ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মতবিনিময় সভা

রমজানে খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি মেয়র সাঈদ খোকনের

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২৩ মে ২০১৭

রমজানে খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি মেয়র সাঈদ খোকনের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আসন্ন রমজান মাসে ভেজাল ইফতারিসহ পচা-বাসি খাবার বিক্রিকারীদের বিরুদ্ধে জরিমানা করার পাশপাশি কারাদ- প্রদান, রমজানে ক্লাবে মদ ও জুয়ার আসর বন্ধ করতে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। একই সঙ্গে পহেলা রমজান থেকে সারা মাস ডিএসসিসি ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা ও ভেজাল খাবার বিক্রি না করতে এবং গুণগত মান বজায় রাখতে ব্যবসায়ীদের নির্দেশ দেন তিনি। সোমবার দুপুরে রাজধানীর নগর ভবনের মেয়র মোহাম্মদ হানিফ অডিটরিয়ামে ‘আসন্ন রমজানের পবিত্রতা রক্ষা ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার’ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। এসময় ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. শেখ সালাহউদ্দিন, রেস্টুরেন্ট ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও এফবিসিসিআইর পরিচালক খন্দকার রুহুল আমিন, রেস্টুরেন্ট ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের ঢাকা দক্ষিণ অঞ্চলের সভাপতি শাহ সুলতান খোকন, ফল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক সিদ্দিকী, মতি সরদার জামে মসজিদের ইমাম আবু আইয়ুব আনসারি, সাকুরা বারের প্রতিনিধি জিয়াউল হক, ওয়ারি ক্লাবের প্রতিনিধি আব্দুর রব ও ব্যবসায়ী-সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণ অংশ নেন। সাঈদ খোকন বলেন, খাদ্যে ভেজাল দিলে বা দ্রব্যমূল্য নিয়ে কারসাজি করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। অনিয়ম পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। রমজানে ক্লাবে মদ ও জুয়ার আসর কঠোর হাতে দমন করা হবে। কারণ, রমজানের পবিত্রতা কাউকে নষ্ট করতে দেয়া হবে না। তাছাড়া বর্তমানে ফলের মৌসুম চলছে। আবার অনেকেই ফল ছাড়া ইফতার করেন না। ফল খেয়ে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। আপনারা (ফল ব্যবসায়ীরা) ব্যবসা করবেন কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে খেলবেন ডিএসসিসি এটা বরদাশত করবে না। পুরোমাস ভেজালবিরোধী অভিযান চালাবে। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে মেয়র বলেন, দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে ব্যবসায়ীদের অবদান অপরিসীম। দেশের পাশাপাশি জনগণের কথাও চিন্তা করতে হবে। রমজানে কম লাভ করে নিত্যপণ্যের মূল্য ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখুন। তিনি বলেন, পবিত্র রমজানে কোন বার বা ক্লাবে মদ ও জুয়ার অবৈধ আসর বসলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে। বার-ক্লাবের মালিকরা যত প্রভাবশালী হোক না কেন কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তিনি রোজার মাসে নিরাপদ সেহরি, ইফতার নিশ্চিত করতে হোটেল- রেস্তরাঁকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানানো হয়। সভায় প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শেখ সালাহউদ্দিন বলেন,সারা বছর হোটেল-রেস্তরাঁগুলোর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তা বাইরে থেকে দেখা চিত্রের চেয়ে ভিন্ন। কিছু কিছু রেস্টুরেন্টের বাইরে অনেক চাকচিক্য। রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক অনেক চৌকস। লাইটিং, ডেকোরেশন দেখে ভেতরের নোংরা পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু তাদের অনেকের রান্নাঘরের পরিস্থিতি অত্যন্ত নোংরা থাকে। সেই পরিস্থিতি দেখে যে কারোর খাবার গ্রহণের ইচ্ছে দূর হয়ে যাবে। বিভিন্ন অভিযানে গিয়ে দেখা পরিস্থিতির বর্ণনা করে তিনি বলেন, রান্নাঘরে বহুদিন ধরে টাইলস ভাঙ্গা অবস্থায় থাকে, একই স্থানে বছরের পর বছর ধরে নোংরা পানি জমে থাকে। সেখানে কি পরিমাণে ব্যাক্টেরিয়া ও জীবাণু জন্মে সেটা হিসাব করা কষ্টসাধ্য। রেস্টুরেন্টকর্মীদের পরিষ্কার-পরিচ্ছিন্নতার অবস্থা অত্যন্ত বাজে, রান্নাঘর আর পাশের টয়লেটে পরিস্থিতি একাকার থাকে। হোটেল ব্যবস্থাপকরা জেনে-বুঝেই বেশি লাভের আশায় খাবারে ভেজাল মেশায় বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, কিছু কিছু হোটেল ব্যবসায়ী ও মালিক রোজার মাসে অধিক মুনাফার আশায় খাদ্যে ভেজাল মেশান, আবার খাবারের দামও বাড়িয়ে দেন। পুরনো পোড়া তেল ব্যবহারসহ অনেক অসদুপায় অবলম্বন করেন। এটা রোজার চেতনাবিরোধী। সভায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য আব্দুল বাতেন মিয়া শরবত, পানীয়, ফলের জুস অবশ্যই নিরাপদ পানি দিয়ে তৈরির কথা বলেন। মতবিনিময় সভায় ডিএসসিসির পক্ষ থেকে হোটেল-রেস্তরাঁ মালিক ও কর্মচারীদের কিছু নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এতে বলা হয়, বাবুর্চিসহ সব রেস্তরাঁকর্মীকে গ্লাভস ও মাথায় চুল ঢাকার মতো বিশেষ টুপি পরিধান করতে হবে। রান্নার সঙ্গে যুক্তদের কাজ শুরুর আগে হাত পরিষ্কার করে নিতে হবে। রান্নঘর প্রতিদিন ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। থালাবাসন ও খাবার রাখার অন্যান্য পাত্র ধোয়ার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত পর্যায়ে ব্যবহার করতে হবে খাবার উপযোগী পানি। ছে৭ায়াচে রোগে আক্রান্ত কর্মীদের ছুটি দিতে হবে। সুস্থ হয়ে তারা কাজে যোগ দেবেন। খাবারের কাছে হাঁচি-কাশি দেয়া যাবে না। রেস্তরাঁর ডাস্টবিন অবশ্যই ঢেকে রাখতে হবে, যাতে আবর্জনায় মাছি বসার সুযোগ না পায়। বেনামী কোন কোম্পানির খাবার উপাদান কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ (প্যাকেটজাত) খাবার পরিবেশন করা যাবে না। অনুমোদনহীন খাবার রং ব্যবহার করা যাবে না। নিরাপদ খাবার নিশ্চিত করতে এসব নির্দেশনা মানা হচ্ছে কিনা তা দেখতে প্রথম রোজা থেকে ঢাকায় হোটেল-রেস্তরাঁয় অভিযান পরিচালনা করবে সিটি কর্পোরেশন।
×