ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালে হাইব্রিড আওয়ামীলীগের দাপটে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মাঝে আতংক

প্রকাশিত: ০১:৪৩, ১৬ নভেম্বর ২০১৭

বরিশালে হাইব্রিড আওয়ামীলীগের দাপটে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মাঝে আতংক

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী এক নেতার আর্শিবাদ পেতে বিএনপির রাজনীতি থেকে সদ্য আওয়ামীলীগে যোগ দেয়া এক হাইব্রিড নেতার সহযোগীরা পরিকল্পিতভাবে একের পর এক সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর হামলা চালিয়ে আসছে। এ ঘটনায় জেলার গৌরনদী উপজেলার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মাঝে চরম আতংক বিরাজ করছে। ভূক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ গত ১৩ নভেম্বর আওয়ামীলীগের সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচী অনুষ্ঠানের শেষপর্বে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈকত গুহ পিকলুর ওপর হামলা চালায় সদ্য আওয়ামীলীগে যোগদেয়া সন্ত্রাসীরা। ওই অনুষ্ঠানে চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা অংশগ্রহণ করার কারণেই এ হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন হামলার শিকার জেলার দুইবারের পদকপ্রাপ্ত শ্রেষ্ঠ ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু। এরপূর্বে গত ২৩ অক্টোবর আওয়ামীলীগ কর্মী ও মোটরসাইকেল চালক রঞ্জন বাড়ৈকে মাহিলাড়া বটতলা এলাকায় বসে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত জখম করে একই সন্ত্রাসীরা। ১০ নভেম্বর মাহিলাড়া বাজারের মধ্যে বসে প্রকাশ্যে মারধর করে কাঠমিস্ত্রি বিভুতি বাড়ৈকে জখম করা হয়। ২১ সেপ্টেম্বর মাহিলাড়া বাজারের একটি দোকানের সামনে বসে একই সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ছাত্রলীগ কর্মী গোপাল শীল ও যুবলীগ কর্মী পলাশ মন্ডলকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। সূত্রে আরও জানা গেছে, এসব হামলার ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করতেও ভয়পাচ্ছে ভূক্তভোগী সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় আওয়ামীলীগের একাধিক নেতারা জানান, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার সূত্রপাত শুরু হয় ২০১৫ সালের ১৭ আগস্ট থেকে। ওইসময় উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি কালিয়া দমন গুহর কনিষ্ঠ পুত্র সরকারী গৌরনদী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক সলিল গুহ পিন্টুকে হত্যার জন্য কুপিয়ে মারাত্মক জখম করা হলেও ভাগ্যক্রমে সে প্রাণে বেঁচে যায়। ক্ষতের দাগ না শুকাতেই পূণঃরায় ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর রাতে দ্বিতীয় দফায় তাকে কুপিয়ে জখম করা হয়। ওই হামলার ঘটনায় প্রকাশ্য সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হলেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এরপর থেকেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা বেড়েই চলেছে। ফলে সংখ্যালঘু সস্প্রদায়ের মধ্যে চাঁপা ক্ষোভ ও আতংক বিরাজ করছে। ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু জানান, ২০১৫ সালের ১৭ আগস্ট বাটাজোর বন্দরে অনুষ্ঠিত শোক দিবসের অনুষ্ঠানে তার নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা অংশগ্রহণ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওইদিন রাতে তার সহদর সলিল গুহ পিন্টুকে আশোকাঠী বাসষ্ট্যান্ডে বসে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করা হয়। একইভাবে গত ১৩ নভেম্বর আওয়ামীলীগের সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচী অনুষ্ঠানে তার নেতৃত্বে কয়েকশ’ নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করার একইভাবে তার (সৈকত গুহ পিকলু) ওপর হামলা চালানো হয়েছে। দলের দুর্দীনের কান্ডারী উপজেলা আওয়ামীলীগের একাধিক নেতারা বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে সদ্য আওয়ামীলীগে যোগদেয়া হাইব্রিড নেতারা নিজেদের জানান দিতে ও উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী এক নেতার আর্শিবাদ পেতে দলের দুর্দীনের নেতাকর্মীদের নিধনে মেতে উঠেছে। এসব হামলাকারী সন্ত্রাসীদের আশ্রয়দাতা ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ আওয়ামীলীগের দুর্দীনের নেতাকর্মীরা হাইব্রিড নেতাদের রোষানলে পরে দল থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিতে শুরু করেছেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনে যার প্রভাব পরার আশংকা রয়েছে। ফলে দলের দুর্দীনের নেতাকর্মীরা সঠিকভাবে দলীয় পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে এখনই ওইসব সন্ত্রাসী ও তাদের আশ্রয়দাতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এবং দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে জোর দাবি করেছেন। এ ব্যাপারে গৌরনদী মডেল থানার ওসি মোঃ মনিরুল ইসলাম জানান, সর্বশেষ মাহিলাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলুর ওপর প্রকাশ্যে হামলার ঘটনায় রাসেল রাঢ়ী, মঙ্গল সরদার, শাহিন সরদার, আলিম খান, আকাশ সরদারসহ ১০/১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ অভিযুক্ত রাসেল রাঢ়ী ও মঙ্গল সরদারকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে। অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলছে বলেও তিনি (ওসি) উল্লেখ করেন।
×