ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

শহিদুল ইসলাম

মাসজুড়ে বিজয়ের ভাবনা

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭

মাসজুড়ে বিজয়ের ভাবনা

১৬ ডিসেম্বর সারা পৃথিবীর জন্য শুধুই একটি তারিখ, একটি দিন হলেও বাংলাদেশের জন্য ডিসেম্বর ১৬ তারিখ একটি বিশেষ স্মরণীয় দিন। আর তাই তো ডিসেম্বর মাস এলেই আমাদের ভিতর বিজয়, আনন্দ উল্লাস অনুভব হয়। যে আনন্দ উল্লাস আমরা ডিসেম্বর মাস জুড়ে করে থাকি বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান, সভা-সেমিনার, পালন করার মধ্য দিয়ে। ১৬ ডিসেম্বর কেন আমাদের কাছে এতো স্মরণীয়, কেন আমরা এ মাসে বিজয়ের উল্লাস করি। কারণ দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। ফলে পৃথিবীর বুকে এক নতুন স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। যার নাম বাংলাদেশ। ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি তারিখে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ দিনটিকে বাংলাদেশের জাতীয় দিবস হিসেবে পালন করা হয় এবং সরকারীভাবে দিনটিকে ছুটি ঘোষণা করা হয়। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রীয়ভাবেই দেশের সর্বত্র বিশেষ দিন হিসেবে পালন করা হয়। ১৬ ডিসেম্বর দিনটিকে বিশেষভাবে পালনের জন্য ভোরে ৩১বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিনের সূচনা করা হয়। তারপর জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে অনুষ্ঠিত সম্মেলন, সামরিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। যে কুচকাওয়াজে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বাংলাদেশ বিমানবাহিনী অংশগ্রহণ করে। কুচকাওয়াজের অংশ হিসেবে সালাম গ্রহণ করেন আমাদের দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। এই কুচকাওয়াজ দেখার জন্য হাজারো লোকের সোমাগম ঘটে। তারপর স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের প্রতি সম্মান জানেনোর জন্য রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ দলবল নির্বিশেষে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্প অর্পণ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে নির্মিত সিনেমা, প্রামাণ্য চিত্র, টেলিফিল্ম এ ডিসেম্বর মাসে বিভিন্ন জাতীয় কেন্দ্রে বিনা খরচে দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়। যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিতে পারে। পুরো ডিসেম্বর জুড়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আলোচনা, মতবিনিময় সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হয়। যার প্রতিপাদ্য বিষয় থাকে মুক্তিযুদ্ধ কেন্দ্রিক। পুরো মাস দেশের প্রধান সড়কগুলো জাতীয় পতাকা দিয়ে সাজানো থাকে। বিভিন্ন আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয় রাস্তাঘাটসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানসমূহ। ৩০ লাখ জীবনের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতা। অশ্রু বিসর্জনে পাওয়া এই স্বাধীনতা আমাদের কাছে অনেক গৌরবের। তাই প্রজন্মের পর প্রজন্ম বয়ে চলছে এই বিজয়ের পতাকা। প্রতি বছর ডিসেম্বরে আমরা বিভিন্ন অনুষ্ঠান উদযাপনের মাধ্যমে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে এবং বিশ্বকে জানিয়ে দেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কথা। আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের কথা। ডিসেম্বর এলেই আমরা অনুপ্রাণিত হই, গর্বিত হই। ডিসেম্বর মাস এলেই সারাদেশ লাল-সবুজে সাজে। গাড়িতে গাড়িতে উড়ে জাতীয় পতাকা। গ্রাম-শহর দুই জায়গাতেই আনন্দের উৎসব লাগে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নানান ধরনের মুক্তিযুদ্ধভিক্তিক অনুষ্ঠান করা হয়। এসব কিছুই পুরো ডিসেম্বর জুড়ে করা হয় বিজয় দিবসকেই কেন্দ্র করে। ডিসেম্বর মাস, বিজয়ের মাস আমাদের আনন্দের মাস হলেও এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ’৭১-এর শহীদের স্মৃতি। স্বজন হারানোর আর্তনাদ। বিজয় দিবসকে ভিতরে ধারণ করে পুরো বাঙালী জাতি ঐক্যবোদ্ধ হোক, দেশকে ভালবাসুক, দেশের কল্যাণে কাজ করুক, এটাই সবার চাওয়া। বাংলাদেশ বিশ্বের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক। আমাদের সকল মুক্তি আসুক। সকল ভেদাভেদ ভুলে জাতীয় ঐক্য নিয়ে সবাই একসঙ্গে বসবাস করুক। এটাই হোক সবার কাম্য। বিজয় দিবসের মাধ্যমে সবার মাঝে দেশপ্রেম জাগ্রত হোক। সবাইকে বিজয়ের শুভেচ্ছা। সবাই ভাল থাকুন। দেশের কল্যাণে কাজ করুন, দেশকে ভাল বাসুন। কোন এক দার্শনিকের দুটি লাইন দিয়ে আমরা বিজয়ের লেখাটা শেষ করছি। আমি একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক এর চেয়ে গর্বের আর কি হতে পারে। মডেল : তারেক ও জৃঁই
×