ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়তি ভাড়ায় চূড়ান্ত হচ্ছে সিটিং বাস সার্ভিস নীতিমালা ॥ চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে মন্ত্রণালয়

যে কোন রুটে সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫ শতাংশ সিটিং চলতে পারবে

প্রকাশিত: ০৫:২২, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭

যে কোন রুটে সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫ শতাংশ সিটিং চলতে পারবে

রাজন ভট্টাচার্য ॥ বাড়তি ভাড়ায় চলতি মাসেই সিটিং সার্ভিস নীতিমালা চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে। কোন রকম বৈধতা ছাড়াই ‘সিটিং সার্ভিস’ নাম নিয়ে চলা বাসভাড়ার লাগাম টানতেই বিআরটিএ একটি সমন্বিত কমিটি করেছিল। সেই কমিটি একটি নীতিমালা চূড়ান্ত করতে চলতি সপ্তাহেই আবার বৈঠকে বসবে। এ বৈঠকে চূড়ান্ত খসড়া নীতিমালা প্রস্তুত হতে পারে। এরপর তা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। যদিও তিন মাসের মধ্যে নীতিমালা করার কথা থাকলেও চার মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে। এই সুযোগে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নেয়াও অব্যাহত ছিল। সিটিং সার্ভিস নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির প্রধান বিআরটিএর পরিচালক (রোড সেফটি) মাহবুবে রব্বানী জানান, দ্রুত সময়ের মধ্যে নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে। কমিটির আরেকজন সদস্য জানিয়েছেন, এ সপ্তাহেই বৈঠক হবে বলে তাদের জানানো হয়েছে। বৈঠকে তারা নিজ নিজ পরামর্শগুলো তুলে ধরবেন। তখন এ নিয়ে সবিস্তারে আলোচনা হবে। বিআরটিএ’র ঢাকা বিভাগীয় উপ-পরিচালক মোঃ মাসুদ আলম জানান, ভাড়া ঠিক করতেই সদস্যদের কাছে খসড়া নীতিমালা পাঠানো হয়েছে। খসড়া চূড়ান্ত কিছু নয়। কমিটি নীতিমালা ঠিক করে মন্ত্রণালয়ে দেবে। এরপরও অধিকতর ভাল আইডিয়া থাকলে সেটি যোগ করে নীতিমালার অনুমোদন দেবে মন্ত্রণালয়। বাড়তি ভাড়ায় বৈধতা পাচ্ছে সিটিং সার্ভিস বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি বিআরটিএ নীতিমালায় সিটিং সার্ভিস বলতে কিছু নেই। রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কমিটি (আরটিসি) যারা বাস কোম্পানির লাইন অনুমোদনে সুপারিশ করে থাকেন। তারাও রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস বাসের অনুমতি দিতে পারেন না। অথচ ৫০টির বেশি বাস কোম্পানি সিটিং সার্ভিস হিসেবে ঢাকায় বাস চালাচ্ছে। নেয়া হচ্ছে দ্বিগুণের বেশি ভাড়া। অথচ কারও যেন কিছু বলার নেই। প্রভাবশালী বাস মালিকদের কারণে বিআরটিএও সিটিং সার্ভিস বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। জানা গেছে, বাসমালিকদের সিদ্ধান্তে চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল উচ্চ ভাড়ার ‘সিটিং সার্ভিস’ বন্ধে অভিযানে নামে বিআরটিএ। এর পর পরিবহনকর্মীরা রাস্তায় বাস নামানো বন্ধ করে দেয়। ফলে অচলবস্থার সৃষ্টি হয় এবং চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় নগরবাসীকে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় পৃথক ভাড়ার প্রস্তাব আসে। এরই জেরে বাড়তি ভাড়ায় বৈধতা পাচ্ছে সিটিং সার্ভিস। এসব বাসের রঙ ভিন্ন হতে পারে। আর ভাড়া হবে লোকাল বাসের চেয়ে বেশি। কোন রুটে কত সংখ্যক সিটিং বাস চলবে, তা নির্ধারণ করে দেবে সরকার। সিটিং বাসের স্টপেজের সংখ্যা হবে লোকাল বাসের চেয়ে কম। সম্প্রতি রাজধানীর বিআরটিএ সদর কার্যালয়ে ‘সুপারিশ প্রণয়ন কমিটি’র সভা থেকে এসব সুপারিশ করা হয়। গণপরিবহনে সিটিং সার্ভিসকে বৈধতা দিতে সুপারিশ করেছে সড়ক পবিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) গঠিত কমিটি। জানা গেছে, ২৫ দফা পর্যবেক্ষণও তুলে ধরেছে কমিটি। সিটিং সার্ভিস চলবে কিনাÑ এ বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নে কমিটিকে তিন মাস সময় দেয়া হয়েছিল। কমিটি নির্ধারিত সময়ে পাঁচ দফা খসড়া সুপারিশ প্রণয়ন করেছে। চলতি মাসে গৃহীত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে। বিআরটিএর এক কর্মকর্তা জানান, সিটিং বাসের ভাড়া নির্ধারণে বিআরটিএর নির্দিষ্ট কমিটি রয়েছে। ওই কমিটিই সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ভাড়া নির্ধারণ করবে। সুপারিশ প্রণয়ন কমিটির পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজধানীতে বাস রুট পুনর্বিন্যাস করে কয়েকটি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে দেয়া উচিত। একই প্রস্তাব করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। তিনি ঢাকায় বাস পরিচালনাকারী কোম্পানির সংখ্যা ২০০ থেকে কমিয়ে ৫-৬টি করার কথা বলেছেন। কমিটির পর্যবেক্ষণে গণপরিহনে শৃঙ্খলা আনতে বাসের জন্য পৃথক লেন (বিআরটি) চালু, বিআরটিসির বাস ইজারা বন্ধ করা, অধিক সংখ্যক দ্বিতল ও বড় বাস চালু, রাজধানীতে সিটি বাস টার্মিনাল নির্মাণ, আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল রাজধানীর বাইরে স্থানান্তর, সুবিধাজনক স্থানে বাস বে স্থাপন, ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধের উদ্যোগ নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশ প্রণয়নে নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছে মতামত চেয়েছিল কমিটি। ২০৫ জন মতামত দেন। অধিকাংশ মতামতদাতা লোকাল ও সিটিং বাসকে পৃথক করার পরামর্শ দিয়েছেন। এ মতামতের ভিত্তিতে কমিটি সুপারিশ করেছে, একটি রুটে চলাচলকারী বাসের সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫ শতাংশ সিটিং হিসেবে চলতে পারবে। কোন রুটে কতগুলো সিটিং বাস চলবে, তা যাত্রী চাহিদা অনুযায়ী নির্ধারণ করে দেবে আঞ্চলিক পরিবহন কমিটি (আরটিসি)। কোম্পানিগুলো তাদের পরিচালিত সব বাস সিটিং করে চালাতে পারবে না। প্রত্যেক কোম্পানি একটি নির্দিষ্টসংখ্যক বাস সিটিং হিসেবে চালাতে পারবে। কমিটির একাধিক সদস্য ও বিআরটিএ কর্মকর্তা জানান, সিটিং সার্ভিসের জন্য বাসের স্টপেজের সংখ্যা কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে। লোকাল বাসে গুলিস্তান থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ৯টি স্টপেজ রয়েছে। ঘন ঘন স্টপেজের কারণে গন্তব্যে পৌঁছতে বেশি সময় লাগে। সিটিং বাসে স্টপেজ কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে যেন যাত্রার কাল ও যাত্রীর চাপ কমে। দাঁড়িয়ে যাত্রী নিতে পারবে না সিটিং বাস। মালিক সমিতির ঘোষণার পর যাত্রী অধিকার সংরক্ষণে নিয়োজিত কমিটিগুলোও সিটিং সার্ভিস বন্ধের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছিল। এসব সংগঠনের নেতারা বলছেন, অবৈধভাবে সিটিং সার্ভিস চলতে পারে না। যারা ভাড়ার নামে গোটা শহরজুড়ে নৈরাজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। তাই অনেক আগে থেকেই দাবি উঠেছিল এসব পরিবহন বন্ধের। রাজধানী ও পাশর্^বর্তী এলাকায় চলাচলকারী বড় বাসের ভাড়া কিলোমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সা, মিনিবাসে ১ টাকা ৬০ পয়সা। সিটিং নাম দিয়ে চলা বাসের ভাড়া কিলোমিটার প্রতি আড়াই থেকে তিন টাকা পর্যন্ত। কোন কোন ক্ষেত্রে আরও বেশি নেয়া হচ্ছে। এমন বেশ কয়েকটি পরিবহন রয়েছে যেগুলোতে ওঠলেই ৪০ টাকা ভাড়া গুনতে হয়। বিআরটিএ সংশ্লিষ্টরা জানান, আইনে সিটিং, গেটলক সার্ভিস নামে বাস পরিচালনার সুযোগ না থাকলেও দুই যুগ ধরে রাজধানীতে চলছে এসব সার্ভিসের নামধারী বাস। এতে মালিকদের ইচ্ছামাফিক ভাড়া নেয়া হলেও বিপুলসংখ্যক যাত্রী এসব বাসের নিয়মিত যাত্রী। সিটিং সার্ভিস বন্ধের অভিযান শুরুর চারদিনের মাথায় অভিযান ১৫ দিনের জন্য স্থগিতের ঘোষণা করা হয়। সিটিং বাসকে কীভাবে বৈধতা দেয়া যায়, তা খতিয়ে দেখতে গত ২ মে তিনজন সাংবাদিককে অন্তর্ভুক্ত করে আট সদস্যের কমিটি গঠন করে বিআরটিএ। এর পরদিন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, তিন মাসের মধ্যে সিটিং সার্ভিসের ব্যাপারে যৌক্তিক সমাধান খুঁজে বের করবে কমিটি। যাত্রী অধিকার সংরক্ষণে কাজ করা নৌ-সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে বলেন, আমাদের দাবি থাকবে যাত্রীদের ভাড়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে যেন নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়। তাছাড়া সিটিং সার্ভিসের সুযোগে সাধারণ গণপরিবহনগুলো যেন সিটিং না চালাতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখারও তাগিদ দেন তিনি।
×