ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জলি রহমান

পহেলা বৈশাখ হালখাতার হালচাল

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ৯ এপ্রিল ২০১৭

পহেলা বৈশাখ   হালখাতার হালচাল

পহেলা বৈশাখে পুরনো সব গ্লানি ও দূরত্বের হিসাব ভুলে নতুন বছরে নতুন করে হিসাব খোলার নাম হালখাতা। আবহমানকাল থেকে প্রচলিত এ রীতি এখনও অমলিন। আগেকার দিনে ব্যবসায়ীরা একটি মোটা খাতায় তাদের যাবতীয় হিসাব লিখে রাখতেন। এ খাতাটি বৈশাখের প্রথম দিন নতুন করে হালনাগাদ করা হতো। হিসাবের খাতা হালনাগাদ করা থেকেই ‘হালখাতা’র উদ্ভব। এদিন ব্যবসায়ীরা দেনাদারদের মিষ্টিমুখ করান এবং তারা পূর্বের সকল পাওনা পরিশোধ করেন। তাই পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে লেনদেন করা হয় কোটি কোটি টাকা। শুধু বাংলাদেশেই নয়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও রয়েছে এ রীতির প্রচলন। তাই জাতীয় অর্থনীতিতে এর গুরুত্ব অপরিসীম। দীর্ঘদিন যাবত মুদিদোকানির ব্যবসা করছেন ঝালকাঠি জেলার দেলোয়ার হোসেন। এক সময় দোকানটি খুব ছোট ছিল। কিন্তু এখন তার দোকানের পরিধি ও ব্যবসা দুটিই বেড়েছে। দুটি সন্তানকেই পড়ালেখা করিয়ে শিক্ষিত করেছেন। তার দোকান থেকে কিছু ক্রেতা নগদ টাকায় পণ্য কিনলেও বেশিরভাগ ক্রেতারা পণ্য নিয়ে যান বাকিতে। কারও কাছে টাকা চাইলেও তারা পার পেয়ে যান হালখাতার অজুহাতে। তাই পহেলা বৈশাখ এলেই দেলোয়ার হোসেন প্রত্যেক ক্রেতার বাড়িতে হালখাতার দাওয়াত দিয়ে চিঠি পাঠিয়ে দেন। চিঠি পেয়ে ক্রেতারা পাওনা পরিশোধের সংশয়ে ভুগলেও সর্বাত্মক চেষ্টা করেন সব ঋণ পরিশোধ করার। ফলে দোকানি দেলোয়ার হোসেন হালখাতার দিন সবাইকে মিষ্টি খাওয়ান। আগে শুধু জিলাপি দিয়ে হালখাতার অনুষ্ঠান করতেন। বিগত কয়েক বছর ধরে মিষ্টির প্যাকেট বিতরণ করে হালখাতা উদ্যাপন করছেন দেলোয়ার হোসেন। তাই হালখাতা এলে ব্যবসায়ীরা যেমন খুশির জোয়ারে ভাসতে থাকেন, তেমনি দেনাদাররা ঋণ পরিশোধ করে সবাই একসঙ্গে আনন্দ করেন। এবার বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বকেয়া কর আদায়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) হালখাতা অনুষ্ঠান করবে বলে জানিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান মোঃ নজিবুর রহমান। তিনি বলেছেন, বকেয়া আদায়ে আমরা এবার নতুন পরিকল্পনা নিয়েছি। নববর্ষ উপলক্ষে এবার হালখাতা করা হবে। এর অংশ হিসেবে পহেলা বৈশাখের আগের দিন চৈত্রসংক্রান্তিতে করদাতাদের মিষ্টিমুখ করানো হবে। এটি হবে মূলত বকেয়া আদায় নয়, বকেয়া পরিশোধ। প্রতি বছরই হিসাবের খাতা আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করা হয়। তাই ছোট-বড় সব দোকানেই পহেলা বৈশাখে হালখাতার অনুষ্ঠান হয়। যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের নিচে পানের দোকানি মনোয়ার মিয়া। খুব ছোট একটি দোকান দিয়ে ব্যবসা করছেন। এ ব্যবসা দিয়ে তিনি ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করা ছাড়াও ঢাকায় জমিও কিনেছেন। তার প্রতিদিনের কিছু ক্রেতা আছে যারা সব সময় নগদ মূল্যে ক্রয় করতে পারেন না। এবারকার পহেলা বৈশাখে তিনিও পাওনা আদায়ে করবেন হালখাতার অনুষ্ঠান। এভাবে কিছু অর্থনৈতিক কার্যকলাপ সাধারণ জনগণ ও ব্যবসায়ীদের ওপর অনেক প্রভাব ফেলে। হালখাতা অনুষ্ঠানের পর দোকানিরা নতুন করে অনেক পণ্য সংগ্রহ করেন। ফলে পাইকারি ব্যবসায়ীরাও হন লাভবান, যা অর্থনীতিতে রাখে ইতিবাচক ভূমিকা। আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হালখাতা হয়ে দাঁড়িয়েছে বাঙালী সংস্কৃতির অঙ্গ।
×