ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

ঠাকুরগাঁওয়ে ‘মা’ ফাউন্ডেশনের নামে প্রতারনার অভিযোগ

প্রকাশিত: ০২:০৬, ১১ অক্টোবর ২০১৭

ঠাকুরগাঁওয়ে ‘মা’ ফাউন্ডেশনের নামে প্রতারনার অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও ॥ প্রধানমন্ত্রীর স্কুল নাম করে শহরের মুলিম নগরে অবস্থিত মা মডেল স্কুল এন্ড কলেজের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে চম্পট দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কলেজের অধ্যক্ষ শাহীনের বিরুদ্ধে। অভিযোগ করেছেন স্কুলের শিক্ষক ও কর্মচারীরা। বর্তমানে ওই স্কুলটিতে তালা ঝুলছে । এলাকাবাসী, শিক্ষক ও কর্মচারীরা জানায়, জাকজমকপূর্ণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ২০১৫ সালের জানুয়ারী মাসে যাত্রা শুরু করে ওই স্কুলটি। সে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, সদর উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) রাশেদুল হক প্রধান (তিনি বর্তমানে ঠাকুরগাঁওয়ের বাইরে কর্মরত আছেন), ওয়ার্ড কমিশনার আল মামুন, মহিলা কমিশনার নাজিরা আক্তার স্বপ্নাসহ অনেকে। শিক্ষক/শিক্ষিকারা জানুয়ারী থেকে তাদের দায়িত্ব শুরু করলেও নিয়োগ পান ২০১৫ সালের মে মাসে। নিয়োগ পত্র অনুযায়ী একজন সহকারী শিক্ষক প্রতিমাসে ৪ হাজার সাতশত স্কেলে ৯ হাজার সাতশত পয়তাল্লিশ টাকা হারে বেতনভাতাদি পাবেন। নিয়োগ পত্রের ২০ নং শর্ত অনুযায়ী নিয়োগ পত্র গ্রহণের ১৫ দিনের মধ্যে মা ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত মা মডেল স্কুল এন্ড কলেজের নামে মা ফাউন্ডেশনের হিসাব নম্বরে নিয়োগ পত্রে উল্লেখিত অনুদানের টাকা জমা দিতে বলা হয়। যে তালা আজও ঝুলছে স্কুলটিতে। অনেক শিক্ষক ও কর্মচারী জমি-জমা বিক্রী এবং ঋণ করে ঐ স্কুলে অনুদানের টাকা প্রদান করলে আজও আশার মুখ দেখেননি শিক্ষকসহ অন্যান্য কর্মচারীরা। ওই বছর স্কুলটিতে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়েছিল প্রায় ৫০ জন। প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি ফি ও সেশনফি বাবদ টাকা দিয়েছিল ৪শ’ টাকা হারে, সে টাকাও আত্মস্বাদ করেছে শাহীন। নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষক এমদাদুল হক শরিফ জানান, শাহিন আমাদের বলেছিল এটা প্রধানমন্ত্রীর স্কুল। ওনার মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে এই স্কুল গুলো পরিচালিত হবে। তিনি আরো জানান, আমাদের নিয়োগ পত্রের নিচে উল্লেখ রয়েছে, মা বলতে সর্বকালে সর্ব শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য উত্তরসূরী, গণতন্ত্রের মানসকন্যা, দেশ রত্ম, জননেত্রী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বুঝিয়েছেন। এব্যাপারে স্কুলের অধ্যক্ষ শাহীনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ওই টাকা আমি গ্রহণ করিনি। ওই টাকা প্রদান করা হয়েছিল মা ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনাকে। তারা বর্তমানে টাকা আত্মস্বাতের অভিযোগে জেল হাজতে রয়েছেন। মা মডেল স্কুল এন্ড কলেজের সহকারি শিক্ষিকা রওশনয়ারা জানান, আমি এই স্কুল পরিচালনার জন্য অনুদান হিসেবে অধ্যক্ষ শাহীনকে ৭০ হাজার টাকা দিয়েছি। আমাকে নিয়োগও দিয়েছে, নিয়োগ পত্র অনুযায়ী প্রতিমাসে ৯ হাজার সাতশত ৪৫ টাকা হারে বেতন ভাতাদি দেয়ার কথা, কিন্তু ১০ মাস গত হলেও কোন বেতনভাতাদি পরিশোধ করেনি। স্কুল পরিচালনা পর্ষদের সদস্য নয়ন জানান. আমাকে পরিচালনা পর্ষদের সদস্য করা হয়েছিল এবং আমি আমার বাড়ী ভাড়া দিয়েছিলাম স্কুল পরিচালনার জন্য কিন্তু আমি এতো কিছু জানি না। বাড়ী ভাড়ার চুক্তিপত্র সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, চুক্তিপত্রে আমার স্বাক্ষর ছিল কিন্তু শাহীনের কোন স্বাক্ষর নাই। সে জন্য আমিও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছি না। স্থানীয় কমিশনার আল মামুন জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি মা ফাউন্ডেশন নামে একটি এনজিও প্রধান মন্ত্রীর ভাইস্তা নাম করে স্কুলের শিক্ষক ও অন্যান্য কর্মচারীদের কাছে টাকা নিয়েছে। আমার কাছেও এধরনের অভিযোগ এসেছে। এ নিয়ে কি করা যায় তা নিয়ে চিন্তা ভাবনা চলছে। এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার (মাধ্যমিক) মোশারফ হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এবিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিবেন বলে তিনি জানান।
×