ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আগামীকাল থেকে বিদ্যুত পরিস্থিতির উন্নতি

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২৬ মে ২০১৭

আগামীকাল থেকে বিদ্যুত পরিস্থিতির উন্নতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী শনিবার থেকে বিদ্যুত পরিস্থিতির উন্নতির আশা করছে বিদ্যুত বিভাগ। যুক্তি হিসেবে বলছে এ সময়ের মধ্যে বন্ধ কয়েকটি বিদ্যুত কেন্দ্র চালুর পাশাপাশি গ্যাসের সরবরাহ বৃদ্ধি ঘটবে। যাতে ১০ হাজার মেগাওয়াটের বেশি উৎপাদন হবে। বৃহস্পতিবার বিকেলে দেশের বিদ্যুত পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুত জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, রমজানে সরবরাহ পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমর মনে হয় আমরা লোডশেডিং করছি না ‘লোড শেয়ারিং’ করছি। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রমজানের শুরুর দিন থেকেই সারাদেশে সিএনজি স্টেশনে বিকেল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিক্রি বন্ধ থাকবে। একই সঙ্গে ভারি শিল্পে প্রতিষ্ঠানও সন্ধ্যকালীন সময়ে বন্ধ রাখতে হবে। দেশে বিদ্যুত সরবরাহ পরিস্থিতির অবনতির মধ্যে বৃহস্পতিবার পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে সংবাদ সম্মেলনটির আয়োজন করা হয়। প্রতিমন্ত্রী বলেন, কয়েকটি বড় বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ থাকার পাশাপাশি ঘূর্ণি ঝড়ে কিশোরগঞ্জে টাওয়ার ভেঙ্গে পড়ায় পরিস্থিতির অবনতি হয়। তবে আমরা চেষ্টা করছি সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে উৎপাদন সাত হাজার থেকে আট হাজারে উন্নীত হয়েছে শনিবার থেকে আরও দুই হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। তিনি জানান, ইতোমধ্যে কাফকো এবং শাহজালাল সার কারখানা বন্ধ করা হয়েছে। এর প্রভাব পড়তে কিছুটা সময় লাগবে। বিদ্যুত বিভাগের হিসেব বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সরল হিসেবে রমজানে তাপমাত্রা না কমলে লোডশেডিং বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করবে। চাহিদা এবং উৎপাদন বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন রমজানে ১০ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন হলেও লোডশেডিং করতে হবে অন্তত দুই হাজার মেগাওয়াট। তবে বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা কমলে চাহিদা কমলে লোডশেডিং এর মাত্রা কমতে পারে। বিদ্যুত বিভাগ বলছে সারাদেশে ছয় বিদ্যুত বিতরণ প্রতিষ্ঠান রমজান মাসে ১১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা দিয়েছে। যেখানে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড তাদের চাহিদা দিয়েছে ৫ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) প্রয়োজন হবে এক হাজার ৫০০ মেগাওয়াট, ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি ডেসকোর প্রয়োজন হবে ৯৫০ মেগাওয়াট, ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) এর দরকরা হবে ৬৫০, বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) দরকার হবে এক হাজার ৫০০ মেগাওয়াট এবং নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির দরকার হবে ৯০০ মেগাওয়াট। পিডিবি বলছে প্রাথমিক ব্যবহার এবং সঞ্চালন ক্ষতি ধরে হিসেবে করলে ১১ হাজার মেগাওয়াট সাবস্টেশন প্রান্তে যোগান দিতে গেলে অন্তত ১২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট উৎপাদন করতে হবে। বলা হচ্ছে আরইবির চাহিদার বিপরীতে প্রাথমিক ব্যবহার এবং সঞ্চালন ক্ষতি ধরে উৎপাদন করতে হবে ৬ হাজার ১০০ মেগাওয়াট, একইভাবে ডিপিডিসির জন্য ১ হাজার ৬৫০ মেগাওয়াট, ডেসকোর জন্য ১ হাজার ১০০ মেগাওয়াট, ওজোপাডিকোর জন্য ৭৫০ মেগাওয়াট, পিডিবির জন্য ১ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট এবং নর্থ ওয়েস্ট ডিস্ট্রিবিউশনের জন্য করতে হবে এক হাজার মেগাওয়াট। যার মোট পরিমাণ ১২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। পিডিবির এই হিসেব বলছে ১১ হাজার মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ১২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট উৎপাদন করলে সঞ্চালন ক্ষতি এবং প্রাথমিক ব্যবহার শেষে লোডশেডিং ফ্রি বিদ্যুত দেয়া সম্ভব হবে। সেখানে সরকার রমজানে বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্যই নির্ধারণ করেছে ১০ হাজার মেগাওয়াট। তবে এই চাহিদা সামাল দিতে রমজানে বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছে বিদ্যুত বিভাগ। প্রত্যেকবার রমজানেই এ ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়। যদিও এসব করার পরেও লোডশেডিং সামাল দেয়া কঠিন হয়। সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে রমজান মাসে সর্বোচ্চ চাহিদায় সান্ধ্যকালীন সময়ে বৃহৎ শিল্পে বিদ্যুত দেয়া হবে না। একই সঙ্গে সাধারণ গ্রাহককে এই সময়ে তাপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রর ব্যবহার বন্ধ, আয়রন এবং পানির মোটর না চালানোর পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে বিপনীবিতানে বাতির ব্যবহার সীমিত করার উপর জোর দিয়ে মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় বিপনীবিতানগুলো বাতির ব্যবহার সীমিত করলে ইফতার এবং তারাবির নামাজের সময় পর্যাপ্ত বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত করা যাবে। আকস্মিকভাবে সঙ্কটের জন্য বেসরকারী খাতের বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো শীতে নিয়মিত সংরক্ষণের কাজ না করে এখন করাকে দায়ী করেন প্রতিমন্ত্রী। তবে তিনি জানান, তারা মনে করেছিল বৃষ্টির মধ্যে সংরক্ষণ করবে। তখন আমাদের চাহিদা নেমে গিয়েছিল ৪ হাজার মেগাওয়াটে। তবে হুট করে এভাবে তাপমাত্রা বেড়ে যাবে সেটা কেউ বুঝতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত রমজানকে সামনে রেখেই সংরক্ষণে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কেন পূর্ণ মাত্রায় উৎপাদন করা হচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রিডের নিরাপত্তার জন্য আমাদের কিছু রিজার্ভ লোড রাখতে হয় যার পরিমাণও ১০ ভাগ। এই লোড না রাখলে হুট করে চাহিদা কমে গেলে বা বেড়ে গেলে গ্রিড বিকল হয়ে ব্ল্যাক আউটের মতো ঘটনা ঘরতে পারে। এদিকে রমজানে বিদ্যুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিকেলে বৃহস্পতিবার বিদ্যুত বিভাগ একটি বৈঠকের আয়োজন করে। বৈঠকে রমজানে বিদ্যুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়।
×