ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবাসীর স্ত্রীকে জালিয়াতির মাধ্যমে তালাক

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

প্রবাসীর স্ত্রীকে জালিয়াতির মাধ্যমে তালাক

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ আমেরিকা প্রবাসী ভাইয়ের স্ত্রীকে জালিয়াতির মাধ্যমে তালাক দিয়েছে অপর দুই ভাই। দ-নীয় এই অপকর্মে তারা জাল করেছেন তাদের ভাইয়ের ও নোটারি পাবলিক আইনজীবীর স্বাক্ষর। যশোরের কেশবপুর উপজেলার গড়ভাঙ্গা গ্রামের শের আলী গাজীর দুই ছেলে রফিকুল ইসলাম ও মোস্তাফিজুর রহমান এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে। জালিয়াতির শিকার হয়েছেন প্রবাসী জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী ও যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলমগীরের কন্যা টিনা মমতাজ মিমি। তিনি জানান, ভাইদের রেখে স্বামী তাকে আমেরিকায় নেয়ার চেষ্টা করায় এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন তার ভাশুর ও দেবর। টিনা মমতাজ মিমির পিতা মোহাম্মদ আলমগীর জানান, আমেরিকা প্রবাসী জাহিদুল ইসলামের সঙ্গে ২০১৫ সালের ২২ নবেম্বর বিয়ে হয় তার মেয়ের। ২০১৬ সালের ২৫ মে জাহিদুল আবার আমেরিকা চলে যান। যাওয়ার সময় তিনি স্ত্রী মিমিকে আমেরিকা নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে নিয়ে যান। আমেরিকায় পৌঁছে স্ত্রীকে নেয়ার চেষ্টায় ওইসব কাগজ সে দেশের সংশ্লিষ্ট দফতরে দাখিলও করেন। যার প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর আমেরিকা দূতাবাস থেকে নিজের নামে একটি শুভেচ্ছাপত্র পান মিমি। তিনি আমেরিকা যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন। টিনা মমতাজ মিমি বলেন, ওই শুভেচ্ছাপত্রই যেন তার জন্য কাল হয়েছে ! এরপর থেকে তার ভাশুর রফিকুল ইসলাম ও দেবর মোস্তাফিজুর রহমানসহ পরিবারের অন্যান্যের ব্যবহার পাল্টে যায়। একপর্যায়ে তার ভাশুর, দেবর ও ননদরা তাকে বলে আমেরিকা যাওয়ার আগে বাবার বাড়ি থেকে ঘুরে আসতে। বলা হয় যেহেতু সে বাবার বাড়ি যাচ্ছে তাই তার কাছে থাকা প্রায় ১৮ ভরি গহনা তার শাশুড়ি, ভাশুরের স্ত্রী ও ননদের কাছে রেখে দিতে। তিনি তাই করেন এবং ১৮ ডিসেম্বর তার ছোট চাচা জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে বাবার বাড়ি চৌগাছায় যান। মিমি জানান, বাবার বাড়িতে আসার পর এবছরের ২২ আগস্ট তিনি স্বামী জাহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি তালাকপত্র ডাকযোগে হাতে পান। আকস্মিক এ ঘটনায় তিনি হতভম্ব হয়ে পড়েন। এছাড়া তার স্বামীতো বিদেশে তাহলে স্বাক্ষর করল কে, এমন প্রশ্নে তিনি স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন তিনি আমেরিকায় আছেন। মিমির বাবা মোহাম্মদ আলমগীর জানান, জামাইয়ের অনুপস্থিতিতে মেয়ের তালাকপত্রের বিষয়ে খোঁজ করতে তারা তালাকপত্রের প্রেরক বিবাহ রেজিস্ট্রার কাজী গোলাম মোস্তফার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান তাকে দিয়ে জোর করে এ কাজটি করিয়েছেন জাহিদুলের দুই ভাই রফিকুল ও মোস্তাফিজুর। ভাই জাহিদুলের সইও জাল করেছে তারা। এছাড়া তালাকপত্রের সঙ্গে তারা যশোরের নোটারি পাবলিক নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি এফিডেভিটও পাঠায়। খোঁজ নিয়ে দেখা যায় ওই এফিডেভিটও জাল। নোটারি পাবলিক এ্যাড. নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন এফিডেভিটে তার নামে যে স্বাক্ষর রয়েছে সেটি তার নয়। এ বিষয়ে তিনি লিখিতও দিয়েছেন।আকস্মিক এ ঘটনা সম্পর্কে জানার জন্য আলমগীর তার মেয়ে জামাইয়ের দুই ভাই রফিকুল ও মোস্তফিজুরকে গত ৪ সেপ্টেম্বর তার বাড়িতে আমন্ত্রণ জানান। তারা সেদিন আসেন এবং দুপুরের খাবারের পর তালাকপত্র সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা জানান, ভাই তাদের বাদ রেখে তার স্ত্রীকে আমেরিকায় নিয়ে যাবে, এটা হতে পারে না। তালাকপত্রের বিষয়ে আইনগত কোন ব্যবস্থা না নেয়ার জন্য হুমকিও দেন তারা। এরপর থেকে স্বামী জাহিদুলও টিনা মমতাজ মিমির সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দিতে শুরু করেন। জানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম অসংলগ্ন কথা বলেন। প্রথমে বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। জানে কাজী গোলাম মোস্তফা। এরপর তিনি বলেন, গোলাম মোস্তফা রেজিস্ট্রার বই কুরিয়ারে করে আমেরিকায় পাঠিয়েছিল। তার ভাই তখন তালাকপত্রে স্বাক্ষর করে আবার দেশে পাঠিয়ে দেয় কুরিয়ারে। নোটারি পাবলিকের স্বাক্ষর জালিয়াতির বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।
×