ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কাজ নেই, দিনমজুরেরা দুর্ভোগে ॥ হাকালুকি হাওড়ে সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি

হাওড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কোন কৃষক না খেয়ে মরবে না ॥ ত্রাণমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৬ এপ্রিল ২০১৭

হাওড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কোন কৃষক না খেয়ে মরবে না ॥ ত্রাণমন্ত্রী

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরবসহ কুলিয়ারচর, বাজিতপুর, অষ্টগ্রাম ও মিঠামইন উপজেলার বিভিন্ন হাওড়াঞ্চলে দিনমজুর ও সাধারণ শ্রমিকের হাতে এখন তেমন কোন কাজ নেই। ফলে গরিব মানুষ অর্থাভাবে দুর্ভোগে পড়েছে। খেয়ে না খেয়ে চলছে অনেকের সংসার। প্রবল বর্ষণ আর বাঁধভাঙ্গা পানিতে আগাম বন্যা এবং পাহাড়ি ঢলে হাওড়ের বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ায় তাদের পরিবারে নেমে এসেছে অভাব। এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম বলেছেন, ‘হাওড়াঞ্চলে অকাল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত একজন কৃষকও না খেয়ে থাকবে না। তিন ক্যাটাগরিতে তাদের সহায়তা দেয়া হবে। অতিদরিদ্র পরিবারগুলোর মাঝে আপাতত ১০০ দিনের কর্মসূচীর আওতায় মাসে ৩০ কেজি করে চাল এবং নগদ ৫০০ টাকা করে বিতরণ করা হবে। অন্যদিকে আগাম বন্যায় ব্যাপক ফসলহানিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে হাওড়াঞ্চলকে অবিলম্বে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবিতে কিশোগরঞ্জে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)’র উদ্যোগে শহরের গৌরাঙ্গবাজারে ঘণ্টাব্যাপী এ কর্মসূচীতে দল দুটির জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শত শত নেতাকর্মী অংশ নেয়। সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার হাকালুকি হাওড়ে সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে বর্ষণ অব্যাহত থাকায় সিলেটে নদনদী ও হাওড় অঞ্চলে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিজস্ব সংবাদদাতা, নেত্রকোনা থেকে জানান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম বলেছেন, ‘হাওড়াঞ্চলে অকাল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত নি¤œ মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের জন্য ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ১৫ টাকা কেজি দরে ওএমএস (খোলা বাজারে বিক্রি) এর চাল বিক্রির ব্যবস্থা থাকবে। হাওড়ে মাছ মরে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত জেলেরাও পুনর্বাসন কর্মসূচীর আওতায় আসবে। কৃষকদের মাথা থেকে হাত না নামা পর্যন্ত এবং আগামী ফসল না ঘরে তোলা পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের সহায়তা অব্যাহত থাকবে’। সোমবার রাত ১০টায় নেত্রকোনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মঙ্গলবার নেত্রকোনার বারহাট্টা ও মদন উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন এবং কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। জেলা প্রশাসক ড. মুশফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ্ কামালের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় আরও বক্তব্য রাখেনÑ যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় এমপি, রেবেকা মমিন এমপি, ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল বীরপ্রতীক এমপি, ছবি বিশ্বাস এমপি, ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু এমপি, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রশান্ত কুমার রায়, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা নূর খান মিঠু, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নূরুল আমিন, সাংবাদিক সঞ্জয় সরকার ও পল্লব চক্রবর্তী প্রমুখ। এ সময় বিভিন্ন উপজেলার জনপ্রতিনিধি, জেলা পর্যায়ের সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তা ও সরকারী দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভায় ত্রাণমন্ত্রী বলেন, যে কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমরা পারদর্শী। আমাদের খাদ্যের কোন অভাব নেই। ক্ষতিগ্রস্তরা যে ধরনের সহায়তা চাইবেÑ আমরা তাই দিতে প্রস্তুত। নিন্দুকদের সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, অহেতুক ফাঁকা আওয়াজ দেবেন না। সভার শুরুতে জেলা প্রশাসক ড. মুশফিকুর রহমান নেত্রকোনার বিভিন্ন উপজেলার ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ তুলে ধরেন। তিনি জানান, জেলার ৮৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬৯টি ইউনিয়নই অকাল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬৯ হাজার ৭১০ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অন্তত ১ লাখ ৬৭ হাজার ১৮০ জন কৃষক। বিভিন্ন হাওড়ে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৮০ টন মাছ মরে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ১৬ হাজার ৫২৮ জন জেলে। গো-খাদ্য সঙ্কটে প্রায় ৪ লাখ ১৩ হাজার ২৩৪টি গবাদিপশু ঝুঁকির মধ্যে আছে। ক্ষয়ক্ষতি ও ঝুঁকি মোকাবেলায় তিনি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় আগামী ১০ মাস ১০ টাকা কেজি করে চাল বিক্রি, ১০ মাসের জন্য ওয়ার্ড পর্যায়ে ওএমএসর ডিলার নিয়োগ, প্রতিটি ইউনিয়নে অন্তত ১ হাজার ৫০০ জনকে ভিজিএফ সহায়তা প্রদান, ছয় মাসের জন্য ৩০০ মেট্রিক টন দানাদার গো-খাদ্য বরাদ্দ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে উপবৃত্তির হার বৃদ্ধি, উন্মুক্ত হাওড়-জলাশয়ে পর্যাপ্ত মাছের পোনা অবমুক্তকরণ, অতি ঝুঁকিপূর্ণ ৫০ কিলোমিটার জায়গায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ এবং নদী ও খাল খননের সুপারিশ করেন। কাজ নেই নিজস্ব সংবাদদাতা, কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে জানান, উত্তরাঞ্চলসহ রংপুর, দিনাজপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন জেলার এলাকার অনেক মানুষ হাওড়াঞ্চলে এসেছিল ধান কাটার জন্য। কিন্তু পাহাড়ী ঢলে বোরো ফসল নষ্ট হওয়ায় তারা কাজ না পেয়ে দিশেহারা হয়ে কাজের সন্ধানে ভৈরব আসে। এখানেও কাজ না পেয়ে তারা এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছে। ভিড় জমাচ্ছে এ জনপদে। কাজের সন্ধানে এসেছে বাচ্চু মিয়া (৫০), মোবারক মিয়া (৪০), লোকমান (৩৫)। ১৫-১৬ জনের এ দলের সঙ্গে মঙ্গলবার দুপুরে কথা হয় ভৈরব বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। তারা এসেছে রংপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে। তাদের এলাকায় কাজ নেই। কাজ করতে হাওড়াঞ্চলে যায়। কিন্তু সেখানে কাজ নেই। ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণে কাজ জুটেনি। পাহাড়ী ঢলে বাঁধ ভেঙ্গে ফসলহানির কারণে বেকার হয় সাধারণ দিনমজুর। তাদের ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীদের নামমাত্র খাবারের টাকা দিয়ে এসেছিল। এ অঞ্চলে কাজ করে অর্থ নিয়ে তাদের মুখে হাসি ফুটানোর কথা ছিল। কিন্ত আগাম বন্যায় তাদের সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়েছে। দলটি ৩ দিন ধরে ভৈরবে অবস্থান করছে। টাকার অভাবে বাড়ি ফিরতে পারছেন না। পরিস্থিতির উন্নতি স্টাফ রিপোর্টার সিলেট অফিস থেকে জানান, বর্ষণ অব্যাহত থাকায় সিলেটে নদনদী ও হাওড় অঞ্চলে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃষ্টিজনিত কারণে হাওড় এলাকায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পানির দুষক্রিয়া কমতে শুরু করেছে। হাকালুকি হাওড়ে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। হাওড় এলাকার মাছ ও জলজপ্রাণি নিরাপদ আবাস ফিরে পাচ্ছে। বিষমুক্ত হয়ে যাওয়ায় এখন হাওড়ের মাছ খেলে সমস্যা হবে না। মঙ্গলবার থেকে হাকালুকি হাওড়ে জেলেরা ফের মাছ ধরতে পারবেন বলে স্থানীয় মৎস্য বিভাগ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। কুলাউড়ার উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ মঙ্গলবার এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
×