ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অপারেশন টোয়াইলাইটে ২ জঙ্গী নিহত

জঙ্গীরা হাতের মুঠোয়

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২৭ মার্চ ২০১৭

জঙ্গীরা হাতের মুঠোয়

রশিদ মামুন/সালাম মসরুর, সিলেট থেকে ॥ সিলেটে জঙ্গী আস্তানা আতিয়া মহলে ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’-এ এখন পর্যন্ত দুই জঙ্গী নিহত হয়েছে। সেনাবাহিনীর প্যারাকমান্ডোদের গুলিতে এক এবং আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণে অপর জঙ্গী নিহত হয়েছে। এখনও আতিয়া মহলের ভেতরে আরও কয়েক জঙ্গী রয়েছে বলে ধারণা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রবিবার শেষ বিকেলে ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ সম্পর্কে সর্বশেষ খবর জানাতে আয়োজন করা সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়েছে। এদিকে গ্রেনেড আর গুলির শব্দে আতঙ্কে দিন কাটছে আতিয়া মহলের চারপাশে এক বর্গকিলোমিটার এলাকার সাধারণ মানুষের। রবিবার সারাদিন এই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকা কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। শনিবার রাতে শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণের পর জারি করা ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে কেউ এই এলাকায় প্রবেশ করতে পারছেন না। আতিয়া মহলের চারপাশের বাড়িঘর ফেলে স্থানীয় বাসিন্দা নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন। সেনা সদর দফতরের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান রবিবার বিকেলে পাঠানপাড়া জামে মসজিদের কাছে সংবাদ সম্মেলনে দুই জঙ্গীর নিহত হওয়ার খবর দেন। তিনি জানান, যে দুই জঙ্গী সেনাবাহিনীর গুলিতে আহত হয়েছিল তারা নিজেরাই সুইসাইডাল ভেস্ট পরে সুইসাইড করেছে। আমরা ভেতরে অন্তত দুজন পুরুষের লাশ পড়ে থাকতে দেখছি। তবে আরও একাধিক জঙ্গী ভেতরেই রয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ভেতরে যারা আছে তারা খুবই প্রশিক্ষিত। আমাদের দিকে একাধিক গ্রেনেড চার্জ করেছে। আমরা একটা গ্রেনেড ছুড়ে দিয়েছিলাম তারা সেটি ধরে আবার আমাদের দিকে ছুড়ে মেরেছে। অপারেশন টোয়াইলাইট সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা রকেটলঞ্চার নিয়ে এসেছি, টিয়ারশেল মারার পর তারা ছোটাছুটি শুরু করে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, এখনও একাধিক জঙ্গী জীবিত রয়েছে। তবে কত পুরুষ বা কত নারী, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ভেতরে যেসব জঙ্গী রয়েছে তারা প্রশিক্ষিত, কিভাবে গ্রেনেড প্রতিহত করা যায়, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে কিভাবে বাঁচা যায়, এগুলো তারা জানে । ফখরুল আহসান বলেন, ঘরের বিভিন্নস্থানে বিস্ফোরক লাগিয়ে রেখেছে জঙ্গীরা। এতে বোঝা যায়, জঙ্গীরা জানে, কিভাবে নিজেদের আবাসস্থল দুর্গম করে রাখতে হয়। তিনি বলেন, যেভাবে তারা বিস্ফোরক লাগিয়ে রেখেছে, এজন্য অভিযান চালানো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই সময় বেশি লাগছে। আমাদের প্রাথমিক যে টার্গেট ছিল, ভেতরে থাকা সাধারণ লোকদের সরিয়ে আনা, তাতে কমান্ডোরা সফল হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নিচতলার সিঁড়ির দিকে বেশি পরিমাণে বিস্ফোরক লাগিয়ে রেখেছে জঙ্গীরা। তাদের ধারণা ছিল, অভিযান নিচতলা থেকে শুরু হয়ে উপরে যাবে। যে জন্য তারা নিচে বিস্ফোরক লাগায়। যখন কমান্ডোরা ভবনে ঢুকে বিষয়টি দেখতে পায় তখন উল্টোভাবে অভিযান শুরু করেন কমান্ডোরা। পাঁচ তলা থেকে শুরু হয় অভিযান। একটা থেকে আরেকটা ফ্লোরে অভিযান হয়। এভাবে দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে আটকাপড়াদের উদ্ধার করা হয়। নিচতলায় অভিযানের সময় সিঁড়ি ব্যবহার না করে জানালার গ্রিল কেটে নিচতলায় থাকা সাধারণ লোককে উদ্ধার করা হয়। অভিযানের সময় বৃষ্টি থাকায় অভিযানকারী দলের জন্য সহায়ক ছিল বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এতে ভেতর থেকে অনেক কিছু বুঝতে পারেনি জঙ্গীরা। ফখরুল আহসান বলেন, অভিযানে রকেটলঞ্চার দিয়ে ভবনে বড় গর্ত করা হয়। কিছু বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়। কিন্তু তাতেও প্রশিক্ষিত জঙ্গীদের কাবু করা যাচ্ছিল না। এ অবস্থায় টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়। এ শেলের প্রতিক্রিয়ায় ভেতরে জঙ্গীরা দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। এ সময় উপর থেকে নিচতলায় নেমে আসার পর দুই জঙ্গীকে গুলি করা হয়। এতে এক জঙ্গী তার গায়ে জড়ানো সুইসাইড ভেস্টের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মারা যায়। অপরজন গুলিবিদ্ধ হয়েই মারা যায়। লাশ দুটি ভেতরেই রয়েছে। দুজনই পুরুষ। ভেতরে এখনও এক বা একাধিক জঙ্গী রয়েছে, এটা নিশ্চিত। তবে কয়জন পুরুষ বা কয়জন মহিলা আছে, তা নিশ্চিত নয়। জঙ্গীদের কাছে স্মল আর্মস, রূপান্তরিত বিস্ফোরক (আইইডি), বিস্ফোরক রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেগুলো দিয়ে তারা পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করেছে। শনিবার সন্ধ্যায় বাইরে হামলার সঙ্গে ভেতরের জঙ্গীদের কোন সম্পর্ক আছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা শুধু একটি নির্দিষ্ট অপারেশনের জন্য এসেছি। বাইরের বিষয়টি পুলিশ বা অন্য সংসস্থাগুলো বলতে পারবে। তিনি বলেন, অভিযান চলছে। অভিযান শেষ করেই কমান্ডোরা ফিরবে। অভিযান শেষ করতে কতদিন বা কত সময় লাগবে তা বলা যাচ্ছে না। সিলেট শহরের টিলাগড় শাপলাবাগ এলাকার সূর্য দিঘল বাড়ি থেকে ২০০৬ সালে জেমএবির প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আব্দুর রহমানকে সপরিবারে গ্রেফতার করা হয়। এই শহরেই পাশাপাশি সময় ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর বোমা হামলা হয়। যে মামলায় হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানের ফাঁসির আদেশ হয়। এই হান্নান ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার অন্যতম আসামী। তার ফাঁসির সময়সীমা ঘনিয়ে আসায় সারাদেশে আবারও জঙ্গী তৎপরতা বেড়ে গেছে। তবে স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন ২০০৬’র পর সিলেটে এ ধরনের বড় জঙ্গী তৎপতা আর দেখা যায়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, আতিয়া মহলে বড় কোন জঙ্গী নেতা থাকতে পারেন। এর আগে শায়ক রহমানকে গ্রেফতারের সময়ও ৩৬ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এবার আতিয়া মহল সময়ের সেই সীমা অতিক্রম করছে। গত শুক্রবার ভোর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাড়িটি ঘিরে রাখে। গত সন্ধ্যায় সেই সময় ৫৬ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। অন্যদিকে শনিবার সকালে অভিযান শুরু করে বিকেল নাগাদ ওই বাড়িতে জিম্মি হয়ে থাকা ২৮ পরিবারের ৭৮জনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় সেনাবাহিনী। এর পর পরই শুরু হয় গুলি বিনিময়। সন্ধ্যায় আতিয়া মহলের আধা কিলোমিটারের মধ্যে অভিযানের মধ্যেই শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গীরা। এতে এখন পর্যন্ত ছয় জনের নিহত হওয়ার খবর দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রবিবার ভোর থেকে সকাল সোয়া ৮টা পর্যন্ত থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা যায়। গুলিবর্ষণের মধ্যেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লক্ষ্য করে সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটে প্রথম বোমা ছুড়ে মারে জঙ্গীরা। এভাবে সারাদিন যতবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযানে যাওয়ার চেষ্টা করছে ততবারই জঙ্গীরা ভেতর থেকে হাতবোমা ছুড়ে মেরেছে। সেনাবাহিনীর প্যারাকমান্ড দল জঙ্গীদের বোমা বিস্ফোরণের জবাবে পাল্টা গুলি বর্ষণ করেছেন। গুলিতে আতিয়া মহলের চারপাশ থেকে থেকেই কেঁপে উঠেছে। দায়িত্বরত এক পুলিশ কর্মকর্তা বিকেলে জনকণ্ঠকে জানান, এখানে সারা দিনই গুলি হচ্ছে। যখন জঙ্গীরা ভেতর থেকে বোমা ছুড়ছে তখনই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলি করছেন। গুলিতে আশপাশের এলাকা কেঁপে উঠছে। স্থানীরা সকলে বাড়িঘর ফেলে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন। স্থানীয়রা বলছেন সকাল নয়টা ৫৭ মিনিট, সকাল ১০টা ৭ মিনিট, বেলা ১১টা ৪৩ মিনিট ও বেলা দুটা ৪১ মিনিট, ৩টা ১৫ মিনিটে কয়েকটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গীরা। এর মধ্যে কয়েকটি বেশ শক্তিশালী ছিল। সকাল সোয়া আটটার পর কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে সকাল ১০টায় ওই ভবনের ভেতর থেকে বোমা ছুড়ে মারলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ওই ভবন লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। বেশ কিছুক্ষণ চলে জঙ্গীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলি বিনিময়। ১২টা ২৭ থেকে গোলাগুলি বন্ধ ছিল, পরে ১টা ১৫ মিনিটে একটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে। এর পর ২টা ১০ মিনিটে আবারও গুলিবর্ষণ শুরু করে নিরাপত্তা বাহিনী। এ সময় আবারও বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ অব্যাহত থাকলেও সেনাকমান্ডোসহ ‘সোয়াট’ র‌্যাব, পুলিশ নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের উৎকণ্ঠা সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ সফলে বিলম্বের কয়েকটি কারণ জানা গেছে। আতিয়া মহলে প্রবেশের প্রতিটি দরজায় শক্তিশালী বিস্ফোরক লাগিয়ে রেখেছে জঙ্গীরা। এ ছাড়া ভবনের নিচে বাঙ্কারে বিপুল বিস্ফোরক ও গোলাবারুদসহ বিধ্বংসী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাসহ অবস্থান করছে তারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও বলছেন, তারা আটকেপড়া বাসিন্দাদের উদ্ধারের সময় দেখেছেন আতিয়া মহলের নিচতলায় বিপুল বিস্ফোরক ছড়িয়েছিটিয়ে রাখা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মূলত কি পরিমাণ বিস্ফোরক রয়েছে সে সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে কোন অভিযানে যেতে চাইছে না। এতে হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে মনে করছেন তারা। জঙ্গীরা ট্রেনিংপ্রাপ্ত হওয়ায় তাদের সহজে নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। তবে বাড়ির ভেতরে কত জঙ্গী রয়েছে তা এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি কেউ। রবিবার সকাল ৭টার দিকে আতিয়া মহলের আশপাশে চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। ওই এলাকার মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও বাহন ছাড়া অন্য কোন যানবাহন চলাচল করছে না। এ ছাড়া একসঙ্গে তিনজনের বেশি লোক চলাচল করা যাবে না বলেও জানানো হয়েছে। স্থানীয়দের এলাকায় ঢুকতে হলেও পুলিশের নিরাপত্তা চৌকিতে তল্লাশি করা হচ্ছে। হুমায়ূন রশীদ চত্বর ও লালমাটিয়া এলাকায় ব্যারিকেড দিয়ে সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের বন্ধ করে দেয়া অংশে থাকা শাখা সড়কও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার জেদান আল মুসা বলেন, গত শনিবার সন্ধ্যায় সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের দুটি স্থানে পৃথক বোমা হামলা হয়। এ ঘটনার পর থেকে সড়কটিতে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়। শিববাড়ির আতিয়া মহলে জঙ্গী আস্তানাকে ঘিরে অভিযান শুরুর পর থেকে ওই এলাকায় উৎসাহী মানুষজন ভিড় করলেও শনিবার রাতের বোমা বিস্ফোরণে ৬ জন নিহত হওয়ার পর রবিবার থেকে অতি উৎসাহী মানুষের সংখ্যা কমে গেছে। রবিবার দুপুর দুটা থেকে ৫টা পর্যন্ত ওই এলাকা ঘুরে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক দেখা গেছে। শিববাড়ির পাশে মোমিন খোলা, জেইনপুর এবং পাঠানপাড়া গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। উৎসুক মানুষ নিজেদের বাড়ির সামনে এসে আতিয়া মহলের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। সেখান থেকে আতিয়া মহল দেখা না গেলেও মানুষ রুদ্ধশ^াস অবস্থার অবসান চাইছে। মোমিনখোলা গ্রামের হাবিবুর রহমান জানান, গতকাল (শনিবার রাতে) তার সামনেই বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ স্থানীয় মানুষকে সরিয়ে দিলেও উৎসুক মানুষ পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে আতিয়া মহলের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। এ সময় শক্তিশালী দুটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। তিনি বলেন, এরপর থেকে স্থানীয়দের মধ্যে আরও আতঙ্ক কাজ করছে। তারা কিছুই করতে পারছেন না, বাড়ি থেকেও বের হতে পারছেন না। পুলিশ তাদের মূল সড়কে যেতেও দিচ্ছে না। তাদের চলাচল করতে হচ্ছে রেল রাস্তার পাশ ধরে যাওয়া হাঁটাপথে। অন্যদিকে মূল সড়কের আশপাশের সকল বাড়ি থেকে মানুষ নিরাপদ দূরত্বে চলে গেছে। এখানের আব্দুল খালেক জানান, তারা আতঙ্কে আছে। এখান থেকে কিছুটা দূরে হলেও গুলির শব্দে তারা কেঁপে কেঁপে উঠছে। তাদের প্রতিবেশী এক যুবক বোমার আঘাতে মারাত্মক আহত হয়েছেন। তার বাঁ পা বোমার স্পিøন্টারে মারাত্মক যখম হয়েছে। শুধু অতি উৎসাহে এরা নিজেদের ক্ষতি করছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন পুলিশ এসে এদের বাবা-মাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এতে তারা ভয়ের মধ্যে রয়েছেন। রবিবার ওই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে হুমায়ূন রশিদ চত্বর থেকে পাঠানপাড়া আতিয়া মহল পর্যন্ত মূল সড়কের কিছুদূর অন্তর অন্তর পুলিশের প্রহারা রয়েছে। মানুষ এই প্রহারা ভেঙ্গে যেতে পারছেন না। শুধু মূল সড়কের সমান্তরাল রেললাইনের পাশের সড়ক দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের যেতে দেয়া হচ্ছে। তবে আতিয়া মহলের ৫০০ মিটারের ভেতরে কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না পুলিশ। পুরো এলাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘিরে রেখেছে। রবিবার সকালে ভয়াবহ বোমা হামলায় আহত ব্যক্তিদের দেখতে ওসমানী হাসপাতালে যান সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, শনিবারের ঘটনায় সিলেট মহানগরীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া তল্লাশি চৌকিও বাড়ানো হয়েছে। বোমা হামলার ঘটনায় নিহত দুই পুলিশ কর্মকর্তার ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলেও জানিয়েছেন এসএমপি কমিশনার। এদিকে আতিয়া মহলের ভেতরে জঙ্গী এবং বাইরে শনিবার সন্ধ্যায় বোমা হামলায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। নগরীর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মানুষের যাতায়াত কম হলেও সিলেটের মূল শহর জিন্দাবাজারে মানুষের ভিড় দেখা গেছে। যথারীতি রবিবার স্বাধীনতা দিবসের নানা আয়োজন চলেছে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত।
×