ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নাক গলাবেন না ॥ আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৫ মে ২০১৬

নাক গলাবেন না ॥ আওয়ামী লীগ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রশ্নে পাকিস্তানের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তৃতা-বিবৃতির তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বেশি নাক গলালে প্রয়োজনে পাকিস্তানের সঙ্গে সব কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে দলটির সিনিয়র নেতারা বলেছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর অধিকার পাকিস্তানের নেই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতেও পাকিস্তানের মুখ বন্ধ রাখা উচিত। পাকিস্তানের চোখ রাঙানিতে ভয় পায় না বাংলাদেশ। নেতারা বিএনপি নেতাদের ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে বৈঠকেরও তারা কঠোর সমালোচনা করেন। শনিবার রাজধানীতে পৃথক পৃথক অনুষ্ঠানে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যৌথ সভায় দলের সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর কোন অধিকার পাকিস্তানের নেই। পাকিস্তান বেশি বাড়াবাড়ি করছে। তবে তাদের চোখ রাঙানিতে বাংলাদেশ ভয় পায় না। পাকিস্তানের উদ্দেশে শেখ সেলিম বলেন, তোমাদের সঙ্গে আমাদের এমন কোন ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা মহব্বত নেই যে, ওইখানে বসে আমাদের দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবা। দরকার হলে তোমাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রাখব না। দেশে মানবতাবিরোধীদের বিচার হয়েছে। সিমলা চুক্তি অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধী ১৯৫ পাকিস্তানী সেনার বিচার করা কথা ছিল। কিন্তু পাকিস্তান চুক্তি ভঙ্গ করে সেই বিচার করেনি। দরকার হলে জাতিসংঘের সহায়তা নিয়ে সেই ১৯৫ যুদ্ধাপরাধী পাক সেনার বিচারও আমরা করব। ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর বৈঠকের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটাই হলো বিএনপির আসল চেহারা! মুখে ইসলামের কথা বললেও বিএনপি ইসরাইলের সঙ্গে হাত মেলায়। সরকার উৎখাত করবে এবং বিএনপি ক্ষমতায় এলে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেবে- এটিই তাদের ষড়যন্ত্র। কিন্তু শেখ হাসিনাসহ বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একটি কর্মী বেঁচে থাকতে নবী ও ইসলামের শত্রু ইহুদিরা বাংলাদেশে কোন সুযোগ পাবে না। নিজামীর ফাঁসি রায় কার্যকরের পর পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়ার নিন্দা জানিয়ে শেখ সেলিম আরও বলেন, একাত্তরে আমরা পাকিস্তানকে বিদায় দিয়েছি। এখন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর চেষ্টা করলে প্রয়োজনে পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কও ছিন্ন করা হবে। একাত্তরেই পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে পাকিস্তানের নাক গলানো কিংবা হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। আশা করি ভবিষ্যতে পাকিস্তান এ ধৃষ্টতা দেখাবে না। তোমাদের এই জংলী মনোভাব বাংলাদেশের মানুষ বরদাশত করবে না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার ঘৃণ্য মানসিকতার এখনও পরিবর্তন হয়নি। শেখ হাসিনাকে হত্যা এবং এ সরকারকে উৎখাতে সকল ষড়যন্ত্রে ব্যর্থ হয়ে এখন ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থার কাছে ধর্না দিয়েছেন। কিন্তু কোন ষড়যন্ত্রই বাংলাদেশে আর বাস্তবায়িত হবে না। ১৭ মে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিনস উপলক্ষে দলীয় কর্মসূচী সফল করতেই এ যৌথসভার আয়োজন করা হয়। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সভাপতি একেএম রহমতউল্লাহ এমপির সভাপতিত্বে যৌথসভায় আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক এমপি, খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, ঢাকা মহনগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত, সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান প্রমুখ। এদিকে রাজধানীর ধানম-ির বিলিয়া মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, সারাবিশ্বের স্বীকৃত আইনেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হচ্ছে। কয়েকটি রায় কার্যকরও করা হয়েছে। পাকিস্তানের এ বিষয়ে কথা বলা উচিত নয়। বরং তাদের মুখ বন্ধ করা উচিত। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে যাওয়ার বিষয়ে পাকিস্তানের বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাকিস্তান এখনও ঘুমিয়ে আছে। তারা এখনও ঘুম থেকে ওঠেনি। ৪৪ বছর হয়েছে আমরা স্বাধীন হয়েছি। তারা সেই ম্যাচিউরিটি দেখাতে না পারলে বিশ্ব তাদেরই নিন্দা করবে। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বাজেট বরাদ্দ সংক্রান্ত আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন। পাকিস্তান জাতিসংঘে গেলে সেক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান কী হবেÑ এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, আমাদের অবস্থান এখন যা আছে ভবিষ্যতেও তা থাকবে। আর মৃত্যুদ- কার্যকর নিয়ে পাকিস্তান যে চুক্তি লঙ্ঘনের কথা বলছে, সেই ত্রিদেশীয় চুক্তির (১৯৭৪ সালের) শর্ত তারাই ভঙ্গ করেছে। চুক্তিতে আটকেপড়া পাকিস্তানীদের ফিরিয়ে নেয়ার কথা থাকলেও তারা এখনও নেয়নি। আইনে বলে, কেউ চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করলে সে চুক্তি বাতিল হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে এ চুক্তিটিও আর গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ল’ এ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল এ্যাফেয়ার্স (বিলিয়া) আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সুপ্রীমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. তুরিন আফরোজ ও প্রভাষক মুস্তাকিমুর রহমান। আরও বক্তব্য রাখেন আইনজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক ও মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ। বিকেলে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানেও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমসহ ১৪ দলের সিনিয়র নেতারাও পাকিস্তানের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন। তারা বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে পাকিস্তান ও তুরস্কের সাম্প্রতিক প্রতিক্রিয়ার কড়া প্রতিবাদ জানাতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে, সেখানে তো কেউ বাইরে থেকে হস্তক্ষেপ করেনি। আমাদের দেশের বিষয়ে পাকিস্তান ও তুরস্ক কিভাবে বিরোধিতা করে? তাদের তো সেই অধিকার নেই। বিএনপিকে উদ্দেশ করে তারা বলেন, আপনাদের নেতা জিয়াউর রহমানও তো মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। আপনারা তো তুরস্ক ও পাকিস্তানকে উদ্দেশ করে বলতে পারেন তাদের এ হস্তক্ষেপের অধিকার নেই।
×