ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তাজকিয়া নুর মুন

মিতালি- মেয়েদের ক্রিকেটের শচীন

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ১৯ জুলাই ২০১৭

মিতালি- মেয়েদের ক্রিকেটের শচীন

ছেলেদের ক্রিকেট নিয়ে মিডিয়ায় যেমন মাতামাতি হয়, মেয়েদের ক্রিকেট নিয়ে ততটা নয়। চলতি নারী বিশ্বকাপে পারফর্মেন্স দেখিয়ে মিডিয়ার দৃষ্টি ফেরাতে সফল হয়েছেন নারী ক্রিকেটাররা। তার মধ্যে একজন ভারতের নারী দলের অধিনায়ক মিতালি রাজ। মেয়েদের ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়ে যিনি এখন ‘লেডি শচীন’ নামে পরিচিত। কিন্তু সাম্প্রতিক ফর্ম তাকে ইতিমধ্যেই ‘লেডি কোহলি’ তকমা এনে দিয়েছে! বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৪১ রান করার পরই প্রথম নারী হিসেবে ৬০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন মিতালি। সে দিনই ওয়ানডে ডে ক্রিকেটে সর্বাধিক রানের মালিক বনে যান ৩৪ বছরের হয়দরাবাদি। শেষ ১৩ ম্যাচে দাপুটে ব্যাটিং দেখিয়ে পুরুষ দলের অধিনায়ক বিরাট কোহলির প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন মিতালি। সতীর্থদের কাছে তিনি এখন শুধু শচীন নন, এবার তিনি এখন ‘লেডি কোহলি’ও বটে! বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ‘ডু অর ডাই’ শেষ ম্যাচে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ভারতকে কাক্সিক্ষত জয় এনে দেন অধিনায়ক। পরিসংখ্যান বলছে, কোথাও যেন কোহলিকে টক্কর দিচ্ছেন হায়রাবাদি কন্যা। চলতি বছরে ব্যাট হাতে ১৪ ইনিংসে কোহলির ব্যাট থেকে এসেছে ৬৯৫ রান। এক ইনিংস কম খেলে মিতালির সংগ্রহ ৬৭৬। এখানেই শেষ নয়! রেকর্ডবুকে নাম তোলাটা যেন এখন যেন লেডি কোহলির কাছে ডালভাত। টানা ৭ ম্যাচে হাফ-সেঞ্চুরি করে বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন তিনি। ২০১৬ কোহলির ব্যাটিং বিশ্বের বড় বড় বোলারদের ঘুম কেড়েছিল। সেই ফর্ম ধরে রেখেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বছরের শুরু থেকে দাপট অব্যাহত রেখেছেন ‘ক্যাপ্টেন হট’। চলতি বছরের প্রথম ম্যাচে পুনেতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানান ‘কিং কোহলি’। এখানেও কোহলির সঙ্গে সেয়নে সেয়ানে লড়াই মিতালির। ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বছরের প্রথম ম্যাচে ৭০ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলে আরও উচ্চতায় ‘কুইন মিতালি। মিতালি রাজকে বলা হয় ভারতীয় প্রমীলা ক্রিকেটের শচীন টেন্ডুলকর। সেটি যে এমনিতে নয়, আরও একবার প্রমাণ করেন তিনি। আগের ম্যাচেই ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহের নতুন রেকর্ড গড়েছিলেন। দলের বড় হারে সেদিন ব্যক্তিগত অর্জন ছিল অনেকটাই ম্লান। ইংল্যান্ডে চলমান মহিলা বিশ্বকাপের শেষ চারে উঠতে তাই লিগ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচটা জিততেই হতো। ডার্বি কাউন্টি গ্রাউন্ডে ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচে ১৮৬ রানের জয়ের পথে প্রবল প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ডকে উড়িয়ে দিয়ে ভারতকে সেমিতে তুললেন মিতালি। খেললেন ১০৯ রানের স্মরণীয় এক ইনিংস। বয়স প্রায় পয়ত্রিশ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৮ বছর, সেই ১৯৯৯ থেকে। তবু রানের খিদে এতটুকু মরেনি। দেশকে বড় কিছুই উপহার দিতে চান। সংবাদ মাধ্যমকে এমনটাই জানিয়েছেন ‘শচীন ইন আ স্কাট’, তবে কাজটা সহজ নয়। কারণ বৃহস্পতবিার দ্বিতীয় সেমিতে ভারতের প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। ‘বিশ্বের সেরা চার দলের মধ্যে থাকতে গেলে ব্যর্থতার পরও এভাবে ফিরে আসার ক্ষমতা থাকা চাই। এই ঘুরে দাঁড়ানোটা আমাদের খুব প্রয়োজন ছিল। সেমিতে ভাল করতে মেয়েরা এখন ফুঁসছে। আমাদের কয়েকজনের জন্য হয়ত এটাই শেষ বিশ্বকাপ। স্মরণীয় করে রাখতে চাই।’ বলেন মিতালি। বাঁচা মরার ম্যাচে ৭ উইকেটে ২৬৫ রানের বিশাল স্কোর গড়ে ভারত। ১১ চারে ১২৩ বলে ১০৯ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন অধিনায়ক মিতালি। চলতি বিশ্বকাপে এর আগে তিনটা হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন, রয়েছে ৪৬ রানের ইনিংসও। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে সেটিকে তিন অঙ্কে রূপ দিলেন। ক্যারিয়ারে এটি তার ষষ্ঠ ওয়ানডে সেঞ্চুরি। ‘দেশের হয়ে খেলতে নেমে যত বেশি সম্ভব রান করে যাওয়াই আমার স্বপ্ন। কারণ রানের খিদে কখনও মরে না।’ মেয়েদের আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রানের মালিক মিতালি। আগের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬৯ রানের দুর্দান্ত ইনিংস উপহার দেয়ার পথে এই কৃতিত্ব অর্জন করেন তিনি। এতদিন সর্বোচ্চ রান ছিল প্রাক্তন ইংল্যান্ড তারকা শার্লট এডওয়ার্ডসের। ১৯১ ম্যাচে ৫৯৯২ রান তার। ৮ ম্যাচ কম খেলেই সেই রান টপকে গেছেন মিতালি। সেই সঙ্গে প্রথম মহিলা ক্রিকেটার হিসেবে এক দিনের ম্যাচে ৬০০০ রানের মাইলস্টোনও অতিক্রম করেন (১৮৩ ম্যাচে ৬,০২৮) ৩৪ বছর বয়সী ডানহাতি ব্যাটার। নিউজিল্যন্ড ম্যাচে সেঞ্চুরি করে মাতিয়েছেন মিতালি, হয়েছেন ম্যাচসেরা। তবে বল হাতে প্রতিপক্ষ ব্যাটিং-লাইন ধসিয়ে দিয়েছেন ২৬ বছর বয়সী বাহাতি স্পিনার রাজেশ্বরী গায়কোয়াড়। এবারের বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই নিয়েছেন ৫ উইকেট। তার বোলিং বিশ্লেষণ ৭.৩-১৫-৫! ফল ৫১ রানের মধ্যেই ৫ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় নিউজিল্যান্ডের মেয়েরা। ২৫.৩ ওভারে ৭৯ রানে অলআউট সুজি বেটসের দল। বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচেই ৫ উইকেট নেয়ার পর অনেকটা মজা করে রাজেশ্বরী বলেন, ‘এই কদিন খেলতে না পেরে হতাশ হইনি। বরং পানি-তোয়ালে নিয়ে মাঠে দৌড়ে যাওয়া আর আসায় ফিটনেসটা ঠিক ছিল! জীবনের সেরা পারফর্মেন্স এটাই। চার উইকেট পেয়েছি অনেকবার। কিন্তু পাঁচ উইকেট এই প্রথম।’ মাহিলাদের ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের এটি ১১তম আসর। অস্ট্রেলিয়া কেবল ‘ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নই’ নয়, এ পর্যন্ত ছয়বার ট্রফি উঁচিয়ে ধরেছে অসি-মেয়েরা! ২০০৫ সালে একবার ফাইনালে উঠলেও শিরোপার স্বাদ পায়নি ভারত। কিংবদন্তিতুল্য মিতালির হাত ধরে দলটি সেই স্বাদ পায় কিনা সেটিই দেখার অপেক্ষা।
×