ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আমরা রোহিঙ্গাদের পাশে থাকবো ॥ এরশাদ

প্রকাশিত: ০৩:২৩, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

আমরা রোহিঙ্গাদের পাশে থাকবো ॥ এরশাদ

অনলাইন রিপোর্টার ॥ জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশে থাকবে এ দেশের জনগণ। যতদিন রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে থাকবে, ততদিন তাদের সহায়তা করবে জাপা। চাপ প্রয়োগ করতে তনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, মিয়ানমারকে বাধ্য করা হবে, রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিক দিয়ে ফিরিয়ে নিতে। বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা শরণার্থীদেও শিবির পরিদর্শন করে এসব কথা বলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ। তিনি মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ সমাগ্রী ও নগদ টাকা বিতরণ করেন। এর আগে সকালে আকাশ পথে ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে যাত্রা করেন এরশাদ। তার সঙ্গে ছিলেন জাপার মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহেমদ বাবলু এমপি, কাজী ফিরোজ রশিদ এমপি, মেজর (অব.) খালেদ আখতার,যুগ্ম মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি প্রমুখ। জাপা নেতারা জানিয়েছেন, দলের তরফ থেকে তিন কোটি টাকার ত্রাণ ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। সারাদেশের কর্মীদের সহায়তায়আরো ত্রাণ দেওয়া হবে। স্থানীয় নেতাকর্মীদেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে। এরশাদ বৃহস্পতিবার দুপুরে টেকনাফের শামলাপুর বিদ্যালয় মাঠে রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন। সরেজমিনে দেখা যায়, অন্তত পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা এ মাঠে আশ্রয় নিয়েছেন। তারা খোলা আকাশের নীচে রাত কাটাচ্ছেন। বিশেষত নারী ও শিশুরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন। তাদের স্বান্তনা দেন এরশাদ। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের পাশে সারা বিশ্ব রয়েছে। মিয়ামমারের নেত্রী অং সান সু চি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা বাংলাদেশ প্রত্যাখান করেছে। পুরো বিশ্ব প্রত্যাখান করেছে। বাংলাদেশে সীমিত সামর্থ্য নিয়েও রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের পাশে আছেন। রোহিঙ্গারা যতদিন বাংলাদেশে থাকবে, তাদের সহায়তার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করবে জাপা। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এরশাদ বলেন, রোহিঙ্গারা জন্মসূত্রে মিয়ানমারের নাগরিক। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ওপর যে নির্যাতন করেছে তা মানবতা বিরোধী অপরাধ। এ অপরাধের বিচার করতে হবে। তিনি জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানান, রাখাইন রাজ্যে গণহত্যার জন্য দায়ীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। রোহিঙ্গাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে জন্মভ’মি রাখাইন রাজ্যে পূর্ণ নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে পুনর্বাসন করতে হবে। জাপা মাহসচিব বলেন, বাংলাদেশের পক্ষে লাখো লাখো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া খুব কঠিনণ বাংলাদেশের মানুষ সীমিত সামর্থ্য নিয়ে নিঃস্বার্থভাবে নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের এক সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো রোহিঙঙ্গাদের ত্রাণ সহায়তা দিতে ছুটে এসেছেন। জাপার নেতাকর্মীরা তাদের সীমিত সামর্থ্য নিয়েওসহায়তা নিয়ে এসেছেন। বিশ্ববাসীকেও গণহত্যার শিকার রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিতে সোচ্চার হতে হবে। রোহিঙ্গা ইস্যু রাজনৈতিক নয়, মানবিক। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সহায়তা করতে হবে। শামলাপুর বিদ্যালয় মাঠে রোহিঙ্গাদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা শিবির স্থাপন করেছে জাতীয় পাটির অঙ্গসংগঠন জাতীয় যুব সংহতি। সেখানে রোহিঙ্গাদের দেওয়া চিকিৎসা কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে এরশাদ, উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদ শরণার্থীদের অবস্থা পরিদর্শন করেন। সড়কের পাশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে নগদ অর্থ বিতরন করেন এরশাদ ও জাতীয় পার্টিও নেতাকর্মীরা। গাড়িতে বসে এরশাদ, রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের দুঃখ দুর্দশার কথা শুনেন। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নারকীয় তাণ্ডব, হত্যাযজ্ঞ, নারী নিপীড়নের ভয়াল বর্ণনা শুনে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন এরশাদ। ক্রদনরত রোহিঙ্গাদের স্বান্তনা দিয়ে তাদেও ধৈর্য্য ধারণের অনুরোধ করেন। বিকেলে উখিয়ার পান বাজারে রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন এরশাদ। চাল, ডাল, তেল, সাবান, মুড়ি, চিড়া,বিস্কুট ও নতুন কাপড় দেওয়া হয় রোহিঙ্গাদের। এখানে এরশাদ বলেন, মিয়ানমার মানবাধিকার লঙ্ঘনের সব সীমা পার হয়ে গেছে। মুসলমানদের ওপর তারা যে নির্যাতন করেছে, তা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। তিনি দেশের বিত্তবানদের রোহিঙ্গাদের সহায়তা এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর জাপার সভাপতি মেহজাবিন মোরশেদ এমপি, কক্সবাজারের এমপি মো. ইলিয়াস, যুব সংহতির সভাপতি আলমগীর শিকদার রোটন প্রমুখ।
×