে মানুষটি আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে প্রকৃতিকে চেনাতেন, জানাতেন তিনি দ্বিজেন শর্ম। ফুল, পাখি আর গাছ নিয়েই মেতে থাকতেন তিনি। বছরের শেষভাগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর আমরা হারালাম এই নিসর্গসখাকে। তাকে আমরা একাধারে নিসর্গবিদ, বৃক্ষপ্রেমিক, অনুবাদক, শিশুসাহিত্যিক, বিজ্ঞান লেখক, গবেষক ও শিক্ষক হিসেবে চিনতাম। চলতি বছরে তিনজন ও সাবেক ২৬ জনসহ মোট ২৯ এমপি জাতীয় সংসদ থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এমপি মারা গেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। তাদের সাবেক, বর্তমান মিলে মোট ১৩ সংসদ সদস্য মারা গেছেন। আর দেশের অন্যতম বৃহৎ দল বিএনপির ১১ এমপি মারা গেছেন। এদের মধ্যে একজন সাবেক রাষ্ট্রপতিও রয়েছেন। এছাড়া জাতীয় পার্টির চারজন এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের একজন সাবেক সংসদ সদস্য মারা যান।
×